১৩টি ভিন্ন স্বাদে ভিন্ন আঙ্গিকে মোড়ানো ‘লাবিবের বিভ্রম’ ছোট গল্পের বই। ইতিহাসের গোড়াপত্তনে মিশরে বিশ্বাস ছিল- জীবিত অবস্থায় মানুষ ১২টি ধাপ সম্পন্ন করে, আর ১৩ হচ্ছে জীবনের শেষ ধাপ। তাই ইজিপ্সিয়ান মিথলজি ১৩ সংখ্যাকে মৃত্যুর প্রতীক হিসেবে মনে করতো। লেখকের মামাতো ভাই- লাবিবের ১৩ বছরের অকাল মৃত্যু যেন ঐ ১৩ সংখ্যাকেই নির্দেশ করছে। কারণ বইটির উপসর্গ পড়ে রীতিমত ধাক্কা খেয়েছি। এই ১৩ সংখ্যাকে ‘আনলাকি থার্টিন’ বলা হয়।
লেখক সাফায়েতুল ইসলাম তার লেখায় শাণিত তীক্ষ্ণ যুক্তি দিয়েছেন, ১৩টি ছোট গল্পে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছেন কুসংস্কারছন্ন আনলাকি থার্টিনকে। প্রতিটি গল্পের ফাঁদে পাঠক খুব সহজে সৃষ্ট চরিত্রে ঢুকে পড়বে, বারবার পড়তে গিয়ে অবচেতন মনে বিভ্রান্তির ছায়া দেখতে পাবে। বাস্তব প্রেক্ষাপটের সাথে অবাস্তবতার ম্রিয়মাণে হয়তো পাঠক নিজেকে খুঁজার চেষ্টা করবে, নয়তো তীক্ষ্ণ যুক্তির ঘেরাটোপে কপালে চিন্তার ভাজ পড়বে অথবা পড়তে গিয়ে প্রচণ্ড বিভ্রমের গ্যাঁড়াকলে আঁটকে যাবে।কান, গন্ধ, ফ্লয়েডীয় ঘোর কিংবা মৃত্যু।
প্রথমদিকের গল্পগুলোতে বিভ্রমের স্পয়লার থাকলেও পাঠক বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা পযর্ন্ত পড়তে উদ্বোধ হবে, বইটি শেষ করে নিজেকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে আবিষ্কার করবে, অতঃপর সুস্পষ্টভাবে অনুধাবন করবে ‘লাবিবের বিভ্রম’ নামকরণের সার্থকতা।
লজিক এবং বিভ্রমের পাশাপাশি লেখার নান্দনিকতায় উঠে এসেছে শব্দ চয়নের রসিকতা আর স্বল্প কথায় গল্প বলার ধরণ। গল্পের প্রতিটি চরিত্রকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে কিংবা চরিত্রের ভেতর শৈল্পিকতা আনতে বিখ্যাত লেখকদের কবিতা, গান কিংবা বাণী ব্যবহার করেছেন, সেসব প্রসঙ্গ টেনে লেখাগুলোকে আরো বেশী আকর্ষণীয় করেছে। তাছাড়া গল্পের ভিতর ইনফরমেশন দেয়ার চাতুযর্তা গল্পগুলোকে চমকপ্রদ করতে বাধ্য করেছে।
১২৪ পৃষ্ঠা ÷ ১৩টি গল্প= ৯.৮, যা পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের আদর্শ মান নির্দেশ করে। যেহেতু গল্পগুলো গাণিতিকভাবে বিভ্রমে ঠাঁসা, সেহেতু পাঠককে বইটি দুইবার পড়তে উৎসাহ যোগাবে। প্রচণ্ড ঘোরলাগা বিভ্রম কাটাতে কিংবা ছোট গল্পের সহীহ তর্জমা বুঝতে ‘লাবিবের বিভ্রম’ সত্যিই সময় উপযোগী দারুণ একটি বই।