তানভীর আহমেদ ::
বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফুটার সাথে সাথে নগরবাসীর ঘুম ভেঙেছে নাতে রাসুলের (সাঃ) সুমধুর সুরে। আশপাশের উপজেলা থেকে সুসজ্জিত ট্রাকে করে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করেছে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ। পবিত্র ঈদে মিলাদুন নবী (সাঃ), বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ইসলামের জন্মদিন। ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুসে অংশ নিতে চট্টগ্রাম নগরী ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ ভীড় করেছে ষোলশহর সুন্নীয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে।
আঞ্জুমানে রহমানিয়া সুন্নীয়া সংগঠনের উদ্যোগে ৫১ তম জশনে জুলুস এটি। লাখো লাখো রাসূল প্রেমিকের অংশগ্রহণে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স:) উপলক্ষে বর্ণাঢ্য জশনে জুলুস শুরু হয় সকাল আটটায়।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টায় চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে বিশাল জশনে জুলুস শুরু হয়। জশনে জুলুসের নেতৃত্ব দেন পাকিস্তান থেকে আগত আল্লামা সাবির শাহ (সাঃ) । আল্লামা কাসেম শাহসহ আঞ্জুমানের নেতৃবৃন্দ জশনে জুলুসে অংশগ্রহন করেন।
জুলুসের পূর্বে সাংবাদিকদের সাথে একমত বিনিময় কালে আল্লামা সাবির শাহ বলেন,
” আজ সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের খুশির দিন । এই দিনে মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে এসেছিলেন । মহানবী (স:) এই পৃথিবীতে শান্তি, সাম্য ও মানবতার প্রচার করে গেছেন । তার অনুসারী হিসেবে আজ আমরা মুসলিম মিল্লাতে ইসলামের প্রচার এবং প্রসারে এবং সুন্নীয়তের আকীদা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছি” ।
লাখো লাখো জনতার এই জুলুস সুন্নীয় মাদ্রাসার মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষণ করে পুনরায় জোহরের সময় সুন্নিয়া মাদ্রাসার মাঠ প্রাঙ্গনে যোহরের নামাজ আদায়ের পর মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় । জুলুস নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ এর সময় রাস্তা দুই পাশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ জুলুসে আগত নবীপ্রেমিকদের সালাম জানান । এ সময় জুলুসে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন সংগঠন শরবত, আপেল, কলা, বিরানি , চকলেট সহ নানা রকম খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে দেখা যায় । জুলুসে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিরা নবীর প্রতি দরুদ ও সালাম প্রদর্শন করেন ।
আঞ্জুমান সূত্রে এবং জুলুসে আগত মুসল্লিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ” আজকের জুলুসে প্রায় ৭০ লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছে। গিনিস বুকে এই জুলুস ঠাই করে নেবে” ।
সরজমিনে দেখা গেছে ভোর থেকেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের রাউজান ,রাঙ্গুনিয়া হাটহাজারী ,ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, কর্ণফুলী, আনোয়ারা বাঁশখালী চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, চকরিয়া থেকে ট্রাক বাস পিকআপে করে হাজার হাজার নবীপ্রেমী জনতা জুলুসে যোগদানের জন্য সুন্নিয়া মাদ্রাসার মাঠ প্রাঙ্গনে এবং তৎসংলগ্ন বিশাল এলাকায় জড়ো হতে থাকে।
রাউজান থেকে জুলুশে আগত ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন ” আমি ছাত্র জীবন থেকে জুলুশে আসতাম। এখন ৬৫ বছর বয়সেও জুলুশে এসেছি নবীর প্রতি সালাম জানাতে। দূরে সে আসলে মনের মধ্যে অন্যরকম প্রশান্তির সৃষ্টি হয় এবং বছরের বাকি সময় গুলো আমার খুবই ভালো যায়। ”
আনোয়ারা থেকে আগত কলেজ ছাত্র রিপন বলেন ,
” বাপ -দাদার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবং একজন নবী প্রেমিক সুন্নি হিসেবে জুলুসে এসেছি সম্মিলিতভাবে নবীর প্রতি দুরুদ ও সালাম জানাতে ।
জুলুস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সমগ্র চট্টগ্রামে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে । জুলুসের আগে এবং পিছনে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো ।