সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় জাতীয় ঐক্য চান সুজন

বাংলাদেশ মেইল ::

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে আলেম ওলেমা এবং মাদরাসা ছাত্রদের নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দারুল উলুম কামিল মাদরাসার গর্ভনিং কমিটির চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন

রোববার (২৪ অক্টোবর ) সকাল সাড়ে ১০টায় দারুল উলুম কামিল মাদরাসা আয়োজিত সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও সন্ত্রাস বিরোধী আলেম ওলেমা এবং মাদরাসা ছাত্রদের এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন  সুজন।

এ সময় তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো মুসলিম যেন কোনো অমুসলিমের জান ও মালের ওপর উপর অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ না করে। বরং অমুসলিমদের প্রতি সাদাচরণ করতে হবে। ইসলাম ও মুসলমানদের সুমহান আদর্শ ও সৌন্দর্যগুলো তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ইসলাম কখনো সন্ত্রাস সমর্থন করে না, বরং সন্ত্রাস হিংসা হানাহানি নির্মূল করার জন্যই ইসলামের আবির্ভাব। সন্ত্রাস ও আতংক সৃষ্টি করে ধর্মের নামে হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ কোনভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। যারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে ধর্মীয় উসকানির মাধ্যমে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায় তারা কোনভাবেই প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। পবিত্র ইসলাম ধর্ম কোনভাবেই এসব অরাজকতা সমর্থন করে না। তাই আলেম ওলেমা এবং মাদরাসা ছাত্রদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। এখন মাদরাসা জঙ্গী কিংবা সন্ত্রাসী তৈরীর প্রতিষ্টান নয়। বরং জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে সংযুক্ত হয়ে মাদরাসা থেকে আদর্শ নাগরিক ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক তৈরি হচ্ছে।

সুজন বলেন, বাংলাদেশের এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে মাদরাসা কিংবা মসজিদ নেই। তাই আলেম ওলেমাদের দায়িত্ব নিতে হবে যাতে কেউ সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করতে না পারে। আমরা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান একসাথে রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের মাতৃভূমিতে আমরা সবাই একাকার হয়ে বসবাস করবো। আজকের মানববন্ধন অনুসরন করে দেশের সকল আলেম ওলেমাদের এসব সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে।

সুজন বলেন, মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এসব হামলা আর এদের বিরুদ্ধে আইনশৃংখলা বাহিনী যথাযথভাবে কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বাড়িঘর নির্মাণসহ সবধরণের সহযোগিতা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। মূলত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাত্রিতে জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল সে ষড়যন্ত্র এখনো চলমান বলে উল্লেখ করেন তিনি। সেই পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে প্রতিষ্টা করার যে স্বপ্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখছেন এবং বাস্তবায়ন করছেন সে স্বপ্নকে বাঁধাগ্রস্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে এ হামলা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর বুকে এক অপার বিস্ময়। বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর অন্যতম একটি অর্থনৈতিক শক্তির দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্টিত। তাই ষড়যন্ত্রকারীরা বারবার বিভিন্ন কৌশলে আবহমান কাল ধরে চলে আসা দেশের সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়। এদের বিরুদ্ধে আলেম সমাজসহ সর্বস্তরের জনগনকে সজাগ থাকার আহবান জানান সুজন।

মানববন্ধনে কাজেম আলী স্কুল ও কলেজের সর্বস্তরের শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং মঈনউদ্দিন শাহ্ এতিমখানার শিক্ষকবৃন্দ একাত্নতা প্রকাশ করেন। দারুল উলুম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মুহসিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কাজেম আলী স্কুল ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব শাহাবুদ্দিন আহমেদ, অধ্যক্ষ সাদিয়া মুক্তা, মঈনউদ্দিন শাহ্ এতিমখানার অধ্যক্ষ মো. আলী নেওয়াজ, দারুল উলুম কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মও. মাহবুবুল আলম ছিদ্দিকী, মাহবুবুর রহমান ছিদ্দিকী, হাবিব উল্ল্যাহ, আনোয়ার হোসেন। মানববন্ধনে সর্বস্তরের শিক্ষক, শিক্ষিকা, কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।