ভুয়া ডাক্তার জেলে, ফার্মেসীকে জরিমানা
    রোগীর ছদ্মবেশে ভুয়া চিকিৎসক ধরলো ম্যাজিস্ট্রেট : মিলল মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ঔষধ

    রাজীব সেন প্রিন্স :

    চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের সহযোগীতা নিয়ে কথিত এক চিকিৎসককে হাতেনাতে ধরার জন্য রোগীর ছদ্মবেশ ধারণ করে বিশেষ কৌশলে অভিযান পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পতেঙ্গা সার্কেল এর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান।

    পরিকল্পনা অনুযায়ী রোগীর ছদ্মবেশ ধারণ করে চিকিৎসক বিকিরণ বড়ুয়ার সিরিয়াল নিয়েছিলেন র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র এএসপি মিমতানূর রহমান। সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকার আয়েশা মেডিকেল নামে একটি ফার্মেসী থেকে সিরিয়াল নাম্বারটি সংগ্রহ করেন র‌্যাবের এ সদস্য। সন্ধ্যা ৬ টায় যেতে বলা হয় চেম্বারে।

    সময়মত দক্ষিণ পতেঙ্গার বিজয়নগরের আয়েশা মেডিকেলে তার চেম্বারে গিয়ে দেখা যায় বাইরে অসংখ্য রোগীর ভীড়। নিজেকে ডায়েবেটিস, মেডিসিন ও শিশু রোগের চিকিৎসক দাবি করা বিকিরনের চেম্বারের বাইরে বেশ কয়েকজন অন্তঃস্বত্তা মহিলা ও কয়েকটি শিশুকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

    সিরিয়াল অনুযায়ী র‌্যাবের সিনিয়র এএসপি মিমতানূর রোগী সেজে চিকিৎসকের চেম্বারে প্রবেশ করেন এবং তার সাথে কথা বলেন। এক পর্যায়ে চিকিৎসক বিকিরনের ডিগ্রী সম্পর্কে জানতে চাইলে তার সার্টিফিকেট ঢাকায় রয়েছে বলে জানায়। এসব সার্টিফিকেট আনার জন্য চিকিৎসক দুই দিনের সময় চাইলে। চেম্বারের বাইরে অপেক্ষা করা পতেঙ্গা সার্কেল এর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা. মোহা. ওয়েজেদ চৌধুরী অভি চেম্বারে প্রবেশ করেন।

    সবার পরিচয় প্রদর্শণ করে তারা চিকিৎসকের কাছে তার বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নাম্বার জানতে চাইলে তিনি ৯১১১৩ নম্বরের ভ’য়া একটি রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দেন যা www.bmdc.org.bd ওয়েব সাইটে সার্চ করে কোন অস্তিত্ত্ব পাওয়া যায়নি। ওয়েব সাইট ভিজিট করে জানা যায় এখন পর্যন্ত এমবিবিএস ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ৯০০০০ পর্যন্ত তালিকাবদ্ধ।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথিত চিকিৎসক বিকিরণ বলেন, গত মাসে তার রেজিস্ট্রেশন হয়েছে তাই ওয়েব সাইটে তালিকাবদ্ধ হয়নি। কোথা থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জণ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি ভারতের একটি মেডিকেল কলেজের নাম জানিয়ে সে মেডিকেল কলেজের বেশ কিছু ভুয়া প্রিন্ট করা সার্টিফিকেট প্রদর্শন করেন।

    বিকিরন বড়ুয়ার প্রেসক্রিপসন প্যাডে তিনি কাস্টমস হাউজের মেডিকেল অফিসার বলে উল্লেখ করলেও কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে সেখানে এ নামে কোন চিকিৎসক কাজ করেন না বলে জানানো হয়।

    মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন হতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযান সম্পর্কে উপরোক্ত বিষয়গুলো জানানো হয়। এতে বলা হয় চট্টগ্রামের দক্ষিন পতেঙ্গা এলাকার বিজয় নগরে বিকিরন চাকমা নামে এক ভুয়া ডাক্তারকে ছয় মাসের কারাদন্ড ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। এ সময় আয়েশা মেডিকেল নামে এক ফার্মেসিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ঔষধ বিক্রির দায়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা ও এর মালিক ফরিদুল আলমকে তিন মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

    পতেঙ্গা সার্কেল এর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে সহযোগীতা করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ডা. মোহা. ওয়েজেদ চৌধুরী অভি এবং র‌্যাব ৭ এর সিনিয়র পুলিশ সুপার মিমতানূর সহ অন্যান্য র‌্যাব সদস্যবৃন্দ।

    চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান জানান, বেশ কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে অভিযান চালিয়ে ভুয়া চিকিৎসক বিকিরণ বড়–য়াকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের সময় যে ফার্মেসিতে চেম্বার করতেন তার লাইসেন্সও তিনি দেখাতে পারেনি। পরবর্তীতে আচরণে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ভুয়া চিকিৎসা ব্যবসার কাহিনী। ভুয়া এ চিকিৎসককে ছয় মাসের কারাদন্ড ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত।

    এছাড়া ফার্মেসিতে তল্লাশি চালিয়ে চার বস্তা অননুমোদিত ও অবৈধ, ব্যবহার নিষিদ্ধ ঔষধ পাওয়া যায়। ২০১৩ সালের মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পাওয়া যায়, পাওয়া যায় জমে যাওয়া আইভি সেলাইনসহ নষ্ট ও গলে যাওয়া ঔষধ। এ সময় ফার্মেসির মালিক ফরিদুল আলমকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা ও তিন মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

    বিএম/রাজীব সেন…