কর্মিদের চাহিদা হরতাল, সমাবেশের ঘোষণা বিএনপির

হরতাল

বাংলাদেশ মেইল ::

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার দাবিতে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এই গণঅনশন থেকে পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে হরতাল ঘোষণা করার জন্য আহ্বান জানান দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু গণঅনশন থেকে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

শনিবার দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার দাবিতে গণঅনশনে এ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সকাল ৯টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে ও সামনে বিএনপির উদ্যোগে এ কর্মসূচি শুরু হয়। চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

সকাল ৯টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া গণঅনশন ৭ ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন বক্তব্য দেয়া শুরু করেন, তখন পাশে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হরতাল হরতাল বলে স্লোগান দেন। তারা কয়েক দফা হরতাল হরতাল বলে স্লোগান দিলে ফখরুল বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে বলেন, আপনারা তাহলে স্লোগান দেন। পরে নেতাকর্মীরা স্লোগান থামালে মির্জা ফখরুল আবার বক্তব্য শুরু করেন।

এরপর বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্যের শেষে আবার নেতাকর্মীরা হরতাল হরতাল স্লোগান দিয়ে ডায়াসের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু হরতাল নয়, মির্জা ফখরুল সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। পরে নেতাকর্মীরা মনক্ষুন্ন হয়ে কর্মসূচির স্থান থেকে চলে যান।

মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ২২ নভেম্বর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আমরা ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবো এবং সারাদেশে জেলা, মহানগর এবং উপজেলাগুলোতেও সমাবেশে হবে। এরপরও যদি না হয় আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত। আমরা প্রস্তুত আছি না? তাহলে দুহাত তুলে শপথ গ্রহণ করুন। এসময় নেতাকর্মীরা ফখরুলের সঙ্গে দুহাত তুলে শপথ গ্রহণ করেন। তারা ফখরুলের সঙ্গে বলেন, বেগম জিয়াকে মুক্তি ও তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো না পর‌্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।

বেগম খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া আজকে এতো অসুস্থ যে, তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছেন। আমরা ডাক্তারদের সঙ্গে বার বার কথা বলেছি। বিদেশের ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, বেগম জিয়ার বাংলাদেশে যে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব তা এখানে তারা দিয়েছে এবং দিচ্ছেন। কিন্তু তার কতগুলো জটিলতা আছে, যে জটিলতাগুলো বিদেশে অ্যাডভানস সেন্টারে পরীক্ষা করানো না হলে সুস্থ করা যাবে না।

বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য তার পরিবার থেকে আবেদন জানানো হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার সেই সুযোগ দেয়নি। ফিরিয়ে দিয়েছে। আর সংসদে প্রধানমন্ত্রী এমন ভাষায় কথা বলেছেন, সে ভাষা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং আইনমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন।

‘৪০১ ধারায় এই সরকারের সম্পূর্ণ অধিকার আছে এবং এটা তাদের দায়িত্ব যেকোনো নির্দেশ দিয়ে বেগম জিয়ার চিকিৎসা করাতে পারে’।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তা না হলে এই যে, আজকে গণঅনশন শুরু হলো, এই আন্দোলন আপনাকে গদিচ্যুত করবে।

গণঅনশনে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কথায় প্রমাণ হয় তার প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়া বন্দি। আর বিগত দিনে বেগম জিয়া যে সাজা হয়েছে সেটাও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। আর আইনে কোনো বাধা নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে আপনি এক ঘণ্টাও দেশে থাকতে পারবেন না। দেশের জনগণ সেটা হতে দেবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়া দারুণভাবে অসুস্থ। চিকিৎসকরা বলেছেন, দেশে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। সরকার চাইলেই বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু দিচ্ছে না। তাই আল্লাহর ওয়াস্তে দল ধেকে যে কর্মসূচি দেবে আপনারা (নেতাকর্মী) সেটা পালন করবেন।

দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সরকারে পেছনে জনগণ নাই। প্রশাসন সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। আমি বলতে চাই, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হলে রাজপথেই তার ফয়সালা হবে।

শেষে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের সাবেক ভিসি আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী পানি পান করিয়ে নেতাকর্মীদের গণঅনশন কর্মসূচি ভাঙান।

কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির সিনিয়র নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে চেয়ার নিয়ে বসেন এবং কর্মীরা কার্পেট ও শামিয়ানা বিছিয়ে সড়কের ওপর বসে কর্মসূচি পালন করেন।

গণঅনশনকে কেন্দ্র করে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের নিচে সমবেত হতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে খণ্ড খণ্ড মিছিল এবং ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে যোগ দেন। এই কর্মসূচিতে দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিএনপির গণঅনশন কর্মসূচি ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আশেপাশের এলাকায়। হরতালকর্মসূচি ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে কঠোর অবস্থানে ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। কার্যালয়ের আশপাশে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জনসমাগম ঘটিয়ে যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য সার্বিক প্রস্তুতিও ছিলো।

এছাড়া নয়াপল্টনে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের সঞ্চালনায় গণঅনশনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আযম খান, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।