জার্মানিতে রাস্তায় করোনা পরীক্ষায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা

বাংলাদেশ মেইল ::

জার্মানিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধির মধ্যে এই মহামারিতে মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেল। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩০০ জনের। এ নিয়ে ইউরোপের এ দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ২২৬ জনে।

জার্মানির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত। সেই দেশে করোনাভাইরাসে এত মানুষের মৃত্যু ও সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দেশটির রাজনীতিকেরা সমালোচিত হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার ও ১৬টি রাজ্য সরকারের একক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনীহা এবং করোনার সংক্রমণ রুখতে পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্বের কারণেই মূলত সংক্রমণ রুখতে নানা নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ জার্মানির রোজেনহাইম শহরের ৫৩০ জন চিকিৎসক স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সংক্রমণের বিষয়ে জার্মানির জনগণকে সতর্ক করেছেন। চিকিৎসকেরা তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দ্রুতগতিতে যেভাবে করোনাভাইরাসে বিস্তার ঘটছে তাতে অচিরেই জীবন রক্ষার জন্য উন্নত চিকিৎসার ঘাটতি দেখা যাবে। অ্যাসোসিয়েশন ফর ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিনের সভাপতি গেরনোট মার্কস বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি এখন আর নিয়ন্ত্রণে নেই এবং জার্মানির অনেক ক্লিনিক ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী গ্রহণ করেছে।

জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল গতকাল তার ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক দলের নীতি নির্ধারকদের সভায় বলেছেন, ‘আমরা এখন একটি নাটকীয় পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছি। এখনকার পরিস্থিতি প্রমাণ করছে, এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি তা যথেষ্ট ছিল না।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্য সরকারগুলোর সিদ্ধান্তহীনতা এবং জার্মানিজুড়ে একক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সমালোচনা ও হতাশা প্রকাশ করেছেন চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল।

গত বৃহস্পতিবার করোনাজনিত সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে জার্মানির পার্লামেন্ট বা বুন্ডেশটাগে বিশেষ অধিবেশনে সংক্রমণ সুরক্ষা আইন পরিবর্তন করা হয়েছে। এই আইন আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ১৯ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত বলবত থাকবে। নতুন আইন অনুযায়ী, থ্রি জি নিয়ম অর্থাৎ (টিকা গ্রহণকারী, করোনা সংক্রমনের পর উপশম ও সংক্রমনে নেগটিভ পরীক্ষিত) চালু হবে। কর্মক্ষেত্রে এবং বাস, ট্রেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

তবে এই ‘থ্রি জি নিয়ম’ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে কতটা উপযোগী হবে, তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।

জার্মানির সংক্রামণ রোগ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র রবার্ট কখ ইনিস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক লোথার ভিলার বাধ্যতামূলক টিকা এবং বেশি সংক্রমণের এলাকাগুলোতে স্থানীয়ভাবে লকডাউন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কোলোন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান মিশাইল হ্যালেক বলেছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন আইন পর্যাপ্ত নয়। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেছেন, ‘মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের অনেক সাফল্য থাকলেও রাজনীতিবিদদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে একটি উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশ করোনাভাইরাস ঠেকাতে দুর্দশায় পড়েছে।’

রবার্ট কখ ইনিস্টিটিউটের পক্ষ থেকে আজ সকালে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় জার্মানিজুড়ে ৫৪ হাজার ১২৮ জন মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

করোনার টিকা গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের কঠোর সমলোচনা করেছেন জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়ান স্পান। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এখনও এমন কিছু লোক আছে যারা বিশ্বাস করেন না যে, ভাইরাস তাদের ক্ষতি করতে পারে। করোনা প্রতিরোধী টিকা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিরাপদ ও অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত। এরপরও অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তা নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।’

বিএম/জার্মানিতে