ব্যাংক হিসাব তলবকে স্বাগত জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা

    বাংলাদেশ মেইল ::

    জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানসহ ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলবকে স্বাগত জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

    জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন  বলেন, ‘যারা (বিএফআইইউ) চেয়েছে তারা বলতে পারবে কেন চেয়েছে? সরকার এটা চাইতেই পারে। সাংবাদিকরা তো সবকিছুর ঊর্ধ্বে না।’

    এই হিসাব পাওয়ার পর জনসমক্ষে প্রকাশের আহ্বানও জানিয়েছেন এক নেতা। তারা বলছেন, দেশের প্রচলিত আইন ও নিয়মের মধ্যেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিকরা। এ কারণে অন্য সবার মতো সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও স্বাভাবিক নিয়মে চাইতে পারে সরকার।

    মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করে রোববার বিভিন্ন ব্যাংকে চিঠি পাঠায়।

    চিঠিতে মঙ্গলবারের মধ্যে নির্দিষ্ট ফরমে সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাবের সব তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, ট্রানজেকশন প্রোফাইল, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত লেনদেনের বিবরণী।

    জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ছাড়া অন্য সাংবাদিক নেতারা হলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) (বিএনপি সমর্থিত) সভাপতি আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম।

    ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) (বিএনপি সমর্থিত) সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

    বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) সভাপতি মোল্লা জালাল ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালীন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খানের তথ্যও চেয়েছে বিএফআইইউ।

    ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা (বিএফআইইউ) চেয়েছে তারা বলতে পারবে কেন চেয়েছে? সরকার এটা চাইতেই পারে। সাংবাদিকরা তো সবকিছুর ঊর্ধ্বে না।’

    কেবল সাংবাদিক নেতাদের তথ্য চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের হয়তো মনে হয়েছে নেতারা শুধু দাবিদাওয়া জানায়, কী অবস্থায় (তারা) আছে দেখি। দল-মত নির্বিশেষে সব নেতার তথ্য তারা চেয়েছে।’

    প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কেন আমার ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। আমার ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেখে, যারা চেয়েছে তারা লজ্জা পেতে পারে। আমার একটা টাকাও নেই।’

    এর আগে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এই সাংবাদিক নেতা লেখেন, ‘আমার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। যাঁরা চেয়েছেন, তাঁরা লজ্জা পেলে আমি দায়ী নই…।’

    ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালীন নোমানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেন হিসাব চাওয়া হয়েছে সেটা আমিও জানি না। আমি সংগঠনের প্রতিটি সদস্যকে আমার ব্যাংক হিসাব, স্টেটমেন্ট, কত টাকা আছে, কত টাকা ঋণ সবকিছু জানাব। অন্য কাউকে টার্গেট করতে গিয়ে হয়তো আমাকেও করেছে।’

    মোরসালীন নোমানীও বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘…আমার নামটি দেখে খুবই বিস্মিত হয়েছি। এখানে আমার বক্তব্য হচ্ছে, আমাকে যারা ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন না, তারাও আমার আর্থিক সততা নিয়ে প্রশ্ন করেন- এটা আমি বিশ্বাস করি না।

    ‘তা ছাড়া স্ত্রী অসুস্থসহ পারিবারিক কারণে ব্যাংকে আমি অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত। যেসব নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সেই তথ্য সংগ্রহ করার পর, তা যেন জনসম্মুখে অবশ্যই প্রকাশ করেন, সেই জোর দাবি জানাচ্ছি।’

    ডিআরইউয়ের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ব্যাংক হিসাব তলবের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

    তিনি লিখেছেন, ‘১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব। এর মধ্যে আমার নামটিও রয়েছে। আমার ব্যাংক হিসাব খুঁজে যা পাওয়া যাবে তাতে রাষ্ট্রের লজ্জা পেতে হবে। কারণ টানা ২০ বছর (এক দিনের জন্যও বেকার ছিলাম না) ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ বিটে রিপোর্টিং করার পরেও ব্যাংকে দুই লাখ টাকাও জমা নেই।’

    পাঁচ লাখ টাকার একটি ঋণ রয়েছে জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘উল্টো ইবিএলে একটা ৫ লাখ টাকার পারসোনাল লোন রয়েছে। ২০ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় থাকি। নিজের একটা বাহন নেই। জমাজমির যতটুকু মালিক পুরোটাই পৈতৃক সূত্রে।’

    তিনি লিখেছেন, ‘এমন একজনের পেছনে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ব্যবহার করে শক্তি অপচয়ের কোনো মানে হয় না। এসব তথ্য আমার কাছে চাইলেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছে দিতে পারতাম।’