শিরিষতলার গাছ রক্ষায় চট্টগ্রামবাসী এক হবার আহবান সুজনের

    বাংলাদেশ মেইল ::

    শিরিষতলার গাছ রক্ষায় চট্টগ্রামবাসীকে এক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থানরত সুজন আজ শনিবার (১০ জুলাই ২০২১ইং) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রামবাসীর প্রতি এ আহবান জানান।

    তিনি বলেন, সিআরবি চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যগত এলাকা। ব্রিটিশ আমলের ভবন, আঁকাবাকা রাস্তা, পাহাড়, টিলা ও শতবর্ষী নানা প্রকারের গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ এ এলাকাটি। যান্ত্রিক জীবনে হাঁপিয়ে উঠা নগরবাসী একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে ছুটে যান সেখানে। সিআরবির গাছ গাছালিগুলো সন্ধ্যায় নানারকম পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠে। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ, বলী খেলা, বসন্ত উৎসবসহ নানা প্রকার দেশীয় উৎসবে বাঙালির সংস্কৃতির মিলনমেলায় পরিণত হয় এলাকাটি। মূলত সিআরবি পুরো এলাকাটি সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে। তাছাড়া রয়েছে ব্রিটিশ আমলের গড়ে উঠা  মনোমুগ্ধকর স্থাপনা এবং বাংলো। বলা যায় চট্টগ্রামের বুকে নয়নাভিরাম একখন্ড সবুজ চত্বর এটি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মারফত জানতে পারলাম যে বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের নামে শিরিষতলা এবং তৎ সন্নিহিত এলাকার শতবর্ষী গাছগুলোকে কেটে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। মূলত শিরিষতলাকে কেন্দ্র করে বাঙালির সংস্কৃতির যে মিলনমেলা সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে সুকৌশলে বানচাল করতে চায় রেলওয়ের কতিপয় কর্মকর্তা। রেলসহ বিভিন্ন সরকারী অফিসে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী চক্র বাঙালির জমায়েত কেন্দ্র ধ্বংস করার জন্য অত্যন্ত সুনিপুনভাবে এ কর্মকান্ডগুলো পরিচালিত করছে। যাতে করে শিরিষতলাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি প্রেমী ও সাহিত্য প্রেমীদের আড্ডাটি বিনষ্ট হয়ে যায়।

    তিনি এ ধরণের হটকারী সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য রেলওয়েসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট বিনীত আবেদন জানান। নচেৎ চট্টগ্রামের মানুষ করোনা ঝুঁকি উপেক্ষা করে প্রতিটি গাছকে রক্ষার জন্য মানব ব্যুহ রচনা করবে। তিনি আরো বলেন চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দাদের জায়গা জমি একসময় রেলওয়ে তাদের লাইন সম্প্রসারন, ইয়ার্ড নির্মাণ, কারখানা নির্মাণসহ রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নামমাত্র মূল্যে অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণের শর্ত অনুযায়ী অধিগ্রহণকৃত জায়গা ১২ বছরের মধ্যে স্ব-স্ব কাজে ব্যবহার না করলে সে জায়গাগুলো অধিগ্রহণকৃত মূল্যে জমির মালিককে ফেরত দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সে জায়গাগুলো ফেরত না দিয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট লীজ প্রদান করে রেলওয়ে। যেখানে মার্কেটসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করেছে লীজ গ্রহীতা।

    এছাড়াও রেলওয়ের বিভিন্ন মূল্যবান জায়গা সম্পত্তি বছরের পর বছর দখল করে রেখেছে কতিপয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। যেখানে দিনরাত নানারকম অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। এসব জায়গাগুলো অবৈধ দখলদারের কাছ থেকে উদ্ধার করে সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করলে চট্টগ্রামবাসীর কোন আপত্তি থাকবে না। কিন্তু কি কারণে যে শিরিষতলার মতো বিশুদ্ধ শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার একটি উন্মুক্ত পার্ককে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। ইতিপূর্বে চসিক প্রশাসক দায়িত্ব থাকাকালীন সময় সিআরবির প্রবেশমুখের রাস্তাটি সংস্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করলে রেলওয়ের বাঁধার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। প্রকৃতপক্ষে রাস্তাগুলো সংস্কারবিহীন অবস্থায় ফেলে রেখে সেখানে সংস্কৃতিকর্মীদের প্রবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা সৃষ্টি করতে চায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

    তাই শিরিষতলার শতবর্ষী গাছগুলোকে রক্ষা করার জন্য দল মত নির্বিশেষে চট্টগ্রামের সকল শিল্পী, সাহিত্য ও সামাজিক ব্যক্তিত্বের প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়া চট্টগ্রামের অবশিষ্ট পুকুর, দিঘী, পাহাড় এবং শতবর্ষী গাছ বাঁচাতেও উদ্যোগ গ্রহণ করবে নাগরিক উদ্যোগ। চট্টগ্রামের কোথাও পুকুর কিংবা দিঘী ভরাট অথবা পাহাড় ও শতবর্ষী গাছ কাটার খবর পেলে তা নাগরিক উদ্যোগের ফেসবুক পেইজ ‘নাগরিক উদ্যোগ’ এ জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।