জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২ তম জন্মবার্ষিকী আজ

    বাংলাদেশ মেইল ::

    জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২ তম জন্মবার্ষিকী আজ।বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালের ২৫ মে) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। বাঙালির আবেগ, অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকা চির বিদ্রোহী এ কবির  জন্মদিন আজ।

    কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। তাঁর ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তবে নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ, দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সব সময়।

    জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও এ বছর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবে এ উপলক্ষে আজ সোমবার থেকেই শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘আমিই নজরুল আর্ন্তজাতিক নজরুল উৎসব’। নজরুলের সাম্যবাদ নিয়ে এ আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন ‘মুক্ত আসর’।

    উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পর্তুগাল থেকে ৩২ জন নজরুল গবেষক, লেখক ও নজরুল সংগীত শিল্পী অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন ও রেডিও কবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

    প্রেমের, বিরহ-বেদনা ও সাম্যের কবি নজরুল বাংলা সাহিত্য-সংগীত তথা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে ভারতবাসীকে জাগিয়ে দিয়েছিল। তিনি পরিণত হন বিদ্রোহী কবিতে। সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, নিপীড়ন, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার হয়ে কবি লিখে গেছেন অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গান।

    চির প্রেমের কবি নজরুল। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রুপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই তিনি অনায়াসে বলে গেছেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ পৃথিবীতে এমন কম মানুষই আছেন যিনি প্রেমের টানে রক্তের সম্পর্কে অস্বীকার করে পথে বেরিয়ে পরতে পারেন।

    বাংলা কবিতায় নজরুলের আবির্ভাব একেবারেই উল্কার মত। হঠাৎ করে একদিন তিনি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভুত হয়ে সমস্ত আকাশকে কীভাবে রাঙ্গিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনো গবেষণা হতে পারে। কোন সঞ্জীবনি মন্ত্রে তিনি উচ্চকন্ঠে বলতে পারেন ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির’ অথবা মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না /অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না’।

    বাংলা একাডেমির সভাপতি ও নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, নজরুল ইতিহাস ও সময় সচেতন মানুষ ছিলেন যার প্রভাব তাঁর লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তাঁর সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা।

    তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

    বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর ১২ই ভাদ্র ১৯৭৬ সালের শোকের মাসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নজরুল।

    কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।