ভারতের শর্ত মানতে নারাজ আমদানীকারকরা
    দেশের পেঁয়াজ বাজার আবারো অস্থিতিশীল

    বাংলাদেশ মেইল ::

    বাংলাদেশের পেঁয়াজ বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যাবার মাসখানেক পর আবারও পেঁয়াজ রফতানির শর্তসাপেক্ষ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ভারত। শর্ত বিশেষ দুই জাতের পেঁয়াজ আনা যাবে শুধুমাত্র পানিপথ দিয়ে। গত বছরের মতো বেঁধে দেওয়া এমন শর্ত মানতে তেমন আগ্রহী নন দেশের দেশের আমদানিকারকরা। তাছাড়া এখন মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীনের মতো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি চলমান থাকায় ভারতের এই দুই কম পরিচিত জাতের পেঁয়াজ এনে তা মার্কেটে চালানো যাবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে আমদানিকারকদের। আমদানী তালিকায় যুক্ত হয়েছে মিশর তুর্কি , ইরানের মতো দেশও ।

     

    তবে চট্টগ্রামের আমদানিকারকরা পানিপথকে বিবেচনায় রাখতে চাইলেও স্থলপথের আমদানিকারকরা এমন ঝুঁকিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন। করোনার কারণে মাত্র তিন মাস বন্ধ ছিল আমদানি। তার আগে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে তো বটেই, করোনার বাধা উঠে যেতেই আমদানি হয়েছে প্রতিদিন হাজার হাজার টন পেঁয়াজ। দেশের মোট চাহিদার চেয়েও বেশি পেঁয়াজ আনার পরেও ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় একলাফে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম এখন ৮০ টাকার ওপরে। তবে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে একযোগে পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ বছর ব্যাপক পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ায় প্রকৃত ঘাটতি কত সে বিষয়ে সব মহলে রয়েছে ধোঁয়াশাও। যতই সংকটের কথা বলা হোক না কেন আড়তদারদের ঘরে এখনও আছে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ। ফলে ভারত যে ঘুরপথে পেঁয়াজ রফতানির সুযোগের নামে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের খরচ বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে তাতে সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নন বেশিরভাগ আমদানিকারক। চট্টগ্রাম ছাড়া স্থলবন্দর সাতক্ষীরার ভোমরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও দিনাজপুরের হিলির কোনও আমদানিকারক নদী কিংবা সাগরপথে পেঁয়াজ আমদানি উৎসাহ দেখাননি। অপরিচিত পথ হওয়ায় তারা এভাবে পেঁয়াজ আমদানি করবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের বিশেষত খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা এই ঘুরপথে আমদানিতে ঝুঁকি দেখলেও এক কথায় রাজি নন। তারা ঝুঁকি বিশ্লেষণ করেই এ ব্যাপারে ভাবতে চান।

    টানা এক মাস পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রাখার পর গত রবিবার ভারতের পক্ষে জানানো হয়, আপাতত স্থলপথ দিয়ে আর পেঁয়াজ রফতানি হবে না। তবে ব্যাঙ্গালুরু রোজ ও কৃষ্ণপুরাম নামে দুটি জাতের পেঁয়াজ স্বল্প পরিমাণে সীমিত আকারে রফতানির ব্যাপারে তারা আগ্রহী। তবে তা নিতে হবে নদীপথে। এমন ৯টি শর্ত দিয়ে পেঁয়াজ রফতানির কথা জানায় দেশটির সরকার।

    জানা গেছে , বাংলাদেশে ভারতের নাসিক্য জাতের পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। ভারত এখন কৃষ্ণপুরাম আর রোজ জাতের পেঁয়াজ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এসব জাতের পেঁয়াজের চাহিদা বাংলাদেশে কম। তাই ওই পেঁয়াজগুলো সচরাচর আমদানিকারকরা আনতে চাইবেন না। তাও যদি স্থলবন্দর দিয়ে হতো তাহলে আনতেন, কিন্তু এখন নদীবন্দর দিয়ে আমদানিকারকদের আগ্রহ কম।’

    জানতে চাইল এসআরডি ট্রেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন , যদি সমুদ্রবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ নিতেই হয় তাহলে ভারত থেকে নেবো কেন? অন্যান্য দেশে পেঁয়াজের দাম কম রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন মিশর, পাকিস্তান, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছি, সেই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে সেইসব দেশ থেকে জাহাজ যোগে পেঁয়াজ আসা শুরু করেছে, যা দেশের মার্কেটেও প্রবেশ করেছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি দেওয়া রয়েছে অতিসত্বর সেসব পেঁয়াজ দেশে চলে আসবে এতে করে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে বলেও জানান তিনি।

    সম্প্রতি ভারত সরকার যে পাঁচটি শর্তে ২০ হাজার টন পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছে, সেই শর্ত মেনে পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহী নন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর , হিলিসহ কোন স্থলবন্দরের  পেঁয়াজ আমদানিকারকরা। তারা বলছেন এভাবে শর্ত মেনে পেঁয়াজ আমদানিতে যেমন ঝুঁকি রয়েছে তেমনি ভারত সরকার যে পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিয়েছে, সেই পেঁয়াজের মান ভালো না হওয়ায় সমুদ্র বা নদীপথে পেঁয়াজ আমদানি তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।