আকিজ প্লাস্টিকস’র ‘বাংলা বানানে শুদ্ধি অভিযান’ : বলার চাইতেও বানানে বেশি উদাসীন বাঙ্গালি

    ভাষার জন্য আত্মত্যাগের পরেও বাংলা শব্দে বানান ভুল

    রাজীব সেন প্রিন্স : ভাষার জন্য সমগ্র পৃথিবীতে একমাত্র বাঙ্গালিরাই প্রাণ দিয়েছে। যদিও বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, সামান্য অসচেতনতার জন্য অনেক ক্ষেত্রে আমরা এর প্রাপ্য সম্মান দিতে পারি না। যার উদাহরণ হচ্ছে ভুল বাংলা বানান।

    বাংলা ভাষা বলার ক্ষেত্রে আমরা যতটা উদাসীন তার চাইতেও বেশি উদাসীন বাংলা বানানের ক্ষেত্রে। কেউ কেউ ‘ভুল’ শব্দটিকে ‘ভূল’ লিখে ভুল করেন। আবার অনেকেই ‘উল্লিখিত’ শব্দটিকে ‘উল্লেখিত’ লিখে সঠিক লিখেছেন বলে মনে করেন। এমন আরো অনেক শব্দ রয়েছে যেগুলোর সঠিক বানানের ব্যাপারে অনেকেই উদাসীন।

    অনেক আত্মত্যাগে পাওয়া আমাদের এই বাংলা ভাষা, বাহান্ন’র ভাষা আন্দোলন ও নানা স্মরণীয় আত্মত্যাগের পরেও বাংলা শব্দের ভুল বানান কিংবা ভাষার অপপ্রয়োগ আমাদের নিদারুণ লজ্জার কারণ ও নিকৃষ্ট উদাহরণ।

    রাস্তাঘাটে চলতে-ফিরতে আমাদের চোখ পড়ে অফিস-আদালত, দোকান বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড। চোখে পড়ছে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন। দেয়ালে দেয়ালে লিখন বাচিকামারা ও দিকনির্দেশক ইত্যাদির নানান বাংলা লেখার ওপর। তাছাড়া ব্লগ-ফেইসবুক থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতেও চোখ সবারই পড়ে।

    কিন্তু দুভার্গ্যজনকভাবে এসব লেখায় অধিকাংশ শব্দের বানান ভুল থাকে। বাংলা ভাষা অর্জনের আপোশহীন সংগ্রামী ইতিহাসের মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে, আপোশহীন গুণমানের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আকিজ প্লাস্টিকস ভাষার শুদ্ধতা রক্ষায় নিয়েছে একটি আপোশহীন উদ্যোগ ‘বাংলা বানান অভিযান’

    যার কার্যক্রম চলছে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। চলবে আগামীকাল শুক্রবার ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কার্যক্রম-এর অংশ হিসেবে মাঠ পর্যায়ে ও সকল যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে ‘বাংলা বানান অভিযান’ দল।

    এর মধ্যে সংবাদপত্র, ফেসবুক অ্যাক্টিভিটি (বিভিন্ন স্ট্যাটিক পোস্ট, এংগেজমেন্ট পোস্ট এবং কল-টু-অ্যাকশন পোস্ট)-সহ মাঠ পর্যায়ে দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরে কাজ করছে ‘বাংলা বানান অভিযান’দল।

    বানান ভুল চিহ্নিত করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কিছু উৎসাহী স্বেচ্ছাসেবক। বিশেষত ১৮ থেকে ২০ তারিখে তারা চট্টগ্রামসহ ৮টি বিভাগীয় শহরের সর্বাধিক বিক্রীত ফুলের দোকানগুলোতে উপস্থিত থেকে ফুল ক্রেতাদের পুষ্পস্তবকে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ ও নাম-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় লেখার বানানের শুদ্ধতা নিশ্চিত করছে।

    তাছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন অফিস পাড়া থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ ও বিভিন্ন বাজারে ভাষার মাসে বাংলা বানানে ভুল খুঁজে বেড়িয়েছে। যেখানেই ভুল পেয়েছে সেখানে বানানটি শুদ্ধ করে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করেছে চট্টগ্রাম বিভাগের অভিযানিক দলে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকরা। বলেছে একই শব্দের বিভিন্ন বানানের কারণে অনেক স্থানে আমাদের নাস্তানাবুদ দশা।

    তারা জানিয়েছে চট্টগ্রামে সরকারি বানানটি ভুল করে সরকারী লিখেছে অনেকে। আমরা তা শুদ্ধ করে দিয়েছি। সবচেয়ে বেশি ভুল হয় পুষ্প লেখাতে। এ শব্দের ব্যবহারে অনেকেই পুস্প আবার কেউ কেউ পুস্ফ বানানটি ব্যবহার করেছে। অনেকেই লিখেছে শ্রদ্ধাঞ্জলী যা ভুল। সঠিক শব্দটি হবে শ্রদ্ধাঞ্জলি। এসব করতে গিয়ে বকাও খেতে হয়েছে অনেকের কাছে।

    অন্যদিকে এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলা বানান পর্যবেক্ষনের জন্য অভিযান দলটি প্রথমেই গিয়েছে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে। সেখানকার পুরো সড়ক জুড়ে আশে পাশের প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে শুধুমাত্র সরণি বানানটি বিচিত্রসব শব্দ ব্যবহার করে লেখা হয়েছে।

    যার মধ্যে কেউ লিখেছে সরনী, কেউবা স্মরণি, আবার কারো প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে শোভা পেয়েছে স্বরণী, সরণী, স্মরণি। অতচ এসব বানান ভুল। সঠিক বানানটি হবে সরণি। সঠিক বানানটিও লেখা ছিলো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে। তারা তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

    ৮ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ভুল বানান শুদ্ধি অভিযানে অপর একটি অভিযান দল অবস্থান করছে সিলেট শহর। সেখানেও সবচে বেশি ভুল যে শব্দের সন্ধান পেয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ছিলো স্টোর। ইংরেজী শব্দ বাংলায় আসলে ষ না হয়ে স হয়। বেশ কয়েকটি সরকারি কার্যালয়ের নামফলকেও ভুল বানানের দাপট। অফিসে ভুলভাবে কার্যালয় বানানটি ভুল করে লেখা হয় কার্য্যালয়।

    ভুলভাবে লেখা ছিল পোষ্টার, শুদ্ধ করে বানানটি করা হয় পোস্টার। বেশ কয়েকটি ফার্নিচার এর দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ফার্ণিচার। ণ-নেই. কারন এটি ইংরেজি থেকে এসেছে। সিষ্টেম কে সিস্টেম বানানো হয়েছে অনেক জায়গায়। রেষ্টুরেন্ট নয়, শুদ্ধ করে লেখা হয় রেস্টুরেন্ট। ঠিক এভাবেই ৮ বিভাগীয় শহরে কাজ করছে ‘বাংলা বানান অভিযান’দল।

    ৮টি শহরেই উল্লেখযোগ্য বানানের মধ্যে ভুল বানান পাওয়া গেছে যেসব শব্দ সেগুলো
    (সঠিক বানানটা ব্র্যাকেটে দেওয়া হলো) ‘ষ্টোর্স’ (হবে স্টোর্স), ‘ষ্টোর’ (স্টোর), ‘এন্ড (অ্যান্ড), ‘ঘন্টা’ (ঘণ্টা), ‘ইনষ্টিটিউট’ (ইনস্টিটিউট), ‘ষ্ট্যান্ড’ (স্ট্যান্ড), ‘ফ্যাক্টরী’ (ফ্যাক্টরি), ‘ফার্ণিচার’ (ফার্নিচার), ‘মডার্ণ’ (মডার্ন), ‘রেষ্টুরেন্ট’ (রেস্টুরেন্ট), ‘কম্পানী’ (কম্পানি) ‘আইনজীবি’ (আইনজীবী), ‘বিরাণী’ (বিরানি), ‘কর্ণেল’ (কর্নেল), ‘ষ্ট্যাম্প’ (স্ট্যাম্প), ‘ফটোষ্ট্যাট’ (ফটোস্ট্যাট), ‘ভ্রাম্যমান’ (ভ্রাম্যমাণ), ‘ডায়াগনষ্টিক’, (ডায়াগনস্টিক) ‘ব্যাটারী’ (ব্যাটারি), ‘মেশিনারী’ (মেশিনারি) ইত্যাদি ইত্যাদি।

    শুদ্ধ বানান পর্যবেক্ষনে অংশ নেওয়া অভিযান টিমের সদস্যরা জানিয়েছে, সাধারণত যে শব্দগুলো ইংরেজি থেকে বাংলায় এসেছে সে শব্দগুলোই বেশি ভুল হচ্ছে। ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান গুলোও অনেকের অজানা। বাংলা একাডেমি থেকে -িকার ও ী কারের যে নিয়মগুলো দেয়া আছে সেগুলো অনুসরণ করছে না অনেকে। তারা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সারা বাংলাদেশে নিজ নিজ এলাকায় বানান শুদ্ধি অভিযান শুরু হোক এমন অনুরোধ সবার কাছে।

    এছাড়াও বাংলা বানান দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য ‘বাংলা বানান অভিযান’ নামেই একটি ফেইসবুক অ্যাপ চালু হয়েছে। অনেকেই আকিজ প্লাস্টিকস-এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে লিঙ্কের মাধ্যমে এই গেইমে অংশগ্রহণ করেছেন।

    কোম্পানিটির মতে, তাদের আধুনিক অভিনব প্লাস্টিক পণ্যের গুণ ও মানের মতোই বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগে আপোশহীন থাকবার আহ্বান জানায় দেশ-বিদেশের সকল বাঙালিকে।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স…..