আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩ লাখে
    এমআরসি’র প্রতিবেদনে প্রতিদিন ৭০০ মৃত্যুের আশংকা করছেন গবেষকেরা

    আফরিন আফসার মাহী ::  

    করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বাংলাদেশে প্রতিদিন ৭শ মৃত্যুর আশংকা করে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷  বাংলাদেশে মে মাস পর্যন্ত সংক্রমণ, মৃত্যু ও ‘আর’ নটের উপর ভিত্তি করে মঙ্গলবার এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশন ডিজিজ এনালিসিস।

    লন্ডনের ইম্পোরিয়াল কলেজের গবেষণা প্রতিষ্ঠান  সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশন ডিজিজ এনালিসিস (এমআরসি’)’র ৯ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে সংক্রমণের সুচক বা R ( Rate) ১.৫  এর ধারাবাহিকতায় চলতে থাকলে সংক্রমনের এই মাত্রা প্রতি তিন ( ৩) দিনে দিগুণ হবে অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন আক্রান্ত ব্যক্তি ৪ সপ্তাহ পর ১১ হাজার ৩৩৩ জনকে আক্রান্ত করবেন।

    সেই হিসাবে জুন মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখে পৌছাতে পারে। চলমান অনুপাতে জুন মাসের শেষে প্রতিদিন প্রায় সাতশ মৃত্যুের আশংকা করছেন গবেষকেরা।

    লন্ডনের ইম্পোরিয়াল কলেজের রিচার্স ফেলো আলী আশিক বলেন, ইম্পেরিয়াল কলেজ যেটা আশংকা  করছে যে ওরা ইনফেক্টেড ( infected) বলছে ২০ লাখ। এখন এরা বলেনি কত জন লোক  মারা যাবে। তবে আমার মনে হয়  যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে তাদের অনুমান ছিল  ৫ লাখ। বাংলাদেশে বিষয়ে যে আশংকা করা হচ্ছে সেটা গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। আমার মনে হয় বাংলাদেশেরও এখনই খুব কঠোর পদক্ষেপ  নেওয়া উচিত। কারণ বাংলাদেশ যদি এই পরিস্থিতিতে  Relax ভাবে রাখে বা পরিস্থিতি  যেভাবে চলছে সেইভাবে চলতে দেয় তাহলে দেখা যাবে যে, আশংকা অনুযায়ী করোনা সংক্রমণিত হলে  দেশে ৮০০০ থেকে ২০০০০ আইসিইউ ( ICU) বেড লাগবে। যেটা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়।

    তার মতে,  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের একমাত্র উপায়    R Rate বা সংক্রমণ সূচককে কমিয়ে আনতে হবে৷

    লন্ডন কিংস কলেজে গবেষণারত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক   মাহবুব হাসান বলেন,  যেভাবে প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে সেটির প্রতিফলন হলে আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। কারন  R Rate কিন্তু একদিনে কমিয়ে ফেলা সম্ভব নয়।  এটা আপ্নাকে Slowly কমায় আনতে হবে এবং এটার একমাত্র উপায় হচ্ছে আইসোলেশন অথবা সামাজিক দূরত্ব । যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন যতদিন যুক্তরাজ্যে R রেইট ১% এর উপরে ছিল ততদিন কোন কিছুকেই রিলাক্স করা হয় নি। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি যা দেখছি সেটা কোনভাবেই ভালো না। গণপরিবহন, শিল্প প্রতিষ্ঠান কোথাও সচেতনতা দেখছি না।

    ইতিপূর্বে লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষক প্রফেসর নেইল ফারগেশন যুক্তরাজ্যে কোভিট আক্রান্ত হয়ে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে এমন আশংকা করে প্রতিবেদন প্রকাশের পরই গেল ২৩ মার্চ থেকে দেশজুড়ে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বৃটিশ সরকার৷ সেই সময়ে যুক্তরাজ্যের R Rate বা সংক্রমণ সূচক ২ থেকে তিনে উঠানামা করলেও বর্তমানে সেই হার কমে এসেছে ১’র নিচে।

    ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের রিচার্স ফেলো আলী আশিকের মতে , সরকারকে তিন সপ্তাহের কঠোর লকডাউনে যেতে হবে। যেহেতু দেশের মানুষ ইউরোপ আমেরিকার মতো শিক্ষিত নন। R রেইট হঠাৎ করে কমানো সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে সেটি কমবে।

    তবে কিংস কলেজের  গবেষক মাহবুব হাসান মনে করেন, বাংলাদেশে আক্রান্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা পরীক্ষা করার কারণে R  Rate’ এর মাত্রা বেশি হতে পারে যা দিয়ে পুরো দেশের সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র ফুটিয়ে তোলা কঠিন।