অপার সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন
টানেলের যুগে বাংলাদেশ

টানেলের

আফরিন আফসার 

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে  নির্মিত টানেলের চুরানব্বই শতাংশ  কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর গভীরে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে যা ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। শনিবার প্রথম টিউবের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে টানেল যুগে পা রাখবে বাংলাদেশ। এই টিউবটির পূর্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২৬ নভেম্বর)  দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি ঘটবে।

দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা   উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকা থেকে আসা এক দল সাংবাদিক বিশাল এ কর্মযজ্ঞ সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেন।

আগামী বছরের জানুয়ারিতে এটি খুলে দেওয়া হবে যান চলাচলের জন্য। কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত এই টানেল দিয়ে বছরে চলবে ৬৩ লাখ গাড়ি। চট্টগ্রাম বন্দর ও আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্তকারী কর্ণফুলী টানেল বন্দর নগরীর দক্ষিণাঞ্চলকে যেমন একটি ব্যবসায়ীক কেন্দ্রে পরিণত করবে, তেমনি দূরত্ব কমাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে। চালু হওয়ার পর প্রবৃদ্ধির একটি আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করবে এই টানেল।টানেলের উভয়প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোড ও ফ্লাইওভারের কাজও প্রায় শেষ। শিগগিরই  টানেলটি চালুর লক্ষমাত্রা সামনে রেখে কাজ করছে টানেল কর্তৃপক্ষ।এই টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে কর্ণফূলীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠছে বড় বড় শিল্প কারখানা। এই টানেলকে ঘিরে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে উন্মোচন করতে যাচ্ছে ব্যবসার নতুন দিগন্ত।

বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজের সাথে সাথে  নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপিত হচ্ছে ; বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ করছে নতুন বিনিয়োগ। আবার পুরনো অনেক কারখানাও সম্প্রসারিত হচ্ছে। অনেক বড় বড় শিল্প গ্রপ ইতোমধ্যেই কারখানা গড়ে তোলার চিন্তা থেকে কিনে রেখেছেন  জমি। সব মিলিয়ে কর্ণফুলী টানেল বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক  ল্যান্ডস্কেপে আনছে বড় ধরনের পরিবর্তন। বিশ্লেষকদের মতে দক্ষিণ চট্টগ্রাম হয়ে উঠবে দেশের নতুন বিজনেস হাব।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত চার বছরে কর্ণফূলীর দক্ষিণ পাড়ে গার্মেন্টস, জাহাজ নির্মাণ, ভোজ্যতেল, মাছ প্রক্রিয়াকরণ, ইস্পাত, সিমেন্টসহ অন্তত ৮০টি শিল্প কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনও শুরু করেছে। শুধুমাত্র ‘মোস্তাফা হাকিম গ্রুপ ‘ নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বিনিয়োগ করেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের প্রথম এই টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে মোট চারটি লেন থাকছে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকবে। আর আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসেতু। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ। টানেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেলটি ঢাকা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব ও চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার কমাবে। চট্টগ্রাম মহানগরী এড়িয়ে মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সারা দেশের সড়কপথে যোগাযোগ সহজ করে তুলবে।নদীর দক্ষিণ পারবাসীর জন্য সহজ হবে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার। বঙ্গবন্ধু  টানেল দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। পদ্মা সেতুর পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন বছরের (২০২৩ সাল) প্রথম চমক হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। চট্টগ্রামবাসীর সাথে সাথে সারাদেশের মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন এই টানেল চালু হওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য।