চট্টগ্রামের ঘরে ঘরে সর্দি কাশি , করোনা পরীক্ষায় অনীহা

    বাংলাদেশ মেইল ::

    চট্টগ্রাম শহর ও পাশ্ববর্তি উপজেলাগুলোর  ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে জ্বর-সর্দি। পরিবারে একজন জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরাও হচ্ছেন দ্রুতই। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এবারের জ্বর অন্যবারের তুলনায় ভিন্ন। অন্যান্য সময়ে জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি থাকলেও শরীরে ব্যথা ছিল না। এবার অনেকেই শরীরে ব্যথা অনুভব করছেন। একবার শুরু হলে সপ্তাহ পেরিয়েও ছাড়ছে না জ্বর।

    এদিকে এই জ্বরে পরিবারের শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকের তাপমাত্রা কমলেও শ্বাসে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তবে তাদের খুব কমই করোনার পরীক্ষা করাচ্ছেন।

    নগরীর চান্দগাও এলাকায় বসবাসরত নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একটি বেসরকারী টেলিভিশনের সাংবাদিক জানান , গত এক সপ্তাহ ধরে পরিবারের সকল সদস্যের জ্বর-সর্দি । সাথে গলা ব্যাথার মতো উপসর্গ থাকলেও করোনা পরীক্ষা করাতে নারাজ তিনি । ‘

    লকডাউনের সময়ে জ্বর সর্দির মতো রোগকে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই বলে জানালেন চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুত বড়ুয়া । তিনি বলেন , করোনা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সারা বিশ্ব শংকায় । জ্বর সর্দিকে আগে মৌসুমী রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এখন সেই সুযোগ নেই । করোনা পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে । ”

    চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগে কর্মরত ডা. আশীষ জানালেন , জ্বর সর্দি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে । কারণ হিসেবে তিনি বলেন , এমন উপসর্গে সবাই আইসোলেশন সেন্টার বা নিজ ঘরে আইসোলেটেড থাকছেন । ফলে ঘরে ঘরে এমন উপসর্গের রোগী বাড়তে থাকাটাই স্বাভাবিক ।  কেউ হয়তে দোকান থেকে ওষধ কিনে নিজেই খাচ্ছেন ‘

    ৮ জুলাই চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭১১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হবার কারণে জ্বর সর্দিতে ভুগতে থাকা রোগীদের ভয় বেড়েছে । একারণে আগামী দিনগুলোতে করোনা পরীক্ষা করতে আগ্রহী রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারনা স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টদের ।

    চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনের বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকানের বিক্রেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়। তারা জানান, সর্দি-কাশি-জ্বরের ওষুধ বিক্রি ব্যাপক বেড়ে গেছে। মনে হয় এখন ঘরে ঘরে জ্বর। এ ধরনের বেশিরভাগ রোগী বা রোগীর স্বজন চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে তাদের কাছে এসে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন।

    এদিকে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, বর্তমান সময়ে এলাকায় সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে বেশিরভাগ ফার্মেসিতে গিয়ে সমস্যার কথা বলে ওষুধ কিনে নিচ্ছে। ফলে সর্দি, কাশি ও জ্বর সংশ্লিষ্ট ওষুধের চাহিদা বেড়েছে।

    করোনার উর্ধমুখী সংক্রমনের কারণে চট্টগ্রামে কতজন করোনা রোগী আর কতজন মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত তা নিশ্চিত বলতে পারছে না চট্টগ্রামের  স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে যে জ্বরই হোক না কেন, শুরুতে রোগীকে আইসোলেশনে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। এতে পরিবারের সদস্যরা এ রোগ থেকে রেহাই পাবেন।

    জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন ফটিকছড়ির পৌর এলাকা ও ১২টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মানুষ। এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু-বৃদ্ধসহ নানা বয়সীরা। এই অবস্থায় তাদের মধ্যে ভয় থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ নেই।

    এদিকে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণেই এ সময় সর্দি-জ্বর বেড়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন। তবে করোনা মহামারির এই সময়ে যে কারণেই সর্দি-কাশি-জ্বর দেখা দিক না কেন, অবহেলা না করে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

    চকবাজারের জয়নগরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানান, পরিবারের কাজের বুয়াসহ সবার একই অবস্থা। শেষরাত ও ভোররাতে তাপমাত্রা কমে যায়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্দির সাথে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকে । একই অবস্থা পরিবারের ৪ সদস্যের। ‘

    চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাপমাত্রার এই ওঠানামার ফলে কিছু কিছু ভাইরাস শরীরের ওপর আক্রমণের সুযোগ পায়। আবহাওয়ায় তাপমাত্রার এই দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে যাঁরা খাপ খাওয়াতে পারেন না, তাঁরাই আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বরসহ সর্দি-কাশিতে। ঋতু পরিবর্তনের ফলে জ্বরের এই প্রকোপ নতুন কিছু নয়।  সাধারণের কাছে এটি ‘ফ্লু’ বা ভাইরাল ফ্লু হিসেবে পরিচিত হলেও করোনাকালে নতুন আতন্ক ছড়াচ্ছে  এমন সর্দি কাশি।