টায়ার জ্বালিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
ছাত্রলীগের কমিটি, বিক্ষোভে উত্তাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গিয়াস উদ্দিন, চবি ::

প্রায় তিনবছর পর চবি ছাত্রলীগের পুর্নাঙ্গ  কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অচল অবস্থার সৃস্টি হয়েছে। পদবঞ্চিতদের অবরোধের মুখে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গামী ট্রেন, ক্লাস ও বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা।

রবিবার মধ্যরাতে ঘোষিত পূর্নাঙ্গ   কমিটি পুনঃগঠনের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেয় পদবঞ্চিত ও বিক্ষোভকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সোমবার ভোর থেকে চবি গেটে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চবি ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আবু বকর চৌধুরী।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়গামী কোন ট্রেন শহর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যায়নি। শিক্ষার্থীরা জানান,  সোমবার সকালে (১ লা আগস্ট) একটি প্রাইভেট কারে করে তিন চারজন এসে ট্রেনের চালককে  তুলে নিয়ে যায় । এরপর থেকে ঝাউতলায় পড়ে আছে ট্রেনটি।

জানা গেছে, ট্রেনটি ঝাউতলা এলাকায় পৌঁছালে একটি সাদা প্রাইভেটকারে কয়েকজন যুবক এসে ট্রেনের গার্ড, এল এম, এ এল এমকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ট্রেনটিকে ঝাউতলা স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে ওই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে৷

সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ  এই কমিটিতে বিবাহিত ও অছাত্রদের মূল্যায়ন করা হলেও যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়নি। ফলে সকাল থেকে কোনো শিক্ষক – স্টাফ বাস শহর থেকে  ছেড়ে যায় নি ক্যাম্পাসে । বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল ফটকে তালা দিয়ে ছাত্রলীগের একাংশের  বিক্ষোভের কারনে  ক্লাস, পরীক্ষা, শাটল ট্রেন আপাততঃ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, অবরোধের কারণে আজ সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন ও শিক্ষক বাস। কয়েকটি বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শহীদুল ইসলাম  বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটির পদবঞ্চিতরা মূল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করছেন। শাটলের লোকোমাস্টার না থাকায় ট্রেন আসছে না। তাকে খুব সম্ভবত আটকে রেখেছে ছাত্রলীগের কেউ।’

‘মূল ফটক বন্ধ থাকায় শিক্ষক বাস শহরে যেতে পারেনি’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তাই শিক্ষকরাও ক্যাম্পাসে আসতে পারছেন না।’

তিন বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টায় ৩৭৬ সদস্যের এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে । কিন্তু ঘোষিত কমিটিতে পদবাণিজ্য ও অছাত্রদের রাখার অভিযোগে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের একাংশের নেতাকর্মীরা। রোববার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ বিক্ষোভ চলে। গতরাত সাড়ে ১১টার দিকে সিএফসির একাংশের কর্মীরা তালা খুলে নিলে আরেক উপ-পক্ষ ‘বিজয়’ গ্রুপের অনুসারীরা ভোররাত ১টার দিকে আবার মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।সোমবার ভোর থেকে দুই উপগ্রুপ আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য রবিবার রাতে এ কমিটির অনুমোদন দেন। এর আগে ২০১৯ সালে ১৪ জুলাই রেজাউল হককে সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

রোববার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে প্রায় শতাধিক নেতা–কর্মী বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা ‘অবৈধ কমিটি, মানিনা মানব না’ ও ‘টাকার বিনিময়ে কমিটি মানিনা মানব না’ বলে স্লোগান দেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শায়ন দাশ গুপ্ত  বলেন, যাঁরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে শুরু থেকে জড়িত ছিলেন তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে এ কমিটিতে বাহিরের অনেকেই পদ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি৷

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দুটি পক্ষে বিভক্ত৷ এক পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ও আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসাবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এই দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপগ্রুপ রয়েছে ৷