সম্মেলনকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ভাঙনের সুর

    বাংলাদেশ মেইল ::

    আগামী রবিবার হেফাজতে ইসলামের সম্মেলনের আয়োজন করেছে একটি পক্ষ। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের অন্য একটি পক্ষ এই সম্মেলন আয়োজনের কড়া বিরোধিতা করেছে। এতে সারাদেশের জেলা প্রতিনিধিসহ প্রায় পাঁচশ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

    আল্লামা শফির মৃত্যুর পর হেফাজতের আমির কে হবেন এ নিয়ে বেশ আলোচনা গুঞ্জন চলে আসছিল। আল্লামা আহমদ শফির মৃত্যুর দিনই জুনায়েদ বাবুনগরী জানিয়েছিলেন সম্মেলন করে পরবর্তী আমির ঠিক করা হবে।

    হেফাজতে ইসলামের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে রবিবার যে সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে, তার কোনো বৈধতা নেই বলে দাবি করছে আনাস মাদানীর অনুসারীরা । এই কাউন্সিলকে ঘিরে হেফাজতে ইসলামের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম আর থাকবে না বলে মনে করছেন প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর এ অনুসারীরা।

    রোববার সকালে হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় কাউন্সিল আহ্বান করেছে এক পক্ষ।

    তবে প্রয়াত আমির আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানিসহ অনুসারীরা কাউন্সিলের দাওয়াত পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

    সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিনিধি সম্মেলন হলেও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন জ্যেষ্ঠ আলেমদের ১৫ জনের শুরা কমিটি। এতে হেফাজতে ইসলামের আমীর ও মহাসচিব নির্ধারণ করা হবে।

    এছাড়া অন্য কয়েকটি শীর্ষ পদেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

    প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন নাজিরহাট আল জামিয়া আল আরাবিয়া নছিরুল ইসলাম মাদ্রাসার শুরা সদস্য ও ফটিকছড়ি বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর মামা।

    হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী  বলেন, “প্রতিনিধি সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দসহ জেলা নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রায় পাঁচশ জনকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে ।”

    রোববার সকাল ১০টায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় সম্মেলন শুরু হবে। নায়েবে আমির হিসেবে মহিবুল্লাহ সভাপতিত্ব করবেন বলে জানান ইসলামাবাদী।

    হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী  বলেন, “যিনি (মহিবুল্লাহ বাবুনগরী) কাউন্সিল আহ্বান করেছেন, তিনি হেফাজতের কেউ নন। তিনি তো হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছেন। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন, এমনকি হেফাজতের বিরুদ্ধেও বক্তব্য দিয়েছেন।”

    কাউন্সিলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “এই কাউন্সিলের কোনো বৈধতা নেই। একটা পকেট কমিটি হবে। হেফাজতে ইসলামের যে ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তা বিনষ্ট হয়ে যাবে। একটা গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এই কাউন্সিল করা হচ্ছে।”

    কওমী মাদ্রাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ায় অভ্যন্তরীণ বিরোধে দুই বছর আগে হেফাজতের নায়েবে আমির পদ ছেড়েছিলেন মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

    কাউন্সিল আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি ১৫১ জনের। তারা বাকি লোক কোথায় পেলেন? তাদের খাতিরের লোকজনকে দাওয়াত দিয়েছে। বলা হচ্ছে, দেশের শীর্ষ আলেমদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের শীর্ষ আলেমরাই তো দাওয়াত পাননি।

    “যে ছয়জন কাউন্সিল আয়োজনের কাজ করছেন বলে জেনেছি তাদের মধ্যে চারজন চট্টগ্রাম মহানগর বা উত্তর, দক্ষিণের কেউ না। তাই তাদের অনুসারীরাই আমন্ত্রণ পাবে।”

    সম্মেলনে আনাস মাদানীসহ তার অনুসারীরা দাওয়াত না পেলেও প্রয়াত শফীর বড় ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

    প্রয়াত আমির আহমদ শফীর অনুসারী এবং চরমোনাইর পীরের অনুসারীদের বাদ দিয়ে কাউন্সিলে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন আল্লামা শফির অনুসারীরা। অন্যদিকে প্রয়াত আমিরের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে নিয়ম অনুযায়ী সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে বলে দাবি বাবুনগরীর অনুসারীদের।