পদে বসতে মরিয়া
কেরানীগঞ্জগন্জে আ.লীগে ফের সক্রিয় বিএনপির সন্ত্রাসী রানা মোল্লা

বাংলাদেশ মেইল :::

একসময়ে বিএনপির দূর্গখ্যাত কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিএনপির অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা সময়ের সাথে বেড়েছে। কমিটি গঠনের ঘোষণায় পদ পেতে নতুন করে সক্রিয় তারা। করছেন নানামুখী দৌড়ঝাঁপ।

ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ ( উত্তর) থানা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়া চুড়ান্ত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে কেরানীগঞ্জের ( দক্ষিণ) মডেল থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির মতো উত্তরের কমিটিতেও বিতর্কিত, বিএনপির থেকে অনুপ্রবেশকারীদের পদে রাখার ষড়যন্ত্র করছেন দলের কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতা।

এরআগে আহবায়ক কমিটিতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের ডালিমের ফুফাতো ভাই আরিফুর রহমান সেলিমকে সদস্য করা নিয়ে বিতর্কের সৃস্টি হয়। জানা গেছে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর ডালিমের গ্রামের বাড়িও কেরানীগঞ্জ থানার হযরতপুর গ্রামে। খুনি মেজর ডালিমের আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন কৌশলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে।

রাজধানী ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের অন্যতম আলোচিত নাম সোহেল রানা ওরফে রানা মোল্লা। একসময় বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা খোকনের সাথে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। কেরানীগঞ্জের জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ মোল্লার ছেলে রানা মোল্লা ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করতে গিয়ে হত্যা করেন মায়ের সাথে ভোট কেন্দ্রে আসা শিশু শুভ কাজীকে। আওয়ামীলীগের রাজনীতি থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কৃত হলেও ঘরের বিবাদের সুযোগে এখন তাকেই কেরানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের (উত্তর) কমিটিতে পদায়ন করার প্রক্রিয়া চলছে।

এ বিষয়ে জানতে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি  ইউসুফ আলী সেলিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘ মেজর ডালিমের ফুফাতো ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন ; বিষয়টি সঠিক নয়। তবে রানা মোল্লা স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত। রাজনৈতিক নেতাদের অনেক মামলা থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। রানা মোল্লার সাথে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের সম্পর্ক রয়েছে কিংবা বাহিনী রয়েছে এমন কোন অভিযোগ কখনো পাই নি। ‘

কেরানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের আশির দশকে নেতৃত্ব দেয়া এই নেতা বলেন, রানা মোল্লা বাহিনী সম্পর্কে  গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হতে পারে, তবে সত্যতা নির্ভর করে আদালতে প্রমাণের পর। একথা সত্য দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে থেকে পুনরায় অনেকেই দল ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।

জানা যায়,  রানা মোল্লার বিরুদ্ধে হত্যা, নারী নির্যাতনসহ বেশ কিছু মামলা রয়েছে। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হওয়া  টেন্ডার মাফিয়া জি কে শামিম, বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ, কৃষকলীগ নেতা ফিরোজ ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পুলিশের জিজ্ঞেসাবাদে একাধিকবার রানা মোল্লা বাহিনীর নাম উঠে আসে।

একাধিক সুত্রমতে, বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের হাত ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন রানা। শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইনের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিতি রয়েছে রানা মোল্লার। ল্যাংড়া রানা মোল্লা হিসেবে বেশ নাম ডাক আছে তার।

এসব বিষয়ে জানতে কেরানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের  সহ সভাপতি  বারকু বলেন, ‘ রানা মোল্লার বিষয়ে দলের সভাপতিকে জিজ্ঞেস করেন, সাধারন সম্পাদককে জিজ্ঞেস করেন। আমি কিছুই বলবো না। ‘

ল্যাংড়া রানা মোল্লা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা মুখ খুলতে রাজি না হলেও এলাকায় খবর নিয়ে জানা যায় কেরানীগঞ্জের বালির মহাল, টেন্ডার, চাঁদাবাজির সাথে তার সম্পৃক্ততা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে রানা মোল্লার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায় নি। তবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ জানান, বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারী কোন ব্যক্তিকে দলের পদে না আনার বিষয়ে কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে।

এদিকে, বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক রানা মোল্লা বাহিনীর দৌরাত্ম্যের খবর প্রকাশিত হবার পরও তাকে নিজেদের শিবিরে রেখে বাহুশক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ। এই বিষয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে তৃণমূলে।

সুত্রমতে, সামনের জাতীয় নির্বাচনে রানা মোল্লার বাহিনীর সহযোগিতা পেতে আওয়ামী লীগের বেশ’কজন নেতা তাকে শেল্ডার দিচ্ছেন।