শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস, ভাঙল অতীতের সব রেকর্ড

সাইফুল আলম, বাংলাদেশ মেইল ::

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারনে দেশের শেয়ার বাজার বিপুল ধসের সম্মুখীন হয়েছে। গেল দশদিন ধরে দেশের শেয়ারবাজারে টানা পতন হচ্ছে। প্রতিদিনই সব ধরনের কোম্পানির শেয়ার দর হারাচ্ছে। দরপতন ঠেকাতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তবে ফল শূন্য।

রবিবারের এই বিপুল ধস বাংলাদেশের  বহু বিনিয়োগকারীকেই ২০০৮ সালের কথা মনে পরিয়ে দিচ্ছে৷ বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সে বছরও মার্কিন শেয়ার সূচক ধসে গিয়েছিল৷ দেশের বহু বিনিয়োগকারী সে সময় বিপুল পরিমাণ আর্থিক মন্দার সম্মুখিন হয়েছিলেন৷

গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে টানা পতনের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল রোববারেও পতনমুখী দেশের পুঁজিবাজার। পতনমুখী এ বাজারে এক দিনেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন নেই ছয় হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক ও লেনদেন কমেছে একই ধারাবাহিকতায়।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগের কার্যদিবসের তুলনায় গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন ছয় হাজার ৭০৬ কোটি টাকা কমে পাঁচ লাখ তিন হাজার ১৬৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গতকাল প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৫ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমে ছয় হাজার ১৪২ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে পৌঁছায়। ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচক ২১ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমে এক হাজার ৩৬১ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করে। অন্যদিকে ডিএস৩০ সূচক ৩৯ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭০ শতাংশ কমে দুই হাজার ২৭৭ দশমিক ১৬ পয়েন্টে স্থির হয়।

ডিএসইতে এদিন মোট ৩৭৯টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। দর বেড়েছে ২১টির এবং কমেছে ৩৪৫টির। বাকি ১৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয় ৬৮২ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬৬৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এ হিসাবে গতকাল লেনদেন বেড়েছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ডিএসইতে এদিন ২১ কোটি ৯৪ লাখ ১৫ হাজার ৩৭৯টি শেয়ার ১ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৫ বার হাতবদল হয়। গতকাল লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সূচকের পতনের চিত্র গেছে।

ডিএসইতে গতকাল টাকার অঙ্কে লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড। কোম্পানিটির ৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। শেয়ারটির দর ৭০ পয়সা বেড়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ৩৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারদর ৮০ পয়সা কমেছে। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০-এ থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেডের ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।

গতকাল ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এর পরের অবস্থানে থাকা সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং নাহি অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড কম্পোজিট প্যানেল লিমিটেডের ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ২১৭ দশমিক ০৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে ১০ হাজার ৮৪৭ দশমিক ৬১ পয়েন্টে এবং সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৬২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে ১৮ হাজার ৭৭ দশমিক ৭১ পয়েন্টে অবস্থান করে। সিএসইতে ২৭৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়েছে। দর বেড়েছে ১৭টির, কমেছে ২৪২টির এবং ১৭টির দর অপরিবর্তিত ছিল।

পুঁজিবাজারের এমন বেহাল অবস্থার কারনে কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যেই শেয়ার মার্কেটে তাদের পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এরা অতীতে রাজপথে অনেক আন্দোলন করেছে। অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে নিজেদের কপাল নিজেরাই পিটিয়েছে। অনেকে অঝোর ধারায় কেঁদেছে। কেউ কেউ আত্মহত্যাও করেছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রাক্‌–লেনদেনের সুযোগ বাতিল করেছে বিএসইসি। শেয়ারবাজারের গতকাল রোববার থেকে আর প্রাক্‌–লেনদেনের সুযোগ নেই। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) প্রাক্‌–লেনদেনব্যবস্থা বাতিল করেছে। গেল বৃহস্পতিবার এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে ।

শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর আগে ১৫ মিনিট প্রাক্‌–লেনদেনব্যবস্থা চলে আসছিল বেশ কিছুদিন ধরে। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে এ প্রাক্‌–লেনদেন শুরু হতো। ১০টায় মূল লেনদেন শুরুর আগপর্যন্ত সেটি চলত। প্রাক্‌–লেনদেনের সময় বিনিয়োগকারীরা তাঁদের পছন্দের দামে শেয়ারের ক্রয় বা বিক্রয়াদেশ দিতে পারতেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এসব ক্রয় বা বিক্রয়াদেশ কার্যকর হতো না। বরং এ ক্রয় বা বিক্রয়াদেশের ভিত্তিতে শেয়ারের দিনের প্রথম লেনদেন মূল্য নির্ধারিত হতো। বিএসইসির নতুন আদেশের ফলে গতকাল  রোববার থেকে এ ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে।

পুঁজিবাজারের ধ্বস ঠেকাতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ সুপারিশ করা হয়েছে।