পাকিস্তানের মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, শতাধিক হতাহত

    বাংলাদেশ মেইল ::

    পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শহর পেশওয়ারের এক মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, এ ঘটনায় অন্তত ৭ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা বলছে, আহতদের মধ্যে অনেকেই শিশু। এখন পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী এই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেনি। এলাকায় তুমুল উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বস্তুত, বহুদিন পরে পেশওয়ারে এত বড় বিস্ফোরণ ঘটল।

    মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় স্পিন জামাত মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই মসজিদটি মুসলিম শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য স্কুল হিসেবে ব্যবহার হতো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি আল-জাজিরা প্রতিনিধিকে বলেন, এটা আত্মঘাতী হামলা নয়। সেখানে ব্যাগে করে বিস্ফোরক রাখা ছিল। একইভাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য রয়টার্সকে বলেছেন, অচেনা ব্যক্তির পুঁতে রেখে যাওয়া বিস্ফোরক থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ক্লাসের ছাদ উড়ে গিয়েছে। মাদ্রাসাটি একাংশ ভেঙে গিয়েছে। ডন নিউজ বলছে, এ ঘটনায় ৭ জন নিহতের পাশাপাশি অন্তত ১১০ জন আহত হয়েছে।
    পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিস্ফোরণের ঘটনায় কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন তিনি। আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য করেছেন প্রার্থনা।
    লেডি রিডিং হাসপাতালের মুখপাত্র মোহাম্মদ অসীম জানিয়েছেন, নিহতদের চারজন শিক্ষার্থী। তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর। ওয়াকার আজিম নামে জ্যেষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তা এএফপি-কে বলেন, ‘কোরআন ক্লাস চলার সময় বিস্ফোরণ হয়েছে। কেউ একজন সেমিনারির ভেতরে ব্যাগ নিয়ে এসেছিল।’ মোহাম্মদ আলি নামে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আহতদের মধ্যে অন্তত দুই শিক্ষক রয়েছেন।

    বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আহতদেরকে লেডি রিডং হাসপাতা ছাড়াও খাইবার টিচিং হাসপাতাল, হায়াতাবাদ মেডিক্যাল কমপ্লেক্স ও নাসিরুল্লাহ খান বাবর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, আহতদের মধ্যে ৭২ জনকে লেডি রিডিং হাসপাতালে, ২ জনকে খাইবার টিচিং হাসপাতালে, ২ জনকে হায়াতাবাদ মেডিক্যাল কমপ্লেক্সে এবং ৩৭ জনকে নাসিরুল্লাহ খান বাবর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খাইবার পাখতুনখোয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী তৈমুর সালিম ঝাগরা বিস্ফোরণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আহতদের সুস্থ করে তুলতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা।
    সিনিয়র সুপারিনটেন্ডেন্ট অব পুলিশ (অপারেশন্স) মানসুর আমান বিস্ফোরণের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ব্যবহার করে এ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে ৫ কেজি বিস্ফোরক।
    এক সময় তালেবানের শক্ত ঘাঁটি ছিল পেশওয়ার। ইসলামাবাদ থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরের এই শহর নিয়ে দীর্ঘদিন চিন্তিত ছিল পাকিস্তান প্রশাসন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেখানকার একটি স্কুলে বিস্ফোরণ ঘটায় তালেবান। প্রায় ১৫০ ছাত্র নিহত হয়। তারপরেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশ জুড়ে অপারেশন চালায়। আফগান সীমান্তে বেশ কিছু জঙ্গি শিবির ধ্বংস করা হয়। তারপর থেকে নিত্যদিনের উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হয়। তবে মঙ্গলবারের দিনের বিস্ফোরণ ফের নতুন বিপদের আশঙ্কা তৈরি করল।