বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পুঁথিগত শিক্ষাদানের মাধ্যম নয়-নওফেল

    চট্টগ্রাম মেইল : শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমাদের দেশ এখন কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে উৎপাদনশীল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সনাতনী চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

    তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পুঁথিগত শিক্ষাদানের মাধ্যম নয়। তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি গবেষণা ও ইন্ডাস্ট্রির সাথে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। নতুন-নতুন আইডিয়া জেনারেট করতে হবে। সেজন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের চেয়ে জনকল্যাণকর গবেষণা ও প্রায়োগিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের টেকসই উন্নয়নে এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    আজ রবিবার ১ সেপ্টেম্বর সকালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর ১৭তম ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

    শিক্ষা উপমন্ত্রী আরো বলেন, রাজধানী কেন্দ্রীক নির্ভরতা কমিয়ে এনে সুষম ব্যবস্থার দিকে যেতে হবে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে ভাবতে হবে। রাজধানীকে বাঁচাতে হলে দেশের অন্যান্য স্থানেও প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কারিগরি ও প্রাযুক্তিক পরামর্শ সেবার ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নির্ভরতা বেড়ে গেছে। সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

    তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিসীম অবদান রয়েছে। অবস্থানগত কারণে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে চুয়েটের কাজ করার দারুণ সুযোগ রয়েছে। এখানকার শিল্পকারখানা ও উপকূলীয় অঞ্চলের সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অঞ্চলভিত্তিক অবদান রাখতে হবে।

    শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী আরো বলেন, বিশ্ব এখন তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতায় ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের পথেই হাঁটছি। ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করে যেতে হবে।

    তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রফেশনালিজম নিয়ে ভাবতে হবে। চুয়েটের ছাত্ররা দেশে-বিদেশে অবদান রাখছে। চুয়েটকে এগিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে সবধরণের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তবে কিছুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। কারণ এতে শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে চুয়েটের সফলতা কামনা করে শিক্ষা উপমন্ত্রী।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি ও স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন এবং চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
    এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. রনজিৎ কুমার সূত্রধর, পুরকৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো রবিউল আলম, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক।

    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমাদের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বর্তমানে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে ইনোভেশন, গবেষণা ও নিত্যনতুন আবিষ্কার নিয়ে কাজ করতে হবে। পুরো বিশ্বটাই এখন গ্লোবাল ভিজেলে পরিণত হয়েছে।

    বর্তমানে সরকার গবেষণায় অর্থায়ন বরাদ্দ বাড়িয়েছে। তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইন্ডাস্ট্রির সাথে কোলাবোরেশান বাড়াতে হবে। দেশে-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়-ইন্ডাস্ট্রির সাথে সংযোগ বাড়াতে হবে। চুয়েটের গ্র্যাজুয়েটদের ব্লু-ইকোনমি, জলাবদ্ধতা, যানজট বিষয়ে কাজ করার দারুণ সুযোগ রয়েছে। সেজন্য একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি প্রায়োগিক শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে।

    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম ১৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে চুয়েট পরিবারের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ১৯৬৮ সাল থেকে চুয়েট দীর্ঘ পরিক্রমায় প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণায় দেশে একটা অবস্থান করে নিয়েছে।

    একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যথার্থতার পরিচয় ঘটে মুক্তবুদ্ধি চর্চার মাধ্যমে। পাশাপাশি গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমে এগিয়ে যায়। যেহেতু চুয়েট একটি বিশেষায়িত ও টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। তাই দেশের বর্তমান উন্নয়নযজ্ঞের অবকাঠামো ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় চুয়েটের গ্র্যাজুয়েটরা অবদান রাখতে পারে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তাই চুয়েট বিশ্বমানের গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে মনযোগ দিচ্ছে।

    অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন চুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামসুল আরেফিন, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাম্মদ ইকরাম, কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. জামাল উদ্দীন, ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে মেকাট্রনিক্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের হুমায়রা জান্নাত মীম এবং পুরকৌশল বিভাগের একেএম সাজিদ উদ্দিন আহমেদ জয়।

    অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়শা আক্তার, ইটিই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আজাদ হোসাইন, মানবিক বিভাগের শিক্ষক জনাবা নাহিদা সুলতানা।

    অনুষ্ঠানের শুরুতে চুয়েটের শিক্ষা-গবেষণার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করেন সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়) মোহাম্মদ ফজলুর রহমান। দিনব্যাপী আয়োজনের অন্যান্য অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো- রক্তদান কর্মসূচী, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী, ছাত্র বনাম শিক্ষক ও কর্মকর্তা বনাম কর্মচারী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান প্রভৃতি।

    প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর আজকের দিনে চট্টগ্রাম প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় থেকে বিআইটি, চট্টগ্রাম এবং পরবর্তীতে সায়ত্ত্বশাসিত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর যাত্রা শুরু হয়।

    বিএম/আরএসপ্রিন্স..