বাংলাদেশ মেইল ::
ভালো বেতনে গার্মেন্টসে চাকরির প্রলোভনে কিরগিজস্থানে পাচারের শিকার ১৩ বাংলাদেশি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের মধ্যে ৭ জন পাচারকারিদের হাতে বন্দি আছেন। বাকি ৬ জন পালিয়ে কিরগিজস্থানে ওয়াসিস নামে একটি সংস্থার হোমে আশ্রয়ে রয়েছেন। কিরগিজস্থানে পাচারকারিদের হাতে বন্দি মানুষগুলোকে সেখানকার কারখানা মালিকের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। সেখানে তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। পাচার হওয়া বাংলাদেশি এই নাগরিকদের উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনতে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করা হয়।
রোববার প্রেসক্লাব যশোরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ‘রাইটস’ যশোর এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ‘রাইটস’ যশোরের আইন আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তাহমিদ আকাশ ও খুলনা প্রগতি সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচান আবু মহসিন।
পাচারের শিকার কিরগিজস্থানের ওয়াসিসের হোমে আশ্রয়ে থাকা কুমিল্লার বুড়িচংয়ের আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে ভিডিওকলের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাছে তাদের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের বাইরেও অনেক কাজ করতে হয়। বেতন চাইলে চাবুক দিয়ে নির্যাতন চালানো হতো। কথায় কথায় কিল-ঘুষি মারতো।
একই আশ্রয়ে থাকা কুমিল্লার মুরাদনগরের ওলিউল্লাহ নির্যাতনের একই বর্ণনা দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক জানিয়েছেন, গত ৭ মাস আগে মাহমুদুল হাসান মীর নামে এক দালাল বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ১৪ নগরিককে কিরগিজস্থানে গার্মেন্টসে কাজে পাঠায়। এজন্য তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ লাখ করে টাকা নিয়েছেন। ওই দালাল সবাইকে জানিয়েছিল, কিরগিজস্থানে প্রত্যেকের বেতন হবে ৬০০ ইউএস ডলার এবং কাজের সময় ৮ ঘণ্টা। কিন্তু মাহমুদুল হাসান মীর ১৪ বাংলাদেশিকে কিরগিজস্থানে পাঠানোর পর তারা সঠিক কাজ ও মজুরি পাননি। তাদেরকে গার্মেন্টসে কাজ না দিয়ে একটি কাপড়ের ছোট কারখানায় কাজ দিয়েছে। মাস শেষে তাদের বেতন দেয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মামুদ হাসান মীর তাদেরকে কিরগিজস্থানে এই কারখানা মালিকের কাছে বিক্রি করে দিয়ে গেছে। বেতনের টাকা চাওয়ায় মালিকপক্ষ তাদের ওপর অমানুষিক শারিরীক র্নিযাতন জালিয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন ওই কারখানা থেকে পালিয়ে কিরগিজস্থানে ওয়াসিস নামে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ওয়াসিসের আশ্রয়ে আছেন।
বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, গত ২৫ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাইটস যশোরকে পাচারের শিকার ব্যক্তিরা বিষয়টি অবহিত করেছেন। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকার মেহেদী হাসান কিছুদিন আগে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। বাকি ৭ জন পাচারকারী চক্রের হাতে এখনো বন্দি অবস্থায় কারখানায় মাবেনতর জীবনযাপন করছেন। এই পরিস্থিতিতে বন্দি ও সেল্পর হোমে থাকা ১৩ নাগরিককে দ্রুত উদ্ধার করে বাংলাদেশে ফেরত আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।
কিরগিজস্থানে পাচারকারীদের হাতে বন্দি রয়েছেন কুমিল্লার চান্দিনার শরিফুল ইসলাম, মুরাদনগরের আলমগীর হোসেন, একই এলাকার দেলোয়ার হোসেন, আবু মুসা, জাহাঙ্গীর আলম, নরসিংদীর সামসুল ইসলাম ও চুয়াডাঙ্গার নুরুজ্জামান।
এছাড়া দেশটির ওয়াসিস শেল্টার হোমে রয়েছেন কুমিল্লার বুড়িচংয়ের আসাদুজ্জামান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সজল মিয়া, নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার আমির হামজা, কুমিল্লার মুরাদনগরের ওলিউল্লাহ, দেবিদ্বারের লিমন ও চুয়াডাঙ্গার বিপুল হোসেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্ট মেসার্স মক্কা মদিনা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (আর.এল নং-৮১০) ও মেসার্স আল লাবিন ইস্টাবলিশমেন্ট লিমিটেড (আর.এল নং ৮৮৪) ভিকটিমদের কিরগিজস্থানে পাঠিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে রাইটস যশোর ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইজিপি পুলিশ হেড কোয়ার্টার, তাসখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর, কিরগিজস্থানের কনসুলেটসহ সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসক ও পুলিশ সুপার দপ্তরে বিষয়টি উল্লেখ করে পত্র দেয়া হয়েছে।
এছাড়া কিশোরগঞ্জের সেনপুরের সজল মিয়ার মা ওয়াাহেদা খাতুন গত ১১ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাহমুদ হাসান মীর ও তার ভাই শাহীন মীরকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। দ্রত সময়ের মধ্যে পাচার হওয়ায় ব্যক্তিদের উদ্ধারে সরকারের আন্তরিক সহযোগিত কামনা করেছেন তিনি।