কপ-২৬ সম্মেলন: ‘অনুদান আদায়ে বাংলাদেশকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে’

কপ-২৬ সম্মেলন
বাংলাদেশ মেইল::
যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় কপ-২৬ সম্মেলনে অনুন্নত দেশের জন্য অনুদান আদায়ে বাংলাদেশকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সনাক চট্টগ্রামের সভাপতি ড. আনোয়ারা আলম। রোববার সকাল এগারোটায় নগরীর লালখান বাজার এলাকায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই মন্তব্য করেন তিনি।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি ড. আনোয়ারা আলম বলেন, ‘এবারের কপ সম্মেলন বেশ কিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনে ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট-জিরো’ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও কয়লার ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন প্রদান, বর্ধিত স্বচ্ছতা কাঠামো ও প্যারিস রুলবুক চুড়ান্ত করার মতো গুরুত্বর্পূণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।’ এসব অমীমাংসিত বিষশে সমঝোতায় পৌঁছানোর এটাই শেষ সুযোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্যারিস চুক্তি পরবর্তী সময়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে সমঝোতায় পৌছানোর জন্য এই সম্মেলনই শেষ সুযোগ। তাই যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় কপ-২৬ সম্মেলনে প্যারিস চুক্তির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অনুন্নত দেশের জন্য অনুদান আদায়ে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) নেতৃত্বে বাংলাদেশকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
’ পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে জিসিএফের প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ে দীর্ঘসূত্রতা বন্ধে সমন্বিত ও কার্যকর দাবি উত্থাপনেও বাংলাদেশকে ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানান তিনি। আসন্ন কপ-২৬ সম্মেলন উপলক্ষে ‘কয়লাভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার সহ প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত’ এর দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে টিআইবি।
মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সনাক সদস্য জেসমিন সুলতানা পারু, এসএম ফরহাদ উল্লাহ, সঞ্জয় বিশ্বাস, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ও সনাক-টিআইবি’র ইয়েস ও ইয়েস ফ্রেন্ডস সদস্যবৃন্দ। সনাক সদস্য ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘প্যারিস চুক্তিতে প্রতিশ্রুত জলবায়ু তহবিল প্রদান বাধ্যতামূলক না করে ঐচ্ছিক রেখেছে মোড়ল দেশগুলো। ফলে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু অর্থায়ন পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
২০২০ সাল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা প্রদানে উন্নত দেশগুলো ব্যর্থ হয়েছে।’ ‘এছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে। এতে জলবায়ু অর্থায়নের প্রধান মাধ্যম জিসিএফ ক্ষতিগ্রস্ত দেশের জন্য ১৯০টি প্রকল্পে ১০ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন করলেও ছাড় করেছে মাত্র দুই বিলিয়ন ডলার!’ তিনি আরো বলেন, ‘অভিযোজন এবং প্রশমন খাতে ৫০:৫০ অনুপাত বজায় রাখার কথা থাকলেও সেটি করা হচ্ছে না। সক্ষমতার ঘাটতির কারণে জিসিএফের কঠিন মানদণ্ড নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের জন্য কঠিন। এই সুযোগে আন্তর্জাতিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জিসিএফ নিবন্ধন নিচ্ছে এবং জিসিএফ প্রদত্ত অনুদানের সাথে ঋণ যুক্ত করে এটিকে একটি লাভজনক বিনিয়োগ হিসাবে ব্যবহার করছে, যা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
মানববন্ধনে বেসরকারী সংস্থা আইডিএফের প্রতিনিধি সুদর্শন বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম, তাই টিআইবি তথা সরাদেশের জনগনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের পরে নতুন কোনো প্রকার কয়লা জ্বালানি নির্ভর প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থায়ন করা হবে না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের এই অঙ্গীকার করতে হবে। আমরা দেখছি যে, অনেক দেশই কয়লানির্ভর জ্বালানি প্রকল্প থেকে সরে আসছে।
এমনকি বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ যোগানকারী অন্যতম দেশ চীন ইতিমধ্যেই নিজ দেশের বাইরে এধরণের প্রকল্প বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা সামনের বছর থেকে এধরনের প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না বলেও জানিয়েছে। অন্যান্য অনেক দেশও এটি করছে এবং করতে বাধ্য হচ্ছে।’ টিআইবি’র এরিয়া কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে ১৪ টি দাবী সম্বলিত অবস্থানপত্র উপস্থাপন করেন সনাক-টিআইবির ইয়েস দলনেতা জাওয়াদুল করিম জিসান।