কোটি টাকার কমিটি বাণিজ্য
    চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা

    বাংলাদেশ মেইল ::

    ২০১৩ সালের পর চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের পুর্নাঙ্গ কোন কমিটি না থাকলেও চলতি মাসে ৬ শ বেশি ছাত্রদল কর্মিকে নেতা হবার সুযোগ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। প্রায় সাড়ে সাত বছর পর চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর নগর  ছাত্রদলের ২৭২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এদের মধ্যে ১৮৭ জনই ছিল  বিবাহিত, ব্যবসায়ী, প্রবাসী।  পরে ব্যাপক বিক্ষোভ আর নানা বিতর্ক জন্ম দেওয়া সেই ২৭২ সদস্যের কমিটির আকার বাড়িয়ে গেল সপ্তাহে  করা হয় পাঁচ শতাধিক। এই কমিটি গড়েছে দেশের ইতিহাসে কোন মহানগরের সবচেয়ে বড় কমিটির রেকর্ড। বিতর্কের মুখে এ কমিটিকে ত্যাগিদের রাজনৈতিক পরিচয় দেবার কমিটি বললেও নেপথ্যে হয়েছে পৌনে দুই কোটি টাকার বাণিজ্য । এর মধ্যেই মো. সাইফুল আলমকে আহ্বায়ক ও শরীফুল ইসলাম তুহিনকে সদস্য সচিব করে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে ২৬ ডিসেম্বর ।

    শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল এই কমিটির অনুমোদন দেন। নব গঠিত আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে নগর ছাত্রদলে পঞ্চাশোর্ধ বয়সের গাজী সিরাজ ও বেলায়েত হোসেন বুলুর নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত হলেও সাংগঠনিক রাজনীতিতে খরার জন্ম দেবে -এমন মন্তব্য নগরীর বিভিন্ন কলেজ ইউনিট নেতাদের।

    এই কমিটিতে সদস্যের চেয়ে যুগ্ম আহবায়কের সংখ্যা বেশি। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে ১৯ জনকে। তারা হলেন, আসিফ চৌধুরি লিমন, তারিকুল ইসলাম তানভির, সালাউদ্দিন সাহেদ, সামিয়া আমিন চৌধুরি জিসান, জি.এম সালাউদ্দিন কাদের আসাদ, মুহাম্মদ আরিফুর রহমান (মাস্টার আরিফ), জহির উদ্দিন বাবর, আরিফুর রহমান মিঠু, শহিদুল ইসলাম সুমন, সাব্বির আহমেদ, এম.এ হাসান বাপ্পা, রাজিবুল হক বাপ্পি, মাহমুদুর রহমান বাবু, ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদ আনাস, জাহিদ হোসেন খান যসি, নূর নবী (মহররম), নুর জাফর নাঈম রাহুল ও ফখরুল ইসলাম শাহীন।

    কমিটির ১৪ জন সদস্য হলেন, নজরুল ইসলাম, শামসুদ্দিন (শামসু), ইমরান হোসেন বাপ্পি, আবু কাউসার, শাহরিয়ার আহমেদ, আল মামুন সাদ্দাম, দেলোয়ার হোসেন শিশির, তারেক আজিজ বিপ্লব, মামুদুল হাসান রাজু, কামরুল হাসান আকাশ, এনামুল হক, আবুল হাসনাত জুয়েল, আব্বাস উদ্দিন ও রকি উদ্দিন পিচ্চি।

    ৩৫ সদস্যের এই কমিটিকে নগরীর সকল থানা, ওয়ার্ড ও কলেজ কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে মহসিন কলেজ ইউনিটের এক শীর্ষ নেতা স্বীকার করেছেন আর্থিক লেনদেনের ব্যাপকতা সম্পর্কে৷ নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক নতুন আহবায়ক কমিটি এই যুগ্ম আহবায়ক বলেন,  এক কোটি দশ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে আহবায়ক কমিটি আনতে। পুরো টাকার নেগোসিয়েশন করেছেন শহিদ নামের প্রভাবশালী এক ছাত্রদল নেতা। টাকা সংগ্রহ করতে লক ডাউন চলাকালীন সময়ে গোপনে চট্টগ্রামে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সভাপতি ও বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সিনিয়র সদস্য শ্রাবন।

    সুত্র বলছে, শুধু আহবায়ক সাইফুল এই পদের জন্য ব্যয় করেছেন ২৬ লক্ষ টাকা। আর সদস্য সচিবসহ ৭ জন যুগ্ম আহবায়কের পদ নিজের আয়ত্বে নিতে আইনজীবী ফোরামের এক শীর্ষ নেতা ব্যয় করেছেন এক কোটি টাকা। সুত্রমতে ৩৫ সদস্যদের এই আহবায়ক কমিটি আগে থেকেই তৈরি করা ছিল৷ দলের ভেতরে অসন্তোষ ঠেকাতে ২৭২ সদস্যের পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। নগর ছাত্রদলের সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি-সাধারন সম্পাদককে হাতে রাখতে সাত বছর আগের কমিটি পূর্নাঙ্গ করে অসন্তোষ ঠেকানোর আয়োজন করে সাংগঠনিক টিম। এ সুযোগে  ১১ জন প্রবাসীকে কমিটিতে স্থান করে দিয়ে ১৫ লক্ষ টাকা নেন সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ। কিন্তু দলীয় কার্যালয়ে আগুন ও নেতাকর্মীদের তোপের মুখে কমিটির পরিধি অতিক্রম করে ৫ শ’র চৌকাঠ। সংযোজিত কমিটিতে স্থান পাওয়া বেশ কয়েকজন ছাত্রদল কর্মী জানান, এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য অতীতের সব রেকর্ড ছাড়ায়। বর্ধিত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অন্তত ১৫০ জনের কাছ থেকে বিরাট অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এক প্রভাবশালী সহ সভাপতি।

    এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক শ্যামল বলেন, সব কমিটির পক্ষে -বিপক্ষে কথা থাকে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের পরামর্শেই সাত বছর আগের কমিটি পূর্নাঙ্গ করা হয়েছে। পুনরায় সংযোজনও করা হয়েছে। আহবায়ক কমিটি নিয়ে কোন অভিযোগ থাকলে সেটাও তারা জানাবেন। তবে বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সত্যতা কেউ প্রমান করতে পারলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ‘

    যেভাবেই হউক টাকা দিয়ে কমিটি আসার এমন প্রবনতা ইতিপূর্বে ছাত্রদলে এভাবে দেখা যায়নি – নাম  প্রকাশ  না করার শর্তে জানালেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি। তিনি বলেন, কেউ কেউ কমিটিতে আসার বিষয়টিকে প্রেস্টিজ হিসেবে নেয়াতে এমন হয়েছে। কেউ ওয়ার্ড কিংবা থানায় নেতা হতে চান না। সবাইকেই মহানগরে নেতা হবে!

    সব মিলিয়ে পৌনে দুই কোটি টাকার কমিটি বাণিজ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কয়েকজনের পকেট পুষ্ট হলেও চট্টগ্রাম মহানগর  ছাত্রদলে গতি ফিরবে কিনা এমন সংশয় সাধারন কর্মিদের, সাবেক ছাত্রদল নেতাদের।