আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর

    বাংলাদেশ মেইল ::

    বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ।

    আওয়ামী লীগের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে স্বাধিকার আদায়ের জন্য ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন। সেই ৬ দফা আন্দোলনের পথ বেয়েই ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনে বাঙালির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ ও ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সফল নায়ক ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

    ৭৩ বছরের পথপরিক্রমায় দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরুতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অনেকটা অস্তিত্ব সংকটেই পড়ে আওয়ামী লীগ। দলের ভেতরেও শুরু হয় ভাঙন। এরমধ্যে আব্দুল মালেক উকিল-জোহরা তাজউদ্দীনের দৃঢ়তায় সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করে দলটি। ১৯৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফিরতে সক্ষম হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এক দশক ধরে সারা দেশ ঘুরে দলকে সংগঠিত করেন তিনি। স্বৈরাচারবিরোধী তীব্র গণআন্দোলনও হয় তার নেতৃত্বে। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবার সরকার গঠন করে দলটি। তখন থেকে টানা তিন মেয়াদে সরকারে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

    যেভাবে শুরু ::

    ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন বিকালে ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় নতুন একটি রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তীতে সেই দলের নাম পরিবর্তন হয়ে হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

    আওয়ামী লীগের উত্থান নিয়ে লেখা বইয়ে  লেখক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহিউদ্দিন আহমদ  বলছেন, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান হওয়ার পরে ঢাকায় মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন মাওলানা আকরাম খান এবং খাজা নাজিমুদ্দিন।

    সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশেম নেতৃত্বাধীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অনুসারী যে প্রোগ্রেসিভ [উদারপন্থী) নেতারা ছিলেন, তারা তখন সেখানে নিজেদের অবহেলিত মনে করছিলেন। তখন তারা মোঘলটুলিতে ১৫০ নম্বর বাড়িতে একটি কর্মী শিবির স্থাপন করেছিলেন। সেখানে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা চিন্তা করছিলেন। কলকাতা থেকে এসে শেখ মুজিবুর রহমান তাদের সাথে যুক্ত হন।

    তখন টাঙ্গাইলে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ পদত্যাগ করার কারণে শূন্য হওয়া একটি উপনির্বাচনে দুই দফায় মুসলিম লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী এবং শামসুল হক। কিন্তু তাদের দুজনের নির্বাচনী ফলাফলই অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

    তখন তারাও এসে এই মুসলিম কর্মীদের সঙ্গে মিলে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা ভাবতে শুরু করেন। তারা একটি সভা ডাকেন। সেই সভা ডাকার প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান।

    কিন্তু সেই সভা করার জন্য কোন অডিটোরিয়াম পাওয়া যাচ্ছিলো না। তখন কে এম দাস লেনের কাজী হুমায়ুন রশীদ তার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে সভা করার আহবান জানান।

    সেখানেই ২৩শে জুন বিকালে আড়াইশো-তিনশো লোকের উপস্থিতিতে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী সেই দলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’।

    সেই সঙ্গে পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনের নাম রাখা হয় ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’, যার সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।