উচ্চ আদালত বন্ধ থাকতে পারে না-প্রধান বিচারপতি

    বাংলাদেশ মেইল ::

    করোনা পরিস্থিতিতে আদালত পরিচালনার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সাংবিধানিক কোর্ট (উচ্চ আদালত) বন্ধ থাকতে পারে না। জজ কোর্ট থেকে ভিডিও আনা হয়েছে। আজ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

    রোববার (৪ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের ভার্চ্যুয়াল আপিল বিভাগে এক মামলার শুনানিকালে প্রসঙ্গক্রমে বিষয়টি ওঠে।

    শুনানিতে অংশ নিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী বলেন, করোনায় সংক্রমিত হয়ে গতকাল শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তিনজন সদস্য মারা গেছেন। বাসা থেকে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পরিচালনার লজিস্টিক সাপোর্ট অনেক আইনজীবীর নেই।

    প্রধান বিচারপতি বলেন, সাংবিধানিক কোর্ট তো বন্ধ থাকতে পারে না। জজ কোর্ট থেকে ভিডিও আনা হয়েছে। আজ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

    তখন আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী বলেন, সাংবিধানিক আদালত কখনোই বন্ধ থাকতে পারে না। কেননা, জরুরি সাংবিধানিক বিষয় শুনতে হয়। অ্যাটর্নি জেনারেলসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মতামত শুনতে পারেন। সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার সঙ্গে সমন্বয় রেখে পদক্ষেপ নিলে ভালো হয়।

    করোনাসহ যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিচারকাজ অব্যাহত রাখতে গত বছর রাষ্ট্রপতি আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ জারি করেন। গত বছরের ১০ মে থেকে ভার্চুয়ালি আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়।

    পরে ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আদালত কর্তৃক ‘তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বিল-২০২০’ পাস করে। এ আইন পাসের কারণে ভবিষ্যতেও দেশের যেকোন বিশেষ পরিস্থিতে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চুয়ালি আদালত পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

    শনিবার (৩ এপ্রিল) সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, আগামী সোমবার থেকে দেশে এক সপ্তাহের লকডাউন চলবে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একইদিন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে সাতদিনের লকডাউনের আদেশ জারি হতে পারে।

    লকডাউনে শুধু জরুরি সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান এবং পণ্যবাহী যানবাহন ও শিল্পকারখানা খোলা থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী ট্রেন, যাত্রীবাহী নৌযান। অভ্যন্তরীণ পথে বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে। আর যেসব অফিস চালু রাখার প্রয়োজন রয়েছে, তাদের সীমিত জনবল নিয়ে চালাতে হবে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লকডাউনে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।

    গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানায় সরকার। এরপর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ২৩ মার্চ প্রথমবার সাধারণ ছুটির ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। শুরুতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেয়া হলেও পরে ছুটির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে ওই বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত দেশজুড়ে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল।

    ওই সময় সব অফিস-আদালত, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ছুটির মধ্যে সবকিছু বন্ধ থাকার সেই পরিস্থিতি লকডাউন হিসেবে পরিচিতি পায়। তবে সরকার তখন আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন শব্দটি ব্যবহার করেনি। সাধারণ ছুটির পাশাপাশি তখন এলাকাভিত্তিক লকডাউনের অংশ হিসেবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ অবরুদ্ধ রাখা হয়েছিল ঢাকার টোলারবাগ, রাজাবাজার ও ওয়ারী এলাকা। ৬৬ দিন বন্ধের পর গত বছরের ৩১ মে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়।

    কিন্তু এবার কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করার কথা বলছে সরকার। তবে লকডাউনে কী কী চালু থাকবে বা বন্ধ থাকবে, সে বিষয়গুলো এখনো পরিষ্কার নয়। গতকাল রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।