হাজার কোটি টাকা উপার্জন
চিটাগাং কো অপারেটিভ  হাউজিং সোসাইটির সাবেক সা. সম্পাদক শাহজাহানকে দুদকে তলব

::: বাংলাদেশ মেইল :::

চিটাগাং কো অপারেটিভ  হাউজিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে উঠা দূর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুদক। গেল ৬ই এপ্রিল চট্টগ্রাম  দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এমরান হোসেন এক সপ্তাহের মধ্যে  সমিতির বিভিন্ন  নথি উপস্থাপনের জন্য মোহাম্মদ শাহজাহানকে চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে সমিতির খুলশী হাউজিং প্রকল্পে অস্বাভাবিক কম মুল্যে প্লট ( ৪ নং সড়কের ১০৪/সি প্লট) বরাদ্দ দেয়া , চিটাগাং  কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সদস্য অন্তভূক্তিকরনে জালিয়াতি, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সংক্রান্ত নথি উপস্থাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

মঙ্গলবার  সকাল দশটায়  দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে হাজির হয়ে  তিনি তদন্ত কর্মকর্তা এমরান হোসেনের কাছে নথি জমা না দিয়ে আবারও সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন। দুদক কার্যালয়ের সুত্রমতে,  দুদক তার সময় বৃদ্ধির আবেদন পত্রটি গ্রহন করেনি।

জানা যায়,  চিটাগং  কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সাবেক এই সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি সমিতির মালিকানাধীন একটি সাত কোটি টাকা মুল্যের  প্লট মাত্র ৫৭ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন জনৈক মিজানুর রহমানের কাছে । খুলশীর ৪ নং সড়কের ১০৪/সি’র ৭.১৮ কাটার প্লটটি সমিতির সদস্য সিতারা বেগমের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সমিতির সাধারণ সম্পাদক একই প্লটের পাঁচ কাঠা জমি পুনরায় অনিয়মের মাধ্যমে  মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে বরাদ্ধ দেন।

সমিতির শেয়ার কেলেঙ্কারি, সদস্য অন্তর্ভুক্তির জাল কাগজ তৈরি, ব্যাংক ও সমবায় কর্মকর্তার যোগসাজশে সমিতির টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সমিতিকে ব্যবহার করে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ উপার্জনের  নানা  অভিযোগ করেছেন সমিতির সদস্যরা । এছাড়া জাল কাগজ তৈরি করে বড়দীঘীর পাড় এলাকায় মায়া রানী নামের এক হিন্দু নারীর জমি আত্নসাৎ করার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।

আদালতের নথি অনুযায়ী  , চিটাগাং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান মায়া রানীর কাছ থেকে ১৭ শতক জমি কিনেন। নথি অনুযায়ী তার বয়স ৩৯ বছর, জন্ম ১৯৮১ সালের ১৫ জুন। আসল মায়া রানীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকলেও নকল মায়া রানীর সেটি নেই। ফলে এনআইডি ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে জাল দলিল। এসব অভিযোগে চট্টগ্রাম তৃতীয় বিচারিক হাকিম আদালতে শাহজাহানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন মৃত মায়া রানীর পুত্র কাজল মহাজন। তার বাড়ি হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ।

দুদকের সহকারী পরিচালক এমরান হোসেন সেই চিঠিতে চিটাগাং কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির  গঠনতন্ত্র, শেয়ার ক্রয় ও হস্তান্তর নীতিমালা,  ভূমি অধিগ্রহন,  বরাদ্ধকরন নীতিমালা জমা দেবার নির্দেশনা দেন সমিতির  সাবেক সাধারণ সম্পাদককে। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চিটাগাং কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির অডিট রিপোর্ট,  মোহাম্মদ শাহজাহান ও তার স্ত্রী নাসরিন সুলতানার নামে সমিতির ক্রয়কৃত শেয়ার ও শেয়ার হস্তান্তরের নথি তবল করা হয়। বড় দীঘির পাড়স্থ খিল্লা পাড়ায় সমিতির চতুর্থ প্রকল্পে মোট অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমান, বরাদ্দ গ্রহীতাদের নাম, সদস্যদের নামসহ সংশ্লিষ্ট নথিও চাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেসব নথি জমা না দিয়ে নিজের স্ত্রী ও তার জাতীয় পরিচয় পত্রের ছায়াকপি জমা দিয়ে দুদক কার্যালয় থেকে সটকে পড়েন তিনি।

দুদকের উপ পরিচালক নাজমুস সাদাত জানান, চিটাগাং কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির  সাবেক সাধারণ সম্পাদকের কাছে নথি চাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে তিনি নথিপত্র  জমা দেন নি। পুনরায় সময় চেয়েছেন। তবে নথি উপস্থাপনের জন্য দুদক তাকে পুনরায়  সময় দেয় নি। ‘

দুদকের কাছে চিটাগাং কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির অডিটসহ প্রয়োজনীয়  ‘নথি উপস্থাপন’ না কারণ জানতে মোহাম্মদ শাহজাহানের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেন নি। মঙ্গলবার দুপুরে  নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে অবস্থিত সমিতির কার্যালয়ে গিয়েও কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় নি।

প্রসঙ্গত, ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত  চিটাগাং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির অধীনে নাসিরাবাদ হাউজিং,খুলশী, রোজ ভ্যালিসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। এই সোসাইটির সদস্যদের জন্য নতুন আবাসন প্রকল্পও নেয়া হয়েছে । ঐতিহ্যবাহী এই সমবায় সমিতির পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। গত বছরের ৪ নভেম্বর এই সোসাইটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিবর্তে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক নির্বাচনী নোটিশ প্রকাশ ও প্রচার, পত্রিকায় নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের একই দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে৷ অভিযোগ উঠেছে চিটাগাং কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান সমিতিকে ব্যবহার করে হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন।