অভিযোগ উঠা 'এইচটিএমএস ' পাচ্ছে কাজ
চসিকের এলইডি প্রকল্পে ঝুলনের তেলেসমাতি কারবার

বাংলাদেশ মেইল ::

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০১৯ সালের ৯ জুলাই ‘মডার্নাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্ট এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’ শীর্ষক এলইডি বাতির সাহায্যে নগরীর ৪৬৬ কিলোমিটার সড়ক আলোকায়নের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় । ভারতীয় নমনীয় ঋনের আওতায় বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমারের বিরুদ্ধে। পিপিআর পরিবর্তনসহ নানা অভিযোগে এই প্রকল্পে পুনদরপত্র আহবানের সুপারিশও করেছিল চসিকের বিশেষজ্ঞ কমিটি। প্রকল্প পরিচালকের কুটকৌশলের কারণে বিশেষজ্ঞ কমিটির সেই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।

চসিকের সুত্রমত, ভারত থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় দেশটির ঋণ সহায়তার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দুই বছরের বেশি সময় নেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।ভারতীয় সহজ ঋণের আওতায় ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীতে এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ বর্তমানে কার্যাদেশ দেবার পর্যায়ে রয়েছে৷ শুরুতেই প্রকল্পটিতে নজিরবিহীন অনিয়মের অভিযোগে পুনঃদরপত্র আহবানের সুপারিশ করে বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেই সঙ্গে ঝুলন কুমার দাশকেও প্রকল্প পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

চুক্তি অনুযায়ী ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকায় প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে এলওসি-৩ (লাইন অব ক্রেডিট) এর আওতায় ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ অর্থের যোগান দিবে ভারত। ঋণ হিসেবে দেয়া এ অর্থের পরিমাণ ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুসারে ভারতের এক্সিম ব্যাংক তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শর্ট লিস্ট পাঠায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড’ ‘সিগনিফাই ইনোভেশন্স ইন্ডিয়া লিমিটেড’ এবং ‘শাপর্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’। একইভাবে বাংলাদেশের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয় প্রকল্পের জন্য। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ‘ট্রেড ম্যাজিস্টিক লিমিটেড’, ‘এইচটিএমএস লিমিটেড’ ও ‘ফটো স্টার লিমিটেড’। শর্ট লিস্টের প্রতিষ্ঠানগুলোয় দরপত্রে অংশ নেয়। বাছাই শেষে ভারতীয় একটি ও বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা হবে। যারা যৌথভাবে কাজ করবে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) উদ্যোগে চট্টগ্রাম শহরে এলইডি বাতি স্থাপনের ৪১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার  প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ার পরও একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এইচটিএমএস’ কে  নতুন করে এই প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেবার সব আয়োজন চূড়ান্ত  করেছেন চসিকের বিদ্যুৎ উপ-বিভাগের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ৷ এই প্রকল্পটির শুরুতেই পিপিআর নীতিমালা অনুসরন না করা, ব্যয় প্রাক্কলন কমিটি গঠন না, প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান অনুমোদন না নেবার মতো নজিরবিহীন অনিয়মের অভিযোগে চলতি বছরের ১১ ই মার্চ এই প্রকল্পের  পুনঃদরপত্র আহবানের সুপারিশ করেছিল বিশেষজ্ঞ কমিটি।

বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ৫ ই মে  প্রকল্পটির পুনঃদরপত্র আহবানের অনুমতি চেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল আলম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠিও দেন।  কিন্তু পুনঃদরপত্রের ব্যবস্থা না করে শর্ট লিস্টেট ভারতের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি প্রস্তাব নতুন করে ইভ্যালুয়েশন করার সিদ্ধান্ত জানায় মন্ত্রণালয়। তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব  ইভ্যালুয়েশন করার জন্য সাত সদস্যের কমিটিও করা হয়। এরআগের একটি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠা প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন প্রকল্পের কাজ নিয়ে দেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আকস্মিকভাবে ১ লা আগস্ট ইভ্যালুয়েশন কমিটির সভা ডাকেন প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ। সভার একদিন আগে ৩১ শে জুলাই এই সভার কথা জানানো হয় কমিটির সদস্যদেরকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাত সদস্যের ইভ্যালুয়েশন কমিটি তিনটি প্রতিষ্ঠানের উপস্থাপন করা নমুনা লাইট, যাবতীয় কাগজপত্র পুনঃমুল্যায়ন শুরু করেছেন ৷ এই কমিটি সাত সদস্য হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম,  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল আলম, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী  রফিকুল ইসলাম,স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি  জহিরুল ইসলাম (উপ সচিব), পিডব্লিউডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল হক , পানি উন্নয়ন বোর্ডের  নির্বাহী প্রকৌশলী মাইন উদ্দিন,  প্রকল্প পরিচালক  ঝুলন কুমার দাশ।

১ লা আগস্ট সকাল দশটায় চসিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মুল্যায়ন সভায় ভারতের তিনটি প্রতিষ্ঠান ও তাদের স্থানীয় তিনটি উপ ঠিকাদার এলইডি বাতির নমুনা উপস্থাপন করেন কমিটির সামনে। এলইডি বাতির নুমনা হিসেবে বিশ্ববাজারে সুপরিচিত পিলিপস ব্যান্ডের ‘ স্মার্ট এলইডি বাতি ‘ র প্রতিনিধিত্বকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিগনেফাই ইনোভেশন ইন্ডিয়া লিমিটেড নিজেদের প্রস্তাবিত এলইডি বাতি, অভিজ্ঞতার সনদসহ যাবতীয় কাগজপত্র কমিটির সামনে উপস্থাপন করেন।

এরআগে জাইকার এলইডি লাইট প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজ বাস্তবায়নে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠা প্রতিষ্ঠান ‘এইচটিএমএস ‘ ভারতীয় প্রতিষ্ঠান শাপর্জি পালনজি এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের উপ ঠিকাদার হিসেবে উপস্থাপন করেন মানহীন নন ব্রান্ড এলইডি লাইটের নমুনা। অন্যদিকে,  এনার্জি ইফিসিয়েনসি সার্ভিস লিমিটেডের স্থানীয় ঠিকাদার  ম্যাজিট্রিক লিমিটেড বাজাজ ব্রান্ডের এইইডি লাইট উপস্থাপন করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইভ্যালুয়েশন কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রাথমিকভাবে বাছাই করা দুটি প্রতিষ্ঠানের মানহীন লাইট নমুনা হিসেবে দেয়া, পিপিআর না মানা , একই ব্যক্তির মালিকানাধীন দুইটি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়ার কারণে বিশেষজ্ঞ  কমিটি পুনঃ দরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করেছিলেন।

অনুসন্ধানে জানা যায় স্থানীয় ঠিকাদার হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় জড়িত প্রকৌশলী মাহবুব হোসেন নামের একই ব্যক্তি। পূনদরপত্র আহবান করা হলে এই দুইটি প্রতিষ্ঠানই ঠিকবে না, এই কারণে স্থানীয় সরকান মন্ত্রণালয় থেকে পুনদরপত্র আহবান না করে ইভ্যালুয়েশনের মাধ্যমে স্মার্ট এলইডি প্রকল্পের  ঠিকাদার চুড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়৷ কমিটির সদস্যরা তিনটি প্রতিষ্ঠানের এলইডি লাইটের মান, মুল প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা, স্থানীয় ঠিকাদারের পূর্ব অভিজ্ঞতা এসব পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে নাম্বার প্রদান করেছেন। কমিটির তিন সদস্যের একজন ফিলিপস লাইটের ব্যান্ড ইমেজ, কোয়ালিটি, অভিজ্ঞতা বিবেচনায় ৯০ নাম্বার দিয়েছেন, আরেকজন ৯০, তৃতীয় জন দিয়েছে ৮০ নাম্বার। আর  প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশ সিগনেফাই ইনোভেশন ইন্ডিয়া লিমিটেড (ফিলিপস) নাম্বার দিয়েছেন একশোতে মাত্র ৪৭।  বাকি দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্য নন ব্রান্ড এলইডি লাইট উপস্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান ‘এইচটিএমএস’কে  তিনি ৯৭.৫ নাম্বার দিয়েছেন, অন্যটিকে দিয়েছেন  ৯২ নাম্বার (বাজাজ) । এখানেই পূর্বের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠা ‘এইটিএমএস’কে এই প্রকল্পের কাজ দেবার জন্য প্রকল্প পরিচালকের দূর্বলতা ও কূটকৌশল  স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে৷ ‘

অনুসন্ধানে জানা যায়, ৪১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা জাইকার এলইডি লাইট প্রকল্পে নিম্মমানের এইইডি লাইট ও ক্যাবেল ব্যবহারের অভিযোগ তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটি৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটিতে ব্যবহার করা এলইডি বাতি, ক্যাবেল ও পোলের মান আন্তর্জাতিক মানের মাত্র ২০ ভাগের একভাগ। কিন্তু জাইকার এই প্রকল্পে ব্যাপক জালিয়াতি ও অনিয়ম প্রমাণিত হলেও কোন ধরনের শাস্তিমূলক  ব্যবস্থা নেয়া হয় নি প্রকল্প পরিচালক ঝুলন কুমার দাশের বিরুদ্ধে। একারনে ভারতীয় সহজ ঋণের আওতায় ২৬০ কোটি টাকার বাস্তবায়নাধীন নতুন স্মার্ট এলইডি লাইট প্রকল্পটিতেও সরকারি ক্রয়বিধি অমান্য করেছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, এইচটিএমএস নামের প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন এই প্রকল্পে অংশ নেবার সুযোগ করে দিতে নীতিমালার পরিবর্তন আনা হয়৷  দরপত্রে অংশ নেবার যোগ্যতা হিসেবে একই ধরনের কোন প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ শেষ করেছে এমন অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়৷

এরআগে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অন্য একটি এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠার পর দুুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশে উঠা অভিযোগের তদন্তকাজ শেষ করে  চসিক। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহকারী দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ বিষয়টি প্রমাণিত হবার পরও দায়িদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

সুত্রমতে, জাইকার এলইডি লাইট প্রকল্পটি ছাড়া দেশে কোন এলইডি প্রকল্পের কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই এইচটিএমএস,’এর। তাই এইটিএমএস’কে দরপত্রে অংশ নেবার সুযোগ দিতে প্রি কোয়ালিফিকেশন হিসেবে চলমান কাজের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ করার অভিজ্ঞতা  চাওয়া হয়৷ এভাবে নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠান ‘এইচটিএমএস’ সুযোগ করে দিতে দরপত্রে অংশ নেবার যোগ্যতায় পরিবর্তন করেছেন প্রকল্প পরিচালক ঝুলন দাশ। এছাড়া ভারতীয় সহজ ঋনের আওতায় এই প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত শর্ত পরিবর্তনই শুধু করেন নি ; একই জাইকার প্রকল্পে মানহীন, ক্রটিপুর্ণ লাইট ও ক্যাবেল ব্যবহারের অভিযোগ উঠা সেই এইচটিএমএস’র পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তিনি৷

৮০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়া জাইকার প্রকল্পটি সম্পর্কে চসিকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী (আইইসি ৬০০৬০-১) ক্যাবলের ইনসুলেশন রেসিসটেন্স থাকতে হয়  ২ গিগাওম বা ২০০০ কিলোওম; কিন্তু জাইকার এলইডি বাতি প্রকল্পে যে ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে তার ইনসুলেশন রেসিসটেন্স পাওয়া গেছে মাত্র ১০০.৬ কিলোওম, যা আন্তর্জাতিক মানের মাত্র ২০ ভাগের এক ভাগ। চুয়েটের হাই ভোল্টেজ টেস্ট প্রতিবেদনেও দেখা যায়, স্থাপিত তারের বিভিন্ন স্থানে স্পার্ক সৃষ্টি হয়। মানহীন ক্যাবল ব্যবহারের কারণে সড়কের এসব এলইডি বাতিকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করা হয়েছে।

জাইকার এলইডি লাইট প্রকল্পের কাজ পেতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রকল্পে কাজ করা  অভিজ্ঞতা সনদ দিয়েছিলেন এইচটিএমএস। অনুসন্ধানে জানা যায় , সেই অভিজ্ঞতা সনদও আনা হয়েছে জালিয়াতির মাধ্যমে।

প্রতিবেদকের হাতে আসা অভিজ্ঞতার সনদে দেখা যায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একজন সহকারী প্রকৌশলীর স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী কোন কোন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে অভিজ্ঞতা সনদ দিয়ে থাকেন। মুলত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাজটি করেছিলো ‘ বাংলাদেশ ডগইয়ার্ড ‘। কিন্তু একজন সহকারী প্রকৌশলীর স্বাক্ষর করা অভিজ্ঞতার সনদ ইস্যু করা হয়েছে এইসটিএমএস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে। সেই জাল সনদ ব্যবহার করেই ভাগিয়ে নেয়া হয় জাইকার ৪১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এলইডি প্রকল্পের কাজ।

জাল সনদ, মানহীন লাইট, ক্যাবেল ব্যবহার করার অভিযোগ মাথায় নিয়ে জাইকার প্রকল্পটি পুরোপুরি শেষ করতে না পারলেও ভারত সরকারের নমনীয় ঋন সুবিধার নতুন প্রকল্পটির কাজ ভাগিয়ে নেবার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে ‘ এইচটিএমএস ‘ নামের একই  প্রতিষ্ঠান। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম প্রমানিত হবার কারণে প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দেবার সুপারিশ করেছেন তদন্ত কমিটি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রামের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট আকতার উল কবির বিষয়টিকে দূর্নীতি পৃষ্ঠপোষকতা হিসেবে মন্তব্য করে বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হবার পরেও ব্যবস্থা না নেবার কারণে একই প্রতিষ্ঠানকে নতুন প্রকল্পের কাজ দেবার মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাহাড়সম দূর্নীতি, সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা নতুন করে উন্মোচিত হলো। নন ব্র্যান্ডের মানহীন এলইডি ব্যবহার করে দূর্নীতির আলো ছড়ানোর পথে হাঁটছেন চসিক, এটি দুষ্টের তোষন । মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেউই দায় এড়াতে পারেন না। ‘

চসিকের সুত্রমতে, পুনদরপত্র আহ্বান করার সুপারিশ এড়িয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির নতুন করে মুল্যায়নের বিষয়টি লোক দেখানো । নন ব্যান্ডের এলইডি লাইট উপস্থাপনকারী, এলইডি লাইট প্রকল্পে নজিরবিহীন অনিয়মের মুকুট পড়া এইচটিএমএস’ কেই নতুন এই প্রকল্পের কাজের কার্যাদেশ দেয়ার বিষয়টি চুড়ান্ত।

তথ্যমতে, ‘মডার্নাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্ট এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয় ২০১৮ সালে।  ২০১৯ সালে জাতীয় একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ২৯২১ সালের জুন পর্যন্ত। তবে দরপত্র নিয়ে অনিয়মসহ প্রকল্পটির নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের সংশোধিত বাস্তবায়নকাল এক বছর বাড়িয়ে ধরা হয় জুন ২০২২ পর্যন্ত। এদিকে,  সেই মেয়াদও শেষ হওয়ায় নতুন করে আরো এক বছর সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে চসিক। বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি, দরপত্রে অনিয়ম, কালো তালিকাভুক্ত কোন প্রতিষ্ঠানকে উপ ঠিকাদার হিসেবে এই প্রকল্পে যুক্ত করা হলে অর্থায়ন করা ভারতীয়  প্রতিষ্ঠান  এক্সিম ব্যাংক তাদের নমনীয় ঋন সুবিধা সরিয়ে নিতে পারে বলে জানিয়েছেন কূটনৈতিক সুত্র।