দ.জেলার আট সদস্যের লিখিত অভিযোগ
আলোচিত জামাল উদ্দিন হত্যা মামলার আসামীকে সদস্য সচিব করে আনোয়ারা বিএনপির কমিটি ঘোষণা

বাংলাদেশ মেইল ::

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির কমিটিতে আলোচিত বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলার অন্যতম আসামী মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

(১৪ ই মে) শনিবার দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আনোয়ারা, সাতকানিয়া উপজেলা, সাতকানিয়া পৌরসভার কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি জানানো হয়।

প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির  ৬১ সদস্যের আহবায়ক  কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে  তিন সপ্তাহের বেশি সময় আগে । ২০ শে এপ্রিল  মোশারফ হোসেনকে আহবায়ক ও লায়ন হেলালকে সদস্য সচিব করে ৬১ সদস্যের আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান ও সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ।

এর আগে ১৭ ই এপ্রিল মোঃ হেলালের  (কালা হেলাল) বিরুদ্ধে আলোচিত বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকা, চেক প্রতারণা মামলায় একবছরের কারাদণ্ড পাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আট সদস্য। একযোগে  অভিযোগ দেয়া আট সদস্যকেও রাখা হয়েছে আনোয়ারা উপজেলার নতুন আহবায়ক কমিটিতে।

নতুন আহবায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে মন্জুর উদ্দিন চৌধুরী,মোস্তাফিজুর রহমান, আবু মোহাম্মদ নিপার, এডভোকেট মোঃ ফৌজুল আমিন চৌধুরী, ভিপি মোজাম্মেল,মেজবাহ উদ্দিন জাহেদ,  হুমায়ুন কবির আনসার, আবুল কালাম আবু, হাসান চৌধুরী, সরওয়ার হোসেন মাসুদ,মোঃ ইলিয়াস কাঞ্চন চেয়ারম্যান, জাকের সওদাগরসহ ১২ জনকে।

হেলালের বিরুদ্ধে একযোগে অভিযোগ করার কারণে চুড়ান্ত হওয়া কমিটি প্রকাশ করা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়লেও শেষ পর্যন্ত তড়িঘড়ি করে কমিটির অনুমোদনের বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠান দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান ও সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ। নতুন আহবায়কসহ ১২ জন যুগ্ম আহবায়কের ৭জনই এর আগে  হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগ পত্রে ছিলো আহবায়ক মোশারফ হোসেন চৌধুরীরও  স্বাক্ষর।

১৭ ই এপ্রিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবু সুফিয়ান  বরাবর দেয়া এক চিঠিতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আট সদস্য অভিযোগ করেছিলেন ,মোঃ হেলাল উদ্দিন  বিএনপি নেতা জামালউদ্দিন হত্যা মামলার আসামী ছিলেন। এই মামলায় তিনি গ্রেফতারও হয়েছিলেন।

‌চিঠিতে আনোয়ারা উপজেলা থেকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া নয়জনের মধ্য আটজনই স্বাক্ষর করেছিলেন । দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি মোশারফ হোসেন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মন্জুর উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভিপি মোজাম্মেল, জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট মোঃ ফৌজুল আমিন চৌধুরী, সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন জাহেদ, থানা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির আনসার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য
‌আবু মোহাম্মদ নিপার, মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষর ছিলো অভিযোগ পত্রে।

চিঠিতে অভিযোগ করা হয় জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যামামলায় মোঃ হেলালের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া আসামী শহিদ চেয়ারম্যান,কালা মাহবুব, সোবহান ড্রাইভার আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেছিলেন । মোঃ হেলাল ইতিপূর্বে আনোয়ারার কোন ইউনিয়ন কিংবা উপজেলা বিএনপির পদ পদবীতে কখনো না থাকলেও অনৈতিকভাবে তাকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য করা হয়। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে দলের নেতৃত্বে আনা নিয়ে দলের তৃনমুলের নেতাকর্মীদের মধ্যে  তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। হেলাল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এমন অভিযোগও উঠেছে।

চিঠিতে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন মোঃ হেলালের বিরুদ্ধে বেশকিছু চেক প্রতারণার মামলা রয়েছে। দলের বিভিন্ন নেতা ও সাধারন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধার করা টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগে বহু মামলা রয়েছে মোঃ হেলালের বিরুদ্ধে।

প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি মামলার নথিতে দেখা যায় চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকার ব্যবসায়ী ফারুকউজ্জামানের দায়ের করা চেক প্রতারণা মামলায় ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি
আসামী মোহাম্মদ হেলাল ও রফিক উদ্দিককে এক বছরের কারাদন্ড দেয় আদালত (মামলা (৫৪২/২০১৫)। নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট
(এনআই) এ্যাক্টের ১৩৮ ধারার অভিযোগ সন্দেহতিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায়
চট্টগ্রামের ৫ম যুগ্ম জেলা জর্জ আদালতের বিচারক জহির উদ্দিন , হেলালসহ অন্য আসামিকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক কোটি টাকা জরিমানা করেন। একই মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামী রফিক উদ্দিন আনোয়ারার চরলক্ষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল শুক্রবার  দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি মোশারফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সাল পর্যন্ত হেলাল মুলত আওয়ামী লীগের সংগঠক হিসেবেই আনোয়ারায় পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে দলের একটি সিন্ডিকেটের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছে। হঠাৎ করেই তাকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এখন শুনতেছি তাকে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব করা হবে। ‘

জানতে চাইলে গতকাল  চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, হেলালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আমাকে দেয়া হয়নি। তবে কেন্দ্রে জমা দিলে দিতে পারে। ‘

দক্ষিণ জেলা বিএনপির আট সদস্যের দেয়া লিখিত অভিযোগ পাবার বিষয়টি স্বীকার করে সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ বলেন, অভিযোগ যে কেউ করতেই পারেন। আমরা তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। হেলালের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলার বিষয়েও লোকমুখে শুনেছি। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। ‘

জামাল উদ্দিন হত্যার আসামি হেলালকে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব করার বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সাথে যোগাযোগ করা হলে গতকাল তিনি জানান, যতটুকু জানি এখনো আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির কমিটি চুড়ান্ত হয়নি। খসড়া হয়তো তৈরি করেছে আহবায়ক কমিটি। যেহেতু প্রস্তাবিত একজন নেতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছে পদপ্রত্যাশী সব নেতা, অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। বিতর্কিতদের কাউকে নেতৃত্বে না আনার বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা রয়েছে। ‘

এদিকে, দলের সিনিয়র নেতাদের লিখিত অভিযোগ খতিয়ে না দেখে হেলালকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণা করার কারনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে। সিনিয়র জুনিয়র প্রটোকল লঙ্ঘন, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন, আর্থিক লেনদেনের মতো অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  স্টাটাস দিয়েছেন অনেকেই। যুগ্ম আহবায়কদের কেউ কেউ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেবার কথা জেনে নতুন আহবায়ক কমিটির আহবায়ক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী বলেন, আনোয়ারার  সব বিএনপি নেতাদের অভিযোগ তদন্ত না করে এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে কার স্বার্থে সদস্য সচিব করা হয়েছে সেটা খুঁজে বের করা জরুরি। কেন্দ্রে জমা দেয়া  স্পর্শকাতর ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তোয়াক্কা না করে বিএনপির আদর্শের নেতাকর্মীদের অপমান করা হয়েছে। বয়স ও শারীরিক অক্ষমতা ছাপিয়ে দলের দুর্দিনে সবসময়  মাঠে ছিলাম, এমন অপমানজনক দিন দেখার জন্য নয়।  সে কারনে আমি সবার সাথে আলোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। ‘

বিএনপি ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানিয়েছেন, দলের কর্মিদের কাছ থেকে ব্যবসার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেননি হেলাল। কেউ টাকা ফেরত চাইলে পুলিশ দিয়ে ভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করিয়েছেন তিনি। তার দেনাদারের তালিকাও দীর্ঘ।  আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে তার সখ্যতা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে একাধিক সুত্র।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির ঘনিষ্ঠ একটি সুত্র জানায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত হেলাল আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও সাম্প্রতিক সময়ে আইনজীবী ফোরামের এক নেতার উপর ভর করে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত হন। আইনজীবী ফোরামের সেই নেতার তদবিরে  দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য হন। তার ব্যবসায়ীক অংশিদার রফিকও একটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

২০০৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নগরীর বহদ্দারহাট থেকে অপহৃত হন। অপহরনের প্রায় দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট কাশেম চেয়ারম্যানের সহযোগী ও অপহরণ দলের সদস্য কালা মাহবুবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জামাল উদ্দিনের কঙ্কাল ফটিকছড়ির দইজ্জ্যাখালি পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।

চাঞ্চল্যকর এ অপহরনের পর ২০০৩ সালে ২২ জুলাই  বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন জামাল উদ্দিনের ছেলে চৌধুরী ফরমান রেজা লিটন।

হেলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামাল উদ্দিনের ছেলে চৌধুরী ফরমান রেজা লিটন বলেন, অপহরণের পর আমার বাবার কঙ্কাল ছাড়া কিছুই আমরা পাইনি। সিঙ্গাপুরে ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যায় উদ্ধার করা কঙ্কালটি আমার বাবার। অপহরণ ও হত্যাকান্ডের পর গ্রেফতার হওয়া আসামীরা ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিলেও তদন্তকারী কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে এ ঘটনার মুলহোতাদের বাদ দিয়েছেন। গ্রেফতারকৃত তিনজনের ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তির পর র্যাবের এর হাতে আমার বাবা জামাল উদ্দিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামী মোহাম্মদ হেলালসহ আটজন গ্রেফতারও হয়েছিলেন। মুল আসামীদের চারজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেবার কারনে আমি আদালতে নারাজি দিয়েছি। আমি ও আমার পরিবার দেড় যুগের বেশি সময় ধরে ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। আমার বাবা আমৃত্যু বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এখন আমার বাবার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কেউ বিএনপির নেতা হয়েছেন বা হবেন এটি আমাদের জন্য অপমানজনক, কষ্টকর । ‘

আদালত সুত্রে জানা যায়, বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার হাত ঘুরে মামলার অষ্টম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন ২০০৬ সালের ১০ জুলাই সর্বপ্রথম ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।   তদন্তকারী কর্মকর্তা তার দাখিল করা প্রতিবেদনে মামলা থেকে বিএনপির সাবেক সাংসদ সরওয়ার জামাল নিজামসহ ২৪ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করলেও বাদি পক্ষের নারাজির   কারনে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত ।   তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর আগের অভিযোগপত্রের মতোই ২৪ জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তৎকালীন সিআইডির এএসপি হামিদুল হক। এছাড়া সোবহান নামের এক আসামি উচ্চ আদালতে রিট করলে বেশ কিছুদিন মামলার কার্যক্রম স্থগিত ছিল। মামলার আসামি কালা মাহাবুবকে রাজসাক্ষী করায় আপত্তি জানিয়ে আসামি মারুফ নিজাম ও সোবহান হাইকোর্টে রিট করায় উচ্চ আদালত এ স্থগিতাদেশ দেন। ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেই স্থগিতাদেশগুলো প্রত্যাহার করে নেন আদালত।

হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলেও মামলার নথি চট্টগ্রামের আদালতে পৌঁছাতে সময় লাগে ছয় বছর। এরপর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৩৫ দিনের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর আদালত। এখন পর্যন্ত ৩৮ দফায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য তারিখ ধার্য করা হলেও সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়নি।

মামলার ১৬ বছর গত হলেও মুল আসামিদের বাদ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি, জালাল উদ্দীনের পরিবারের নারাজি দাখিল,হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ, স্বাক্ষ্য গ্রহনে ধার্য করা দিন পরিবর্তনের জটে চট্টগ্রামের শিল্পপতি ও বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যাকান্ড মামলার নিষ্পত্তি হয়নি এখনো ।

এ বিষয়ে লায়ন হেলালের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন জামাল উদ্দিন হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে মোঃ হেলালকে বাদ দেয়া হয়েছিল। এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া শহিদ চেয়ারম্যানসহ আসামিদের তিনজন ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে হেলালের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছিলেন।

ব্যবসার জন্য টাকা ধার করে ফেরত দেননি এমন বিভিন্ন অভিযোগে হেলালের বিরুদ্ধে মামলার থাকার বিষয়ে সত্যতা মিলেছে ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে।

নাসির নামের এক ব্যক্তি জানান, মাছের জাহাজে ব্যবসার জন্য  হেলাল ও রফিককে টাকা ধার দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তার পরিবার।  এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি। সামনের মাসে ১৭ তারিখ মামলার শুনানির দিন ধার্য্য রয়েছে।

নাসির উদ্দিন জানান, তিন অংশীদার মিলে দুটি মাছ ধরার জাহাজ কিনে সেই জাহাজে বিনিয়োগ করিয়ে বহু ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়ে দিয়েছেন হেলাল ও রফিক। একসময় পার্টনারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।  তাদের অন্য পার্টনার ব্যাংক কর্মকর্তা দিদারও বিভিন্ন ব্যাংক, সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে  প্রায় ছয়শো কোটি টাকা লোন নিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যান। বর্তমানে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে সদরঘাটে নোঙ্গর’ করা আছে জাহাজ দুটি।