শতবর্ষী নিরঞ্জন ফিরে পেল হারানো ভিটে বাড়ি!

    চট্টগ্রাম মেইল : অবশেষে ভুমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নির্দেশনায় এবং প্রশাসনের সহযোগীতায় শতবর্ষী বৃদ্ধ নিরঞ্জন পন্ডিত ফিরে পাচ্ছে তার হারানো ভিটে বাড়ি। আবারো প্রদীপ জ্বলবে ৪৩ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মন্দিরে আবারো সকল প্রকার পূজা অর্চনা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে।

    বাংলাদেশ সরকারের ভুমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামানকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এবং সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসন এবং হিন্দু নেতা ও ভাই বোনদেরকে অসহায় অবস্থায় তাদের পাশে দাড়ানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন নিরঞ্জন চক্রবর্তীর নাতনি পাপিয়া চক্রবর্তী। তিনি বলেন, সকলের প্রতিবাদ ও আন্তরিক সহযোগীতায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শত বছরের বৃদ্ধ পন্ডিত নিরঞ্জন চক্রবর্তী তার হারানো ভিটে বাড়ি আবারো ফিরে পেতে যাচ্ছে। এ ঘটনাটি আপাতত মিমাংসা হয়ে গেছে। জমি ফেরতের বিষয়ে আসামিদের সাথেও আপোষনামা হয়ে গেছে বলে জানান পাপিয়া। আজ ভুমিমন্ত্রীর মাধ্যমে তাদের জমির দলিল হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

    উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভুমিমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সংশ্লিষ্ট ভুমি সংক্রান্ত সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ভিটে বাড়ি হারানো শতবর্ষী নিরঞ্জন পন্ডিতের পরিবারের সাথে বৈঠকে বসি। বৈঠকে ভুমি হারানো পরিবারটির সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরীর কার্যালয়ে এ সমঝোতা চুক্তিটি হয়।

    এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও প্রশাসনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ারা থানার ওসি (তদন্ত) মাহবুব মিল্কী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৃণাল কান্তি ধর, ইউপি চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেব, হিন্দু নেতা বিশ্বেশ্বর গুপ্ত, তাপস বল এবং রিঞ্জন পরিবারের পক্ষে নিরঞ্জন চক্রবর্তীর পুত্রবধূ শীমা চক্রবর্তী ও নাতনি পাপিয়া চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন। ভূমিদস্যুদের অত্যাচারে বাড়ি ছাড়লেন নিরঞ্জন

    এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে শতবর্ষী বৃদ্ধ শিক্ষক নিরঞ্জন চক্রবত্তীর ছেলে শিক্ষক প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্থানীয় মো. ফারুক নামের এক ব্যক্তিকে আমমোক্তারনামা মুলে গত ২০১৬ সালে ভিটে বাড়ি থেকে দুরের একটি পুকুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়।

    তার মৃত্যুর পর ফারুকের ওয়ারিশগন রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব নিতে চাইলে আমাদের পরিবার তা বাতিলের জন্য আনোয়ারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আবেদন করে। কিছুদিন পর গত ১০ এপ্রিল ভূমিদস্যুরা বাড়ি ভিটে ছেড়ে দিতে বাড়ির উঠোনে এসে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। এমনকি বৃদ্ধ শতবর্ষী পিতার টিপ সই এবং মিথ্যা সাক্ষী সৃষ্টি করে জোর পুর্বক আমার স্বাক্ষর নেন। তাছাড়া বোনকেও শ্লীলতা হানি করে অভিযোগ করেন।

    তিনি বলেন, কামরুল ইসলাম হেলাল প্রকাশ মধু হেলাল, আনোয়ার হোসেন, মো. মানিক, আবদুর রহিম, মো. আলী প্রকাশ মহিদুল্লাহ, মধু হেলালের ছেলে মো. আনোয়ারুল ইসলামসহ সংঘবদ্ধ ভুমিদস্যু চক্রটি তাদের ৪৩ বছরের পুরনো কালি মন্দিরে তালা লাগিয়ে দেন। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শত বছরের বৃদ্ধ পন্ডিত নিরঞ্জন চক্রবর্তী শেষ জীবন এসে সন্ত্রাসীদের হাতে অপমানিত হয়ে নিজের বসত ভিটে ও কালী মন্দির ছাড়তে হয়।

    পরে তার ছাত্র ছাত্রীরা এবং এলাকাবাসীরা বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পরামর্শে ১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) আনোয়ারা থানায় উপরোক্ত সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে নিন্দার ঝড় তুললে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমগুলোতেও বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশ হয়। এর ফলফ্রসু হিসেবে ভিটে বাড়ি দখলে নেয়া ব্যাক্তিরা সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়।

    বিএম/রাজীব সেন প্রিন্স..

    আরো খবর পড়ুন : ভুমিদস্যুদের হুমকিতে প্রাণভয়ে এখনো বাড়ি ছাড়া নিরঞ্জন পরিবার : মন্দিরে জ্বলছেনা প্রদীপ

    আরো খবর : ভূমিদস্যুর অত্যাচারে ভিটে ছাড়লেন শতবর্ষী নিরঞ্জন পন্ডিত