টানা বর্ষণ, যানজট, জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ধ্বসে বিপর্যস্থ জনজীবন
    দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত চট্টগ্রাম (ভিডিও)

    ছবি তুলেছেন বাংলাদেশ মেইলের আলোকচিত্রী কাঞ্চন চক্রবর্ত্তী।

    রাজীব সেন প্রিন্স :

    দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। গত ক’দিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে জনজীবন। ডুবে রয়েছে নগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকা। বাসা-বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে হাটু সমান পানি। খুব প্রয়োজন না হলে মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ারও উপায় নেই। ব্যহত হয়েছে অধিকাংশ এলাকার ব্যবসা কার্যক্রমও।

    এদিকে পানির নিচে অধিকাংশ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা মেলেনি গণপরিবহণ। প্রধান সড়কগুলোতে মাঝে মাঝে দুই একটি রিক্সা, ভ্যান ও অটোরিকশার দেখা মিললেও ভাড়া ছিলো তিন থেকে-চারগুণ বেশি। এমন পরিস্থিতিতে বেশি বিপাকে পড়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী মানুষ ও খেটে খাওয়া দিনমজুর এবং পোষাক শ্রমিকরা। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়ায় রিকশা ও ভ্যানে চড়ে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছেছেন।

    একদিকে যানবাহন শূন্য শহরে পরিণত হলেও যানজটের অবসান ঘটেনি বিমান বন্দর সড়কে। সল্টগোলা ক্রসিং থেকে কাঠগড় ও বিমান বন্দর সড়কটিতে শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে অতিষ্ঠ ছিলো ওই এলাকার যাত্রীরা।

    সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার সকাল থেকে নগরীর দুই নম্বর গেইট, আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, মুরাদপুর-সহ নগরের নিম্নাঞ্চলে জমেছে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। বাসা-বাড়ি কিংবা দোকান-পাটে পানি ঢোকা নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সেখানে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন চলাচল।

    পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান জানায়, শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৮৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্র এবং ভারী ও অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

    অন্যদিকে নগরীর বায়েজিদের আরেফিন নগর ও কুসুমবাগ আবাসিক এলাকা এবং সীতাকু-ের কুমিরায় ঘটেছে পাহাড় ধসের ঘটনা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পৃথক এসব পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও নগরীর কুসুমবাগ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ধসে নুসরাত শারমিন নামে তিন বছর বয়সী এক শিশুকে আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট উদ্ধার কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় মাটিচাপা পড়া দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে শিশুটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আছে।

    নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার জানায়, ভারি বর্ষণে শনিবার সকালে আরেফিন নগরে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে। এতে দু’জন চাপা পড়ে। পুলিশের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুজনকেই জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

    ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন জানান, আরেফিন নগরে মাঝেরঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে চাপা পড়া দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এবং কুসুমবাগ এলাকায় দুটি পাহাড় ধসের ঘটনায় নুসরাত নামে এক শিশুকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি আর কেউ মাটিচাপা অবস্থায় আছে কি না তা আমরা সন্ধান করে দেখছি। এবং ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিসের টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।

    বিএম/রাজীব সেন..