অন্য নারীর সাজা কাটা সেই মিনু,ছেড়ে গেলেন জাগতিক জীবন

    বাংলাদেশ মেইল ::

    চট্টগ্রাম কারাগারে কুলসুম আক্তার নামের এক আসামীর পরিবর্তে জেল কাটা সেই মিনু আক্তার জেল থেকে মুক্তি পেলেও জাগতিক জীবন ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন অন্য জগতে৷ ২৮ জুন রাতে বায়েজিদ লিংক রোডে  গাড়ির ধাক্কায় নিহত অজ্ঞাত  নারীর পরিচয় খুঁজে বের করতে গিয়ে জানা গেল মিনু আক্তার আর নেই৷ সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত সেই অজ্ঞাত নারীর লাশ দাফনের পাঁচ দিনপর পুলিশ খুঁজে বের করলো সেই নারী ছিলেন আলোচিত মিনু আক্তার।

    জানতে চাইলে  বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান জানান, ২৮ জুন রাতে বায়েজিদ লিংক রোডে  গাড়ির ধাক্কায় নিহত এক অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে পাঠানোর পর লাশের ময়না তদন্ত হয়। ময়না তদন্ত শেষে লাশ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফনও করে৷

    ওসি কামরুজ্জামান আরও বলেন, অজ্ঞাত লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে সব ধরনের আইনী  পদক্ষেপ নেয়া হয়। শনিবার পুলিশের তদন্ত টিম সীতাকুণ্ডের গিয়ে ছবি দেখালে তার আপন ভাই রুবেল ছবি দেখে মিনুকে শনাক্ত করেন।

    পুলিশ সুত্রে জানা যায়, ঘটনার রাতে দুই বার টহল পুলিশ মিনুকে  সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। রাস্তায় তিনি লাফিয়ে লাফিয়ে মাতম করছিলেন। তখন তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয় টহল টিমের সদস্যদের।

    মিনু আক্তারের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মর্জিনা আক্তার নামে এক নারী ২০১৮ সালের রমজান মাসে যাকাতের টাকা ও খাদ্যসামগ্রী দেবে বলে মিনুকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর মিনু আক্তার আর বাড়িতে ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার হদিস মেলেনি। অন্যজনের সাজা ভোগ করা মিনু আক্তার নামের ওই নারীকে ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। এ ছাড়া প্রকৃত আসামি কুলসুমা আক্তারের কারা রেজিস্ট্রারে থাকা ছবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম খান আদালতের সামনে তুলে ধরেন। দুজনের ছবির মধ্যে অমিল পাওয়া যায়।গত মার্চে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঞার আদালতে বিষয়টি উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ। সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষে ১৬ জুন তিনি কারামুক্ত হন।

    মামলা সুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের  রহমতগঞ্জ এলাকায় ২০০৬ সালে পোশাককর্মী কোহিনুর আক্তারের লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। প্রথমে আত্মহত্যা বলা হলেও পুলিশি তদন্তে উঠে আসে কোহিনুরকে গলা টিপে হত্যা করে তা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর আত্মহত্যা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয় এবং মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের নভেম্বরে আসামি কুলসুম আক্তারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। সাজার পরোয়ানামূলে কুলসুম আক্তারের বদলে মিনু আক্তার ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে যান। সেই থেকে কারাগারে অন্য জনের সাজা কাটছিলেন মিনু।খুনের মামলার আসামি না হয়েও প্রায় তিন বছর সাজা ভোগ করা মিনু আক্তার মুক্তি পেলেও ছেড়ে গেলেন জাগতিক জীবন।