মুনিয়া আত্নহত্যা
    কয়েকটি গণমাধ্যমের ভুমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড়

    সাইফুল আলম, বাংলাদেশ মেইল ::

    ঢাকার গুলশানে কলেজ ছাত্রী মোশারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যু, আত্নহত্যায় প্ররোচনার মামলা, মামলা পরবর্তিতে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে সমালোচকরার ঝড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

    নিহতের বড়বোন নুশরাত জাহান বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলার দায়েরের পরে অনেক গণমাধ্যম বাদীর নাম ও ছবি প্রকাশ না করে জন্ম দিয়েছে কড়া সমালোচনার।

    ভিকটিমের ছবি ব্লার না করে আসামী আনভীরের ছবি ব্লার করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমোল সমালোচনার মুখে দুঃখ প্রকাশ  বেসরকারি স্যাটেলাইট স্টেশন চ্যানেল আই। এ ঘটনার দুদিনের মাথা ‘ পোষাক মতো প্রেমিক বদলাতেন মুনিয়া ‘ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তর ও সময়ের আলো। ওয়েব সাইট থেকে সংবাদ তুলে নিলেও এমন সংবাদ প্রকাশে কড়া সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে গণমাধ্যমের ভুমিকা।

    সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় দৈনিকের সম্পাদক থেকে শুরু করে বার্তা প্রধান, সিনিয়র সাংবাদিকরাও।

    দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান লিখেছেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা অতি সম্প্রতি নোংরামির এক গভীর তলে পৌঁছেছে। এর জন্য নিজেকেও ভীষণ অপরাধী লাগছে, খুব লজ্জা লাগছে, ঘেন্না হচ্ছে। সকলের কাছে আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। মৃত মুনিয়ার কাছে, মুনিয়ার বোন তানিয়ার কাছেও।

    দেশ রুপান্তর এবং সময়ের আলো করেছে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। বসুন্ধরা গ্রুপের সংবাদপত্র যে এই বিষয়ে কিছুই লিখছেনা, সেটা বরং অনেক ভালো।
    বাংলাদেশের সাংবাদিকতাকে এই জঘন্য খাদ থেকে উদ্ধার করতে হবে আমাদেরই। এটা আমাদেরই দায়। ‘

    ডয়চে ভেলে’র বার্তা প্রধান খালেদ মহিউদ্দিন লিখেছেন ‘ কিছু টাকা পয়সা এমনকি দুয়েকটা প্লট বা ফ্ল্যাট হয়ত পাওয়া গেল কিন্তু সামান্য এই খুদ-কুঁড়োতে পত্রিকাগুলো বাঁচবে না বরং সাংবাদিকতাও মুমূর্ষু হল। মানুষ আমাদের কেন বিশ্বাস করবে আর? জানি কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি নাই তবুও আমার মতটা জানিয়ে রাখলাম আর কি! ‘

    সিনিয়র সাংবাদিক সুপন রায় তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, My dear Investigative Journalist- Where is Last one? Don’t you Found that?

    সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর লিখেছেন ‘ থাক বাবা, একটারে টয়লেট পেপার বলায় কর্মীরা নাকি কষ্ট পেয়েছেন। পত্রিকার ‘রূপান্তর’ এমন হলে আমার বলে কী লাভ! শুধু লজ্জা হয় যে এর কর্তারা আমার তরুণ সহকর্মী ছিল। দুঃখ হয় এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক ভালো সাংবাদিকও আছেন, অনেকে আমার আপনও। ‘

    সময় টেলিভিশনের পরিচালক তুশার আবদুল্লাহ তার কলামে লিখেছেন ‘ সাংবাদিকরা যেন আসমান। যেখানে ঋতুভেদে পাঠক, শ্রোতা দর্শকের চাহিদা তৈরি হয়। কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টি, মেঘ এমনকি ঈষাণ কোণের ঝড়ও। সবাই যখন বৃষ্টি চাচ্ছেন, তখন কোনও একজন তার ব্যক্তিস্বার্থে রোদ প্রত্যাশা করছেন। আসমান সে ক্ষেত্রে অসহায়। একজনের বায়না তার মেটানো সম্ভব হয় না। আমরা যারা গণমাধ্যমে কাজ করি, তাদের কাছে রাষ্ট্র, জনমানুষের প্রত্যাশা সে রকমই। বিরোধী দলে থাকা রাজনৈতিক দল আমাদের যেমন সাহসী ও নিরপেক্ষ দেখতে চায়, সরকারে গেলে তারা ততটাই আমাদের নতজানু দেখতে চান। যে কাজগুলো ছিল অনিয়মের, সেগুলোই তখন পজিটিভ বাংলাদেশের খবর। সরকারে থাকা রাজনৈতিক দল, তাদের সমর্থক এবং বিরোধী দলে থাকা রাজনৈতিক দল, তাদের তোপের মুখে থাকতে হয় বরাবর। সবাই চান তাদের ‘সুতোর পুতুল’ হয়ে থাকি। ‘

    দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের নির্বাহী সম্পাদক  সালেহ বিপ্লব দেশ  রূপান্তরের সংবাদের সাথে লিখেছেন ‘আমি ক্ষমা প্রার্থী ‘।

    ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক মোহাম্মদ ওমর ফারুক লিখেছেন ‘সাংবা‌দিকতা কমন‌সে‌ন্সের বিষয়। এটা শুধু;মাত্র একটা চাক‌রি না, এখা‌নে সমা‌জের প্রতি সব‌চে‌য়ে বেশী দায়বদ্ধতা কাজ ক‌রে। সবাই জা‌নে সাংবা‌দিকতায় সব‌চে‌য়ে খারাপ সময় যা‌চ্ছে। অ‌নেক কিছু বল‌তে বা লিখ‌তে পার‌ছি না। কিন্তু তাই ব‌লে মিথ‌্যা‌কে রসি‌য়ে বল‌তে হ‌বে? এটা কোন ধর‌নের সাংবা‌দিকতা? ধ‌রে নিলাম তার অ‌নেকগু‌লো বয়‌ফ্রেন্ড ছি‌লো, কিন্তু এই রি‌পোর্টটি প‌ড়ে মনগড়া গল্প ছাড়া কো‌নো কিছু প্রমা‌নিত হয় না। ম‌নে রাখ‌বেন. আপনা‌কে আপনার কর্মফল ভোগ কর‌তেই হ‌বে । যা হোক, এসব থার্ডক্লাস গ‌ল্পের জন‌্য দুঃখ হয়, লজ্জা হয়। কিছু কিছু প্রচার মাধ‌্যমের জন‌্য গণমাধ‌্যমের ওপর মানু‌ষের আস্থা নষ্ট হয়।’

    কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বাহারী লিখেছেন, ‘মূলধারার সংবাদ মাধ্যম (মিডিয়া) হলো জাতির দর্পন বা আয়না।নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনকারীর হাতে দর্পন ভেঙে চুরমার ! ‘