আমিনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে
    দূর্নীতি আড়ালের চেস্টা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের

    বাংলাদেশ মেইলঃ কে এন-৯৫ মাস্ক, পিপিই ক্রয়ে সাম্প্রতিক জালিয়াতিতে  ঔষধ প্রশাসনের  বিভিন্ন কর্মকর্তা দূর্নীতির আশ্রয় নিলেও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বেঁচে যাবার চেস্টা করছে একটি চক্র। সরকারী ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী কার্যাদেশ দেয়ার আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সনদ যাচাই করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গত ১৮ মে মেসার্স এলান কর্পোরেশনের অনুকূলে দেয়া একটি কার্যাদেশের ক্ষেত্রে সরবরাহকারী বা উৎপাদনকারির দেয়া সনদ যাচাই না করেই অনাপত্তিপত্র দেয়া হয়।

    অধিদপ্তরের দেয়া অনাপত্তিপত্রের ভিত্তিতেই  এলান কর্পোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান কেএন-৯৫ মাস্ক বিদেশ থেকে আমদানী করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে সরবরাহ  করার কার্যাদেশ পায়।  শর্তানুসারে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশী উৎপাদনকারীর সরবরাহকৃত Free sale,  ISO 13485 certificate, সার্টিফিকেট অব এনালাইসিস ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দেন।  কিন্তু বিদেশি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পাঠানো কাগজপত্র যাচাই না করেই   একই দিনে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে আমদানীর পূর্বনুমোদন বা আমদানীর জন্য অনাপত্তিসূচক সনদপত্র প্রদান করে।

    নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে প্রতিষ্ঠানটি মালিক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলাও করা হয় তড়িগড়ি করে। নিম্নমানের ৫০ হাজার কেএন-৯৫ মাস্ক আমদানি করতে গিয়ে প্রতারণা ও ভুয়া কাগজ ব্যবহারের অভিযোগে মহাখালী ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম বাদি হয়ে এলান কর্পোরেশনের আমিনুল ইসলাম আমিনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। গত ২৯ মে রাজধানীর বনানী থানায় ৪৬৮, ৪৭১ ও ১৯৮ ধারার মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।

    এলান করপোরেশনের লাইসেন্স ব্যবহার করে এসব মাস্কের আমদানিকারক ঢাকার হাজারীবাগের তাজুল ইসলাম ও তার গাড়িচালকের বিরুদ্ধেও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে পুলিশ।

    ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমীন  প্রতিবেদককে বলেন, দুটি মামলা হয়েছে। একটি হয়েছে বনানী থানায়। আরেকটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায়।

    মামলার অভিযোগে বলা হয়  ফ্রি সেল সাটিফিকেট যা কেএন -৯৫ মাস্ক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিজেই ইসু করেছে। প্রকৃতপক্ষে  ড্রাগ রেগুরেটরি এসব সার্টিফিকেট ইস্যু করে থাকে।

    কিন্তু ওষধপ্রশাসন অধিদপ্তর বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা সনদ কেন যাচাই করেনি এমন প্রশ্নের কোন উত্তর নেই দপ্তরটির কর্মকর্তাদের।

    নীতিমালা অনুযায়ী সনদ যাচাইয়ের দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের হলেও এলান কর্পোরেশনের বিরোদ্ধে মামলা করে দায় এড়ানো চেস্টা করেছে দপ্তরটি।

    জানতে চাইলে এনাল কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী  আমিনুল ইসলাম জানান,  প্রতিষ্টানটি তার হলেও জনৈক তাজুল ইসলাম একটি চুক্তির মাধ্যমে তার লাইসেন্স ব্যবহার করেছে।

    আমিনুল ইসলাম বলেন, ২৫ মার্চ সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী  এলান কর্পোরেশনের লাইসেন্স একাজে ব্যবহৃত হয়। তাজুল ইসলাম আমার পরিচিত হলেও এ কাজের কার্যাদেশ প্রাপ্তি কিংবা আমদানী, সরবরাহ কোন অংশেই আমার সংশ্লিষ্টতা ছিলো না।  চুক্তিতে স্পস্ট করে লেখা আছে এই কাজের কোন দায় দায়িত্ব আমার উপর বর্তাবে না ‘।

    এনাল কর্পোরেশনের নামে কার্যাদেশ  দেয়া, দিনে দিনে যাচাই বাচাই না করে আমদানীর অনাপত্তিপত্র দেয়া ওষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গাফিলতির পরিচয়। তাছাড়া Free sale,  ISO 13485 certificate, সার্টিফিকেট অব এনালাইসিস এসব সনদ স্বাভাবিকভাবেই আমদানীকারকের কাছে বিদেশী সরবরাহকারী দিয়েছে। আমদানি কারক এসব সার্টিফিকেট জাল করে উপস্থাপন না করলেও তদারকিতে অস্বচ্চতা আড়াল করতেই আমদানি কারকের বিরোদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা।

    মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার আকতার হোসেনের কাছে পুরো প্রক্রিয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, প্রয়োজনীয় সনদ আসলে বিদেশী সরবরাহকারী প্রদান করে থাকেন। এক্ষেত্রে আমদানীকারক অনেক সময় প্রতারিত হন যদি জাল সনদ প্রদান করে। তবে সরকারী ক্রয়ের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট  ঠিক আছে কিনা যাচাই করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দফতরের। এছাড়া স্যাম্পল প্লেসমেন্টসহ বেশ কিছু দাপ রয়েছে। কিন্তু কোন কিছু যাচাই না করে আমদানীর পূর্বানুমতি প্রদানের দায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উপর বর্তায়৷ ‘

    চট্টগ্রামের একটি সুনামধন্য  ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওষধ প্রশাসন  অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব আমরা প্রতিটি ধাপেই টের পাই। অরগানোগ্রাম অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টন করা হয়না।  তেমনিভাবে তদারকি করা হয় না।  কার্যক্রমের প্রতিটি পর্যায়ে যোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতি করা হচ্ছে। তিনি বলেন,  ওষুধের ফয়েল, ইনসার্ট, লেবেল, মোড়ক, ব্লকলিস্ট ও লিটারেচার অনুমোদন, ওষুধের দোকান তদারকি ও পরিদর্শনে কর্মকর্তারা ব্যাপক আর্থিক লেনদেন করেন, এটা সবাই জানে।

    সাম্প্রতিকসময়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দূর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের বড় ধরনের অনিয়ম আড়াল করতে এলান কর্পোরেশনের বিরোদ্ধে মামলার বিষয়টি মিডিয়ার কাছে ছেড়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

    ওষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন,  Free sale,  ISO 13485 certificate, সার্টিফিকেট অব এনালাইসিস এসব যাচাই বাছাই তদারকির দায়িত্ব দপ্তরটি কখনোই করে না। ৫০ হাজার এন৯৫ মাস্ক তো কিছুই না। এই লাইসেন্স হয়তো আনিনুল ইসলামের সেজন্যই এতো প্রচারনা।   ভেতরের খবর নেন। ‘

    নিম্মমানের মাস্ক সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নামে। তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ তথ্য। জেএমআই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক। বাড়ি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের ১৮ তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজাজ্জাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্মুখ সারির নেতা ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি মাস্টার্স পাশ করেন। পরের বছর ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন জেএমআই নামে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে জেএমআই গ্রুপের অফিস রাজধানীর ১১৭ কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের ইউনিক হাইটসে। আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে জামায়াতের অন্যতম অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত।

    মুলত,  জেএমআই গ্রুপের অনিয়ম ও দূর্নীতি আড়াল করতেই একটি চক্র ফাঁসানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা  আমিনুল ইসলাম আমিনকে ।

    অনুসন্ধানে জানা যায় আমিনের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সংসদীয় আসনে হবার কারনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি অনুপ্রবেশকারী পক্ষ তার বিরোদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে মামলা করানোর উদ্দ্যেগ নেন। উল্লেখ্য সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসনের বর্তমান এমপি আবু রেজা নদবী। যিনি রাজনৈতিকভাবে যেমন জামায়াতে ইসলামীর সাথে সখ্যতা রেখে চলেন। তেমনিভাবে তার শ্বশুরও জেলা জামায়তের আমির ছিলেন। নদবী নিজেও একসময় জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। সুত্র বলছে, মাস্ক নিয়ে জেএমআই গ্রুপের দূর্নীতি ধামাচাপা দিতেই আমিনুল ইসলাম আমিনের বিষয় সামনে এনেছে ঔষধ প্রশাসনের এক চক্র।

    স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কমিটি মাস্ক পিপিই কেলেঙ্কারি জন্য কেন্দ্রীয় ঔষধাগার সিএমএসডির সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাকে অভিযুক্ত করেন। এরপর তাকে বদলি করা হয়। বদলির পর জেএমআই গ্রুপের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেনি বলে অভিযোগ করেছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লা। তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় সিন্ডিকেটের স্বার্থ বাস্তবায়ন না করার কারণে তাকে সরানো হয়েছে’।