গ্রেনেড হামলা মামলার দণ্ডিতরা কে কোথায়

    ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার দু’মামলায় ১৯ আসামিকে ফাঁসির দণ্ড ও ১৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

    মোট ৫২ আসামির মধ্যে ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় রায়ের আগেই এ মামলা থেকে ৩ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

    ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার-১ নম্বর ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।

    ফাঁসির দণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান মোট ৩৮ আসামি। আসামিদের মধ্যে রায় ঘোষণার দিন ২৪ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি ১৪ আসামি ছিলেন পলাতক।

    দণ্ডিতরা কে কোথায়?

    ১) তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া:

    গ্রেনেড বিস্ফোরণ ও হত্যা দুই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে লন্ডন চলে যান। গত ১১ বছর যাবৎ সেখানে আছেন তিনি। এ দুটি মামলা ছাড়াও অর্থপাচার ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলারও সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান।

    ২) লুৎফুজ্জামান বাবর:

    বিএনপি সরকারের ২০০১-২০০৬ মেয়াদে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে গ্রেফতার হন তিনি। সেই থেকে ১২ বছর যাবৎ কারাগারে আটক আছেন। গ্রেনেড হামলার দুটি মামলায় তাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও দণ্ডিত করা হয় বাবরকে।

    ৩) হারিছ চৌধুরী:

    বিএনপি আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। সে সময় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় এলে দেশ ছাড়েন তিনি। গ্রেনেড হামলার দুটি মামলায়ই তাকে পলাতক দেখিয়ে তার অনুপস্থিতিতে বিচার শেষ হয়েছে। দুই মামলায়ই তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একক কোনো দেশে তার অবস্থানের খবর পাওয়া যায়নি। দণ্ড মাথায় নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন।

    ৪) আব্দুস সালাম পিন্টু:

    ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি আব্দুস সালাম পিন্টু। বিএনপি সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি এ মামলায় গ্রেফতার হন। ১১ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। গ্রেনেড হামলার দু’মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পিন্টু গ্রেনেড হামলা মামলার আরেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনের ভাই।

    ৫) শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ:

    কুমিল্লার বিএনপি দলীয় এমপি ছিলেন শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। মামলার শুরু থেকে শেষ অবধি পলাতক ছিলেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে রয়েছেন মর্মে শোনা যায়।

    ৬) মাওলানা তাজউদ্দিন:

    মাওলানা তাজউদ্দিন বিএনপি সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই। তিনি ছিলেন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা। হামলার পর বিএনপি সরকারের আমলেই বাদল নামে ভুয়া পাসপোর্ট করে প্রথমে পাকিস্তান পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা চলে চান। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী তিনি। পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড এনে তা সরবরাহ করেন মাওলানা তাজউদ্দিন। এ মামলায় তাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

    ৭) মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী:

    ঘটনার সময় ডিজিএফআইয়ের প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে গ্রেফতার হন তিনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

    ৮) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুর রহিম:

    গ্রেনেড হামলার ঘটনার সময় এনএসআইয়ের মহাপরিচালক ছিলেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুর রহিম। তাকেও এ মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলারও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তিনি। বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক আছেন।

    বিএম…