বাংলাদেশ মেইল ::
মিয়ানমারের সেনা-শাসকদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সরকারি কর্মীরাও ধর্মঘটে নেমে পড়েছেন। এবার সেনা শাসকদের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক বিদ্রোহও হলো। চাপের মুখে পড়ে জাতিসংঘে সেনা শাসকদের নিয়োগ করা প্রতিনিধি পদত্যাগ করেছেন। তার জায়গায় ফিরে এসেছেন সেনা শাসকদের সরিয়ে দেয়া প্রতিনিধি কিয়ো মো টুন। এর আগে টুন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সব সদস্য দেশের কাছে আবেদন করেছিলেন, সেনা অভ্যুত্থানের আগের পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য যেন তারা চেষ্টা করেন। কূটনীতিকদের বিদ্রোহের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।
ওয়াশিংটনে মিয়ানমার দূতাবাস থেকেও বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারে বিক্ষোভের মোকাবিলায় যেন সংযম দেখানো হয়। পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুরও নিন্দা করা হয়েছে। দূতাবাসের একজন কর্মী পদত্যাগ করেছেন। তিনজন কর্মী সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, তারা বিক্ষোভে যোগ দিতে চান।
অন্যদিকে সেনা শাসকরা অভ্যুত্থানের পরেই অ্যামেরিকার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১০০ কোটি ডলার তুলে নিতে চেয়েছিলেন। প্রথমে ব্যাঙ্ক কর্তারা সেই প্রয়াস আটকে দেন। তারপর অ্যামেরিকা সেনা শাসকদের সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে। সেনা জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এখন প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করা হয়েছে যে, ওই ১০০ কোটি ডলার অনির্দিষ্টকালের জন্য ফ্রিজ করা হলো।
গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করেছে সেনা। তারপর থেকেই গণতন্ত্রপন্থিরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছে।
মূলত ছাত্র এবং যুব সমাজের বড় অংশ এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, দ্রুত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে এবং জেলবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
প্রথম দিন থেকেই কড়া হাতে আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করছে পুলিশ। লাঠিচার্জের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে। জল কামান ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকী, রবার বুলেটও ব্যবহার করা হয়েছে।
রোববার পুলিশের সব চেয়ে সহিংস চেহারা দেখা যায়। পুলিশের দাবি, আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি চালানো হয়। ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে পুলিশ।
আন্দোলনকারীদের দাবি, আহত বিক্ষোভকারীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে গিয়েও তাণ্ডব চালায় পুলিশ। আহত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
প্রতিদিনই আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। সেনা শাসকরা জানিয়েছেন, আন্দোলনের জন্য গ্রেফতার হলে এখনই মুক্তি মিলবে না। আপাতত জেলেই থাকতে হবে।
অ্যামেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিশ্বের একাধিক দেশ পুলিশ এবং সেনার নিন্দা করছে। কিন্তু তাতেও হেলদোল নেই সেনা শাসকদের।
রোববারের ঘটনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনা এবং নিরাপত্তবাহিনীর আচরণ বরদাস্ত করা যায় না। সমস্ত মৃত্যুর দায় তাদের নিতে হবে। অ্যামেরিকা সাহসী গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের পাশে আছে।
শুক্রবারও মিয়ানমারে বিক্ষোভ হয়েছে। মান্দালয়ে প্রচুর মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। তারা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেছেন। তাদের হাতে ধরা পোস্টারে লেখা ছিল, ”স্টোন এজ শেষ হয়ে গেছে। যতই আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা হোক না কেন, আমরা ভয় পাই না।” মান্দালয়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের কিছু না বললেও ইয়াঙ্গনে তারা রবার বুলেট চালিয়েছে। এই প্রতিবাদে একশ জন চিকিৎসক সাদা কোট পরে যোগ দিয়েছিলেন।