চাকা ঘুরলেই জ্বলে চুলায় আগুন
    গণপরিবহন বন্ধ, মানবেতর দিন পার করা শ্রমিকরা চান সাহায্য

    রানা আবির

    নগরীর কর্ণেলহাটে লগডাউনের প্রথম দিনেই টেম্পু চালক জসীম উদ্দিনের ঘরে জন্ম নেয় ফুটফটে কণ্যা সন্তান। কিন্তু চালক বাবার মনে খুশির পরিবর্তে ভীড় করে শংকা । কারন উপার্জনের একমাত্র পথ বন্ধ। আর রোজগারের একমাত্র অবলম্বন টেম্পুর চাকা ঘুরলেই জুটবে মেয়ের ভরনপোষন ও স্ত্রীর ওষুধের টাকা।

    অন্যদিকে, রিফাত দুইটি টেম্পু কিনেছেন  চড়া সুদের টাকা দিয়ে । পেটে ভাত দিক আর না দিক সপ্তাহ ঘুরলেই গুনতে হয় কিস্তির টাকা। কিন্তু লগডাউনে গনপরিবহন বন্ধ থাকায় তারও একমাত্র উপার্জনের পথে তালা। অন্যদিকে পাওনাদার এসে কড়া নাড়ছে তার দরজায়।

    জসীম আর রিফাতের এমন দুই গল্প মিলে যায় হাজারো পরিবহন শ্রমিকের জীবনের সাথে।

    গত ১৪ এপ্রিল বুধবার করোনা প্রকোপ কমাতে সারা বাংলাদেশ একযোগে লগডাউন ঘোষনা করে সরকার।

    চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর দক্ষিন জেলা ও আঞ্চলিক সড়কের চালকের তথ্য অনুযায়ী, সি এন জি ট্যাস্কি চালক রয়েছে ৬০ হাজার জন। হিউম্যান হলার মিনিবাস চালক ষ্টাফ রয়েছে ৫ হাজার জন। ট্রাক কাভার্ডভ্যান চালক স্টাফ রয়েছে ২০ হাজার জন। বাস চালক  রয়েছে ২০ হাজার,পিক আপ ও অন্যান্য গাড়ি চালক রয়েছে ১০ হাজার জন।।
    এখন তারা সবাই বেকার সময় পার করছেন।
    নগরী ও জেলায় এমন পরিবহন শ্রমিকদের এই মানবেতর জীবন যাপনের করার সময় দেখা কেউ নেই।

    কারন তারা চাকুরী করেন দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে।
    সারাদিনের করা উপার্জনের নিদিষ্ট অংশ মালিককে বুঝিয়ে দিয়ে বাকী অংশ দিতে চলে তাদের পরিবার।
    কিন্তু করোনা মহামারি ঠেকাতে গত ১৪ এপ্রিলের লগডাউনের ফলে বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই অসহায় পরিবহন শ্রমিকরা।

    সিএনজি চালক আব্দুল রহমান বলেন,পরিবহন শ্রমিকদের গাড়ির চাকা ঘুরলেই ঘরের চুলায় আগুন জ্বলে। লগডাউন হওয়ার পর থেকেই উপার্জনের পথ বন্ধ। এতে করে ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে খুবই অসহায়ত্ব নিয়ে জীবনযাপন করছি।

    টেম্পু চালক আলমগীর হোসেন বলেন,এমনিতেই নানা রকমের দেনায় জর্জরিত। তার মধ্য এই লগডাউন। পেতে ভাত যাক আর না যাক পাওনাদারের পাওনা ঠিক মতই পরিশোধ কর‍তে হয়। কোন দিক থেকে সাহায্য সহযোগীতা পাচ্ছিনা। যদি সামান্য তম সাহায্য সহযোগীতা আসত,অন্তত খেয়ে পড়ে বেচে থাকতে পারতাম।

    বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা অভিযোগ করে বলেন,গতবারের লগডাউনের কেন্দ্রীয় ভাবে পরিবহন শ্রমিকদের ত্রান দেওয়ার অনুরোধ করা হলে অনেকে ত্রান পায়নি। তাই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অনেকে বাধ্য হয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামলে ও পুলিশের মামলা ও নানামুখি হয়রানীর স্বীকার হয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ও কোন পরিবহন শ্রমিকদের ত্রান দেওয়া হয়নি। ফলে চালকরা না খেয়ে অস্তিত্ব শূন্য হয়ে পড়ছে।

    পরিবহন শ্রমিকরা অনুরোধ করে বলেন,করোনার এই ২য় ধাপ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে লগডাউন হওয়ার পরপরই চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর রাতের আঁধারে গরীব দুস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে যা আমরা টেলিভিশন ও পত্রিকাতে দেখেছি। তাই এই মানবিক পুলিশ অফিসারের অনুরোধ নগরীর পরিবহন শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করে যেন ত্রান দেওয়া হয়।

    বাস হেলপার কামাল উদ্দিন বলেন,আজ ৬ দিন বেকার,ঘরে অসুস্থ মা,বাবা তাদের চিকিৎসা সেবা তো দূরে থাক,দুবেলা খাবার জোটাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে।

    পত্রিকা টিভিতে দেখতে পাই সরকারের পক্ষ থেকে গরীর দুস্থ ও ৩য় লিজ্ঞের মাঝে অনেক উপহার সামগ্রি দিচ্ছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন মোমিনুর রহমান। আমাদের দিকে ও যদি একটু তাকাতো তাহলে এই মহামারিতে কোনভাবে বেচে থাকতে পারতাম।

    এদিকে দ্রুতজান স্পেশাল সার্ভিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মো,শাহজাহান  বলেন,গত বছরের লগডাউনের ও আমরা পরিবহন চালকদের পাশে দাড়িয়েছে। এবার ও আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে পাশে দাড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন পরিবহন শ্রমিকরা এই সময় টাতে মানবেতর জীবনযাপন করছে,প্রত্যকে যার যার অবস্থান থেকে উচিত তাদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

    বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ মুসা  বলেন,চট্টগ্রামে বাস ও মিনিবাস এই দুই মিলিয়ে আমাদের ১ লক্ষ শ্রমিক রয়েছে। এত বিশাল সংখ্যক শ্রমিককে ত্রান দেওয়া সম্ভব না। গত বছর করোনা সংক্রমনের শুরুতেই সরকারের নির্দেশনা মেনে নিয়ে গনপরিবহন বন্ধ ছিল,তারই ধারাবাহিকতায় এবারও বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। তিনি সিএমপির পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর ও জেলা প্রশাসক মুমিনুর রহমানকে অনুরোধ করে বলেন,এই মহামারিতে তারা যে মানবিকতার পরিচয় দিয়ে গরীব দুস্থদের পাশে দাড়িয়েছে। ঠিক একই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের গনপরিবহনের শ্রমিকদের পাশে যেন মানবতার হাত বাড়িয়ে দেয়।