কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদকে অগ্রাধিকার
সাড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে বিরাট বাজেট

বাংলাদেশ মেইল ::

বিরাট আকারের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ ন হ মোস্তাফা কামাল। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে দুপুর ১২টার কিছু পরে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেয়। এবারের বাজেটে আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন শুরু করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় তাঁর বাজেট বক্তৃতা শুরু হয়। এর আগে মন্ত্রিসভায় বাজেটে অনুমোদন হয়।

এটি তাঁর চতুর্থ বাজেট। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য তার বক্তব্যের নাম দিয়েছেন ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন’।

ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার এই প্রস্তাবিত বাজেট দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ১৯৭২ সালের প্রথম বাজেটের ৮৭ গুন বড় আকারের বাজেট উপস্থাপন করা হলো সংসদে৷

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানি বৃদ্ধি ও রপ্তানি বহুমুখীকরণ, কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থ বছরের এই প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। একই সাথে মুদ্রাষ্পৃতির লক্ষ্য  ৫.৫ শতাংশ।

এবারের বাজেটের আকার জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর–সংগৃহীত কর থেকে পাওয়া যাবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, এনবিআর–বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে, মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বাজেটে এ হার ছিল ৬ দশমিক ২। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে এ ঘাটতি মেটানো হবে বলে জানানো হয়েছে।

ঘাটতির মধ্যে অনুদানসহ বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা; আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, এর মধ্যে আবার ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী  বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি হচ্ছে আমাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত। বিগত কয়েক বছর ধরে কৃষিখাতের যে অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে তা আরও বেগবান করে অধিক খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে গবেষণা ও সম্প্রসারণ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন এবং সারে ভর্তুকি প্রদান চলমান থাকবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানি বৃদ্ধি ও রপ্তানি বহুমুখীকরণকে আমরা চতুর্থ অগ্রাধিকার প্রদান করেছি। বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পঞ্চম অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে কর্মসূজন ও পল্লী উন্নয়ন। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলা আমাদের অগ্রাধিকারের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

অর্থনীতিতে কোভিড-১৯-এর ধকল কাটতে না কাটতেই এল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব জিনিসের বাড়তি দাম। তাতেই তৈরি হয়েছে বাড়তি চাপ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্কিন ডলারের সংকট। ডলারের বিপরীতে কমছে টাকার মান। প্রবাসী আয়ও কমতির দিকে। সংকটময় এই পরিস্থিতিতে উপস্থাপন করা হয়েছে  নতুন বাজেট।