বাংলাদেশ মেইল :::
অ্যাভোকাডো। পৃথিবীতে পুষ্টিকর ফলগুলোর মধ্যে অ্যাভোকাডো অন্যতম । কারণ এই ফলটিতে আছে নানা ঔষধি গুণও। অ্যাভোকাডো বৈজ্ঞানিক নাম Persea americana। মধ্য আমেরিকার স্থানীয় উদ্ভিদ থেকে জন্ম নেয়া অ্যাভাকাডো ফলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখা যায় ইউরোপ এবং আমেরিকায়। ফলটির খোসা কুমিরের গায়ের মত অমসৃণ হওয়ায় এটা কুমির নাশপাতি হিসেবেও পরিচিত। অ্যাভোকাডো এক ধরনের সবুজ রং বিশিষ্ট পুষ্টিকর ফল। এটি দেখতে বড় আকারের লম্বাটে পেয়ারার মতো। একেকটি ফলের ওজন প্রায় ২৫০ থেকে ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোতে দেশীয় ফল হিসেবে চাষ করা হয় ও এই অঞ্চলে বেশি জন্মায়।
লরেসি পরিবারের এই সপুষ্পক উদ্ভিদ এবং অ্যাভোকাডো ফল সম্পর্কে দেশের কৃষিবিদদের গবেষণা শুরু হয় ২০১০ সালের পর। ২০১৪ সালেও বাংলাদেশে অ্যাভোকাডোর গাছ ছিলো মাত্র ৮-১০টি।
জানা যায়, যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে আসার সময় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ২০১০ সালের দিকে অ্যাভাকাডো ফল ল্যাগেজে করে দেশে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক অ্যাভোকাডো চাষ তখন পুরোটাই স্বপ্ন। ২০১১ সালে লন্ডনের সুপারশপ টেসকো থেকে ফলটির বীজ সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসেন ওয়াহিদ জামান নামের এক বিলেত প্রবাসী শিক্ষার্থী। সেই ফলের বীজ পৌঁছে কৃষি অধিদপ্তরে।
ওয়াহিদ জামান বলেন, আমরা লন্ডনে এই ফল খেতাম পুষ্টিকর বলে। অ্যাভোকাডো সোডিয়াম, সুগার ও কোলস্টেরল মুক্ত রাখে। এ ফলটি অতি ক্যালোরি সমৃদ্ধ। এতে দেহের জন্য উপকারী ফ্যাট যথেষ্ট রয়েছে, হার্টকে সুস্থ রাখে, ক্যান্সার ও কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। চর্বিতে গলে যায় এমন পুষ্টি উপাদন (A, D, K, E) প্রচুর রয়েছে, যা দেহকে সুস্থ রাখতে বুস্টার হিসেবে কাজ করে।সাউথ বৃটেনের কৃষিফার্মে গিয়ে মনে হলো ইজরায়েলের মতো দেশে উচ্চ তাপমাত্রায় এই ফলের চাষ হলে বাংলাদেশেও এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ সম্ভব। কৌতুহল ছিলো, সেই স্বপ্ন দেশের কৃষি খামারীরাই বাস্তবে রুপ দেন। ‘
মাগুরার হর্টিকালচার সেন্টারে উদ্যানত্ত্ববিদ ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান এ টাইপ ও বি টাইপের দুটি চারা ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে এনে ২০১৪ সালে রোপণ করেন। এর আট বছর পর ২০২০ সালের দিকে বাংলাদেশে আবাদের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান রেসের অ্যাভোকাডো চাষের বীজ আমদানি শুরু হয়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণার সাবেক মহাপরিচালক এনামুল হক বিদেশি ব্যয়বহুল অ্যাভোকাডোর চারা দেশে এনে কৃষি খামারিদের উদ্বুদ্ধ করেন।ফলটির বাণিজ্যিক চাষাবাদ সম্পর্কে গবেষণা করেন বেশ কয়েকজন কৃষিবিদ। অ্যাভোকাডোর বাণিজ্যিক খামারে সফলতা আসে ২০২২ সালে।
ঝিনাইদহের হারুন অর রশিদ মুছা নামে এক স্কুলশিক্ষক বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি এ ফলের চাষ করে বেশ লাভবান হন। যা দেখে এখন আশপাশের কৃষকেরাও ঝুঁকে পড়েন। হারুন অর রশিদ মুছা ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি স্থানীয় কাগমারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় বিষয়ের শিক্ষক।
২০২১ ও ২০২২ সাল, দুই বছর ধরে তার গাছে অ্যাভোকাডো ধরছে। জানা যায় তার বাগানে প্রায় ২৫০ অ্যাভোকাডো গাছ রয়েছে। যার বেশির ভাগেই ফল এসেছে। এবার তিনি প্রতি কেজি ৮০০ টাকা দরে ফল বিক্রি করছেন। এই ফল বিদেশে মিশন থেকে ফিরে আসা সেনা সদস্যরা ছাড়াও ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার ফল ব্যবসায়ীরা অনলাইনে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
যশোরের শার্শা উপজেলার বাসিন্দা মালেক হর্টিকালচার থেকে বীজ এনে ১০ শতক জমিতে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় এই ফলের চাষ শুরু করেন । সাধারনত এই ফল যুক্তরাষ্ট্র ম্যাক্সিকো ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে বেশি উৎপাদিত হয়। পুষ্টিগুন ও চাহিদা থাকায় এ ফল বিক্রিও হয় চড়া দামে। ফুল ও ফলে ভরে গেছে ক্ষেত। অধিক লাভের আশায় বুক বেঁধে অ্যাভোকাডো চাষে মনোযোগ দেন কৃষক আব্দুল মালেক।
কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, আমি অনলাইনের মাধ্যমে এই ফলের চাষ দেখতে পাই। তারপর সাভার হর্টিকালচার থেকে ৩ বছর আগে বীজ এনে ১০ শতক জমিতে শুরু করি পৃথিবীর অন্যতম পুষ্টিগুনে ভরা এই ফল। সাধারনত কলম চারা থেকে ফল ধরতে ৩-৫ বছর সময় লাগে। আর বীজ থেকে প্রায় ৬-৮ বছর সময় লাগে। আমি ফলের পাশাপাশি এই ফলের চারাও বিক্রি করছি।
বেড়ে চলা চাহিদার কারণে এই ফলে রপ্তানি বাজার বেশ আকর্ষণীয়৷ শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মাথাপিছু অ্যাভাকোডার চাহিদা বেড়েছে ৪০৬ শতাংশ৷ আফ্রিকাতেও অ্যাভোকাডো চাষ দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে৷
এ বিষয়ে কৃষিবিদ ড. রুস্তম আলী বলেন, ‘ বাংলাদেশের আবহাওয়া এই ফলটির উৎপাদনে এতটাই উপযোগি যে, আমের চেয়ে ফলন বেশি হবে অ্যাভোকাডো’র। কৃষকরা এটি চাষের মাধ্যমে সহজেই মুনাফা অর্জন করতে পারবে। ‘