সিরিয়ার সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ স্থাপনে চুক্তি করতে যাচ্ছে সৌদি আরব

    বাংলাদেশ মেইল ::

    সিরিয়ার সঙ্গে পুনরায় কূটনৈতিক সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী সৌদি আরব। সেই লক্ষ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে রিয়াদ। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরের কাছাকাছি পৌঁছেছে দেশ দুটি।

    মূলত সিরিয়া থেকে ইরানের উপস্থিতি অপসারণ করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এক ব্যক্তি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

    সিরিয়ার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেনারেল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেটের (জিআইডি) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। বর্তমানে রিয়াদের রাজনৈতিক চিন্তার পরিবর্তন ঘটেছে এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানসহ (এমবিএস) রাজ পরিবারের অনেকই আসাদের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

    সম্প্রতি ওই কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট আসাদ’র সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে ২০১১ সালে তিনি আসাদ বিরোধী সংগঠন ‘ফ্রি অফিসার্স মুভমেন্ট’ ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরস্থিতি এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়— সময় বদলেছে, আরব বসন্ত এখন ইতিহাস। আর অঞ্চলটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যসহ এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’

    গত মে মাসের প্রথম দিকে সৌদি আরব ও সিরিয়ার মধ্যকার আলোচনার বিষয়ে আলজাজিরার সঙ্গে তার কথা হয়। তিনি দাবি করেন, রিয়াদ জিআইডি’র মহাপরিচালক খালিদ হুমাইদানের নেতৃত্বে একটি গোয়েন্দা প্রতিনিধিদলকে দামেস্কে পাঠিয়েছিলেন। তারা পূর্বের দুই শত্রুভাবাপন্ন দুই দেশের মধ্যে সম্ভব্য আলোচনার শুরুর বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। একই সময়ে সিরিয়ার পর্যটনমন্ত্রী রামি মার্টিনি’র নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের একটি প্রতিনিধি দল বিগত ১০ বছরের মধ্যে প্রথম রিয়াদ সফর করে।

    সিরিয়ায় চলমান প্রেক্সি যুদ্ধের শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের লক্ষ্যে এই যুদ্ধকে সমর্থ করেছিল অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় সৌদি আরব। এর অংশ হিসেবে দেশটিতে আসাদ বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অ্যান্টি-মিসাইলসহ অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করেছিল রিয়াদ। তবে আসাদের মিত্র দুই রাষ্ট্র রাশিয়া ও ইরানের পাল্টা পদক্ষেপে সেই অভিযান ব্যর্থ হয়। আর ঠিক তারপরই দেশ দুটির মধ্যে পুনরায় সুসম্পর্ক তৈরির বিষয়টি সামনে আসল।

    এই প্রকিয়ার সঙ্গে যুক্ত সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনে কাজ করছেন সৌদি যুবরাজ এমবিএস।’

    তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি যুবরাজ এমবিএস তার প্রতিনিধি দলকে এই নির্দেশনা দিয়ে পাঠান যে, তিনি বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চান না। আর মুসলিম দেশ হিসেবে সিরিয়াকে স্বাভাবিকভাবেই সৌদি আরবের সঙ্গে থাকা উচিত।’

    ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, এর মধ্যে দিয়ে ইরানের নেতাদের কাছে রিয়াদ এই বার্তা দিতে যাচ্ছে যে, তারা দেশটির জন্য নতুন করে আর কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে না।

    তবে দামেস্কে অনুষ্ঠিত দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওই বৈঠকে ইরানের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল কি না, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তবে এ কথা শোনার পরই ইরানিরা বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছিল।

    বিষয়টি নিয়ে অতি সংবেদনশীল হওয়ায় উভয় সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলজাজিরার সঙ্গে কথা বলেছিল বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।