পাইকারি বাজারে চিনির রেকর্ড দাম বৃদ্ধি

    পাইকারি
    বাংলাদেশ মেইল::

    খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে চিনির রেকর্ড দাম বৃদ্ধি হয়েছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১১০ টাকা। অর্থাৎ পাইকারি পর্যায়ে বর্তমানে এক কেজি চিনি কিনতে হচ্ছে ৭২ টাকা দরে। খুচরাতে সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। যা দাম বৃদ্ধিতে রেকর্ড বলছেন ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দরবৃদ্ধির প্রভাবে চিনির বাজার অস্থির। এছাড়া এক কেজি চিনিতে প্রায় ২২ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। শুল্কহার কমালে দাম কমে যাবে। অন্যদিকে ভোক্তাদের দাবি, এটা সিণ্ডিকেট কারসাজি। চিনি নিয়ে অতীতেও ব্যবসায়ীরা কারসাজি করেছে। সরকারের উচিত মিলগেটে চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়া ।

    গতকাল খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারিতে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬৯০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫৮০ টাকায়।খাতুনগঞ্জের কয়েকজন চিনির আড়তদার জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’।

    চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়।

    দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের তেল ও চিনির আমদানিকারক আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আর্ন্তজাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েই চলেছে। এর প্রভাবে চিনির বাজার উর্ধ্বমুখী। মিলগুলো কম দামে তাই চিনি ছাড়ছে না। বর্তমানে মিলগেটে প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ৭৪ টাকা।

    জানতে চাইলে আল মদিনা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী এহসান উল্লাহ জাহেদী বলেন, নব্বইয়ের দশকে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রয়াত্ত্ব সুগার কর্পোরেশন সরকারি ডিলারদের সর্বোচ্চ ১০ টন পর্যন্ত চিনি বরাদ্দ দিত। এখন সেটি নেমে গেছে মাত্র আধা টনে। এখন বেসরকারি চিনির মিলগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে চিনির বাজার। ফলে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়েও চিনির দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সরকার। অন্যদিকে চিনির কাঁচমাল থেকে উৎপাদন বাড়িয়েও চিনির সরবরাহ বৃদ্ধি করে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। তাই সরকারকে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে চিনির বাজার ক্রমেই লাগামহীন হয়ে যাবে।

    কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, চিনির বাজার নিয়ে কারসাজি নতুন কিছু নয়। তবে প্রশাসনের যেভাবে নজরদারি হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রশাসনকে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই মাঠে নামা উচিত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সরকারি চিনিকলগুলোর বিপণন অব্যবস্থাপনার কারণে বেসরকারি চিনির আমদানিকারকরা কারসাজি করার সুযোগ পাচ্ছে। তাই সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।

    বিএম/  পাইকারি