কিশোরগঞ্জের ৬ আসনই মহাজোটের ঘরে! নৌকায় ৫ লাঙ্গলে ১

জাতীয় মেইল : কিশোরগঞ্জ জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে একটিতে মহাজোটের জাপাসহ সব ক’টিতে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোটের প্রার্থীরা। রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে রাতে এই ফল পাওয়া যায়।

কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর-হোসেনপুর) আসনে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে টানা পঞ্চম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন অসুস্থ হয়ে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর এই দুই উপজেলার ১৬৬ টি ভোট কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে তিনি ১ লাখ ৮৮ হাজার ৩৭ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (নৌকা) প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪৭০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী রেজাউল করিম খান চুন্নু ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৭১ হাজার ৪৩৩ ভোট। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৩০ হাজার ১শ ৯৩ জন।

কিশোরগঞ্জের রাজনীতির প্রবাদপুরুষ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। স্বাধীনতার আগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বিশ্বাসভাজন ও ঘনিষ্ঠজন। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম সুদৃঢ় সাহসিকতায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। তার অবর্তমানে কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে তার জ্যেষ্ঠপুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত পরপর চারবার সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সেই সরকারে তিনি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় বিজয়ী হলে তিনি সে দুটি সরকারেও এলজিআরডি মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।

সৈয়দ আশরাফ অধিকতর লাইমলাইটে আসেন ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। রাজনীতির কঠিনতম ওই সময়ে দলের ঐক্য ধরে রাখার জন্য প্রয়াত জিল্লুর রহমানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি যে বিচক্ষণতার পরিচয় দেন, পরবর্তী সময়ে সেই বিচক্ষণতাই তাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন করে। সৈয়দ আশরাফ অসুস্থ হয়ে বর্তমানে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন।

কিশোরগঞ্জের জনমনে বদ্ধমূল ধারণা, পরিচ্ছন্ন ইমেজের সৈয়দ আশরাফ যতদিন জীবিত থাকবেন, ততদিন ওই নির্বাচনী আসনটি তার জন্যই নির্ধারিত থাকবে।

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে মহাজোট প্রার্থী সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। কেন্দ্র থেকে বেসরকারি ফলাফলে তিনি ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৭ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। রোববার (৩০ ডিসেম্বর) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে রাতে এই ফল পাওয়া যায়। কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া দুই উপজেলার ১৬৫টি ভোট কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে মহাজোট প্রার্থী নূর মোহাম্মদ পেয়েছেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৫১ হাজার ৩২৩ ভোট।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু লাঙ্গল প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। কেন্দ্র থেকে পাওয়া বেসরকারি ফলাফলে তিনি ২ লাখ ৭ হাজার ৮৩০ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। করিমগঞ্জ-তাড়াইল এই দুই উপজেলার ১৩৫টি ভোট কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে মহাজোট প্রার্থী মুজিবুল হক চুন্নু পেয়েছেন ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জেএসডি’র ড. মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৩১ হাজার ৭৮৬ ভোট।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। কেন্দ্র থেকে পাওয়া বেসরকারি ফলাফলে তিনি ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮২ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে রাতে এই ফল পাওয়া যায়। ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম এই তিন উপজেলার ১৩৪টি ভোট কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক পেয়েছেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫১৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৩৬ ভোট।
কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইন) আসনে তিনি ৭ বারের জনপ্রিয় এমপি ছিলেন। রাজনীতির চরম দুঃসময়েও আদর্শচ্যুত হননি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হন তিনি। একই সংসদের স্পিকার হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর স্পিকার হন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে বিরোধীদলীয় সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৮ সালের সংসদে তিনি পুনরায় স্পিকারের দায়িত্ব পান। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যু হলে মো. আবদুল হামিদ প্রথমে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ বছর তিনি আবারও দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ায় তার নির্বাচনী আসনটি শূন্য ঘোষিত হয়। শূন্য আসনে দলীয় মনোনয়ন পান তার জ্যেষ্ঠপুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। এই আসনে প্রথমে উপ-নির্বাচনে এবং পরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৌফিক বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। পিতার রাজনীতির উত্তরাধিকারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে তৌফিকই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয় লাভ করেন।
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলহাজ্ব মো. আফজাল হোসেন নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। কেন্দ্র থেকে পাওয়া বেসরকারি ফলাফলে তিনি ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭২৬ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে রাতে এই ফল পাওয়া যায়। বাজিতপুর ও নিকলী এই দুই উপজেলার ৯৮টি ভোট কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলহাজ্ব মো. আফজাল হোসেন পেয়েছেন ২ লাখ ২ হাজার ৮৭৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ১৫০ ভোট। রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে রাতে এই ফল পাওয়া যায়।
কিশোরগঞ্জ-৬ (কুলিয়ারচর-ভৈরব) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. নাজমুল হাসান পাপন নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। কেন্দ্র থেকে পাওয়া বেসরকারি ফলাফলে তিনি ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৪৯ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। নাজমুল হাসান পাপন (নৌকা) ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৯৩৩ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. শরীফুল আলম (ধানের শীষ) পেয়েছেন ২৮ হাজার ৮৪ ভোট। এ আসনে মোট ভোট ৩৩২৬৫১। কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের ৬ বারের এমপি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র নাজমুল হাসান পাপন এই আসনে পর পর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।