এবার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি চীনের

    বাংলাদেশ মেইলঃঃ  

    হরহামেশাই গণমাধ্যমের খবরে দেখা যায়, এর ওর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশটির এমন নিষেধাজ্ঞায় নাকাল হতে দেখা গেছে চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়াসহ নানা দেশ। এবার সেই পরাক্রমশালীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বিশ্বের উঠতি পরাশক্তি চীন। বিশ্বে পরাশক্তি হয়ে উঠছে চীন। দেশটির এমন সিদ্ধান্ত তারই চিহ্ন বহন করছে।

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ২৪০ কোটি ডলারে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত চরমভাবে ক্ষুব্ধ করেছে বেইজিংকে। মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
    তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভূরাজনৈতিক খেলা পুরনো। উত্তেজনা বেড়েছে গত কয়েক মাস ধরে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্তের উত্তেজনার পারদে আগুন দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
    মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাইওয়ানের কাছে যুদ্ধজাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হারপুন কোস্টাল ডিফেন্স সিস্টেম বিক্রির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং মার্কিন কংগ্রেসকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। মার্কিন বিমান ও অস্ত্র তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান বোয়িং এরই মধ্যে তাই ওয়ানের জন্য ১০০টি হারপুন কোস্টাল ডিফেন্স সিস্টেম  তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে।
    বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়ে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্তে অনড় যুক্তরাষ্ট্র। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাইওয়ানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।’
    গত সপ্তাহেই ১৮০ কোটি ডলারে চীনা নিয়ন্ত্রণাধীন দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে তাইওয়ানের কাছে ৬৬টি নতুন এফ-১৬ জেট বিক্রি করে ট্রাম্প প্রশাসন। গত আগস্টে লকহিড মার্টিনের তৈরি জেটগুলোর বিক্রি সম্পন্ন হয়।
    এর পাল্টা জবাব হিসেবে শি জিনপিং মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের প্রতিরক্ষা ইউনিট, লকহিড মার্টিন করপোরেশন ও রেথিয়ন টেকনোলজিস করপোরেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
    চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মূলত জাতীয় নিরাপত্তা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যেই চীন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। বেইজিং মনে করে, তাইওয়ানকে যুদ্ধ সরঞ্জাম দেয়ার মাধ্যমে ওয়াশিংটন এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। আগস্টে এফ-১৬ জেট বিক্রির সময় ঝাও লিজিয়ান বলেছিলেন, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ওয়ান চায়না নীতিতে আঘাত করেছে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে বলে সে সময় ঝাও মন্তব্য করেন।
    কিন্তু চীন যে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নীতি নিয়ে এগোচ্ছে, তার আদৌ কোনো প্রভাব পড়ছে কি? নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল হিসেবে দাবি করা তাইওয়ানের কাছে পিএসি-৩ ক্ষেপণাস্ত্র ও মিসাইল ব্যাটারি বিক্রির কারণে গত জুলাইয়ে লকহিড মার্টিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বেইজিং। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞার বাস্তবিক কোনো প্রভাবই পড়েনি কোম্পানিটির ওপর। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিফেন্স কন্ট্রাক্টরের মোট রাজস্বের ১ শতাংশেরও কম আসে চীন থেকে।
    এদিকে চীনের কাছে পাঁচ দশক ধরে উড়োজাহাজ সরবরাহ করে আসছে বোয়িং। চীনের এয়ারলাইনারগুলো বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, ৭৩৭ ম্যাক্সের মতো উড়োজাহাজ ব্যবহার করে। বেইজিং এসব বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বোয়িং ক্ষতিগ্রস্ত হবে বটে, তবে প্রতিরক্ষা ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞায় তাদের কোনো লোকসানে পড়তে হবে না। কারণ এ ইউনিট থেকে কোনো পণ্য  চীনে যায় না।