ক্রাইম পেট্রোল আদলেই পিবিআই’র সফল অভিযান : ৬ মাস পুর্বের গণধর্ষণ কাহিনী ২দিনে নিস্পত্তি

    ফেসবুক থেকে বিশেষ প্রতিবেদন: ভারতের সনি আটের জনপ্রিয় সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোলের আদলেই দেশে সংঘটিত বাস্তব এক গণধর্ষণ ঘটনার সফল ইতি টেনেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই।

    যে কাজটি গত ছয়মাস চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে অন্যরা সে কাজটি ঘটনায় জড়িত ৩ আসামীকে মাত্র দুদিনের মধ্যে গ্রেফতার করে সফল ইতি টেনেছেন পিবিআই।

    কাহিনী/ঘটনাবলীর পুরো তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের টাইমলাইনে তুলে ধরেছেন বাহিনীটির পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ

    তার স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হল।

    নবীরুল ইসলাম রনি,রেন্ট এ কারের ব্যবসা তার, চেহারায় বড়লোকি ভাব না থাকলেও বেশভুষা চালচলন ভাবসাবে সমবসময় বড়লোকি মহড়া তার।নিত্যনতুন বান্ধবী তৈরী করে তাদের সাথে গাড়ীতে ঘোরা আড্ডা রেস্টুরেন্ট হ্যাঙ্গআউটে বেশ পারঙ্গম সে।

    তার সাথে রয়েছে কাউসার আর শাহাদাত নামের আরও দুইজন। এ কাজে বান্ধবী যোগাড় করতে বর্ষা নামের মেয়েটির জুড়ি নেই।নিত্য নতুন বান্ধবীর কাছে ভালমানুষ সেজে সুযোগ মত এই বখাটেরা তাদের উপর হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে।

    ঘটনাটি অক্টোবর মাসের।বনানীর এক রেস্তোরায় ডিনার করার কথা বলে রাত সাড়ে সাতটার দিকে রনির গাড়িতে ৩০০ ফিটের দিকে বর্ষা রিনি (ছদ্ম নাম) নিয়ে ঘুরতে যায়। বর্ষা ড্রাইভারের পাশের সীটে বসে রিনি পিছনে রনির সাথে বসার সুযোগ করে দেয়। প্রথমে রিনি ভয় পেলেও তার মনে খারাপ কোন সন্দেহ জাগেনি। তবে হঠাত মাঝপথে কোনকিছু না বলে বর্ষা নেমে যাওয়ায় এবং পিছনে শাহাদাত নামের আরেকজন গাড়ীতে উঠায় তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে্।

    বিভিন্ন অলিগলি ঝুপড়ি জঙ্গল ঘুরে দেড় ঘন্টা গাড়ীটি চলে রাত সাড়ে নয়টার দিকে হোটেল রিজেন্সির সামনে যখন রিনিকে নামিয়ে দেয় ততক্ষনে তার উপর তিন নরপশুর পালাক্রমে যৌন হামলা হয়ে গেছে, বাধা দেয়ায় তার উপরও চালিযেছে ব্যাপক শারিরীক নির্যাতন।

    শারিরীক ভাবে বিধ্বস্ত সে রাতেই থানায় যায় রিনি। তার আগে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বর্ষাকে কাকতালীয় ভাবে পেয়ে তাকে ঝাপটে ধরে টহল পুলিশের সহায়তায় ভাটার থানায় নিয়ে যায়।বর্ষাকে অভিযুক্ত করে সে। বর্ষা ভয় আর প্রলোভন দেখিয়ে রিনিকে মামলা না করতে পরামর্শ দেয়।পরে ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগ আনতে বলে বর্ষা ।পরদিন ঢাকা মেডিক্যালে তার পরীক্ষা করানো হয়।ধর্ষনের সব আলামত পাওয়া যায় রিনির শরীরে।

    দিন যায় মাস যায়, ব্যস্ততার অজুহাতে থানা পুলিশের কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়না। হয়না কোন আসামী গ্রেফতার। আসামীদের পক্ষ থেকে উপরোন্ত রিনিকে প্রতিনিয়ত ভয় দেখানো হয়, টাকার প্রলোভনও দেয়া হয়।পিতা হারা তেইশ বছর বয়সী রিনি দিশেহারা কিন্ত দমার পাত্রী নন, মানবাধিকারসহ তিনি বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিতে থাকেন আসামীদের গ্রেফতারে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালযে যাওয়ারও চেষ্টা করেন।

    ভাটারা থানা পুলিশ মামলার কোন গতি করতে না পারায় হতাশ হন প্রতিনিয়ত রিনি। চারমাস পর মামলাটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে হস্তান্তর করা হয়। এ সেন্টারের নারী অফিসারগণও প্রাণান্ত চেষ্টা করতে থাকেন আসামীদের গ্রেফতারে,তারাও কোন কূলকিনারা করতে পারেনা।

    ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া রিনি কোন একটা রেফারেন্সে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর সাবইন্সপেক্টর আল আমীনের সাক্ষাত পায়। ঘটনাটি পিবিআই নোটিশে আসে, কাজটি ভালভাবে করতে বাহিনীর সবাই বদ্ধপরিকর হই। রূদ্ধদ্বার মিটিং, গাইডলাইন এবং করনীয় সব ঠিক করা হয়।

    শনিবার ভিকটিম রিনির সাথে পিবিআই পুলিশ সুপার তার সহকর্মী বশীরসহ দুঘন্টা কথা বলে পুরো ঘটনার আদ্যোপান্ত জেনে নেন। ঠিক করে নেন অভিযানের সবকিছু। শনিবার রাত থেকেই ইমারজেন্সি পিবিআইর টীম সকল সাপোর্ট নিযে মাঠ চষে বেড়ায়। ঢাকার অলিগলি রাজপথ জিপিআরএস,এলআইসি,সেলআইডি,ম্যানুয়েল,কল লোকেশন,সিডিআর, বিভিন্ন তথ্য র ব্যাপক সমন্বয় আর অত্যাধুনিক কার্যক্রমে অবশেষে ঘটনার ছয়মাস পর গণধর্ষনের প্রধান আসামী পিবিআিই র জালে আটকা পরে। সারাদিন চলে সে নরপশুর ক্লান্তিহীন জিজ্ঞাসাবাদ।

    রনিকে নিয়ে চলে শাহাদাত আর কাউসারকে গ্রেফতার করার চিরুনি অভিযান, ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত কত প্লান,কত সময় কত পরিশ্রম কত মেধা সবাই ঢেলে দিতে থাকেন।পিবিআিই ঢাকা মেট্রোর সকল অফিসার ফোর্স যে যার অবস্হান থেকে ব্যাপক কাজ করতে থাকেন।

    অবশেষে পিবিআই থেকে দুজনই গ্রেফতার এড়াতে সবকিছু করতে ব্যর্থ হন।তিন নরপশুই পিবিআইর ইন্টারগেশন সেলে তাদের সে রাতের হিংশ্র আর জংলী হযে উঠা্র কাহিনী বর্ণনা করেন।

    নবীরুল ১৬৪ ধারায় আদালতকে বলে,বর্ষা নামার পর ওই তরুণী চিৎকার শুরু করে। আমি তাকে বারবার থামতে বলি। কিন্তু সে থামেনি। বাধ্য হয়ে তাকে চড়-থাপ্পড় দেই। তার নাক ফেটে রক্ত বের হয়। এরপর আমি ও শাহাদাত মিলে চলন্ত কারেই তাকে ধর্ষণ করি। পরে শাহাদাত গিয়ে গাড়ি চালায় এবং কাউসার এসে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে।

    প্রথম থেকেই ওই তরুণী তাকে ছেড়ে দেয়ার আকুতি জানাচ্ছিল। পরে তাকে খিলক্ষেত হোটেল রিজেন্সির সামনে নামিয়ে দিয়ে যে যার মতো চলে যাই।অন্যদিকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপর দুই আসামি শাহাদাত হোসেন ও মো. কাউসার চলন্ত প্রাইভেট কারে গণধর্ষণের কথা স্বীকার করে প্রায় একই রকম তথ্য দেয়।

    সফল অভিযান, নির্যাতিত রিনিদের মুখে আনন্দের হাসি ,নরপশু রনি শাহাদাত কাউসারদের গ্রেফতার, আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী,পিবিআই ঢাকা মেট্রো পরিবারে কি যে স্বস্তি প্রশান্তি কাজ করছে তা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা যাবেই না।

    চমক আরো আসছে। আস্হা নির্ভরতার পিবিআই র সাথেই থাকুন। রেজাউল মাসুদ,ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার,পিবিআই।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স