কপাল খুলেছে ৯০ হাজার চাষির

    ইসলাম মাহমুদ,কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারে সবজি চাষে কপাল খুলেছে ৯০ হাজার চাষির। সবজির দাম থাকায় এবং উৎপাদন উপযোগি আবহাওয়ার কারণে চলতি মওসুমে শীতকালিন শাক সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ৯ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় দেড় লাখ টন শাক সবজি উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

    এ বছর টন প্রতি সবজির দাম পেয়েছে ২০ হাজার টাকার কাছাকাছি। ফলে উৎপাদিত শীতকালিন শাক সবজির আর্থিক মূল্য প্রায় ১শ’ ৮০ কোটি টাকা। তবে এর পরিমান আরো বেশি হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কৃষি কর্মকর্তাদের নিবিড় পরিচর্যা, উচ্চফলনশীল জাত নির্বাচন, আগাম সবজির দাম ভালো থাকা, যথাযত সার ও বীজ বাছাইয়ের কারনে সবজির এ বাম্পার ফলন বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আকম শাহারিয়ার।

    তিনি জানান, জেলার ৭০ শতাংশ সবজির চাষ হয়েছে চকরিয়া, রামু, কক্সবাজার সদরে। অবশিষ্ট উপজেলায় ৩০ শতাংশ সবজি উৎপাদন হয়েছে। শীতকালিন সবজির দাম মওসুমের শুরু থেকেই চড়া হওয়ার কারনে চাষিরা লাভবান হতে পেরেছে বলে দাবি এ কর্মকর্তার। বর্তমান দাম পুরো মওসুম জুড়ে থাকলে আগামি বছর ধানের চেয়ে সবজি চাষের দিকে চাষিরা মনোযোগি হবেন বলে মনে করেন তিনি।

    জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি গত বছর অক্টোবর মাসের শুরুতে কক্সবাজারে ৩৪ প্রজাতির শাক সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নামে চাষিরা। সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৯০ হাজার চাষি সবজি চাষে জড়িত। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে আগামি মার্চ পর্যন্ত শীতকালিন সবজির মওসুম। এ বছর জমিতে আগাম ধান কর্তন হওয়ায় সবজি চাষিরা বাজারে সবজির দামের আশায় আগেভাগে সবজি চাষে নামে। এ বছর শীতকালিন সবজি চাষ হয়েছে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে। দাম পাওয়া সবজিসমুহ হল মুলা, মরিচ,ফুলকপি, বাধাঁকপি , মিষ্টি কুমড়া, লাল শাক, মুলা শাক।

    জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরসুত্রে জানা যায়, গতবছর শীতকালিন সবজি চাষ হয় ৮ হাজার ৪শ ৯২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১ লাখ ১১ হাজার ১৪২ মে.টন সবজি। চলতি মওসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয় ৯ হাজার হেক্টরে প্রায় দেড় লাখ মে.টন সবজি। আগামি মার্চে যেহেতু মওসুম শেষ হবে , সে পর্যন্ত চাষিরা অতিরিক্ত লাভবান হতে পারবেন যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়। হেক্টর প্রতি ১০ জন করে প্রায় ৯০ হাজার চাষি শীতকালিন সবজি চাষে মাঠে রয়েছে।

    চলতি মওসুমে যেসব সবজি চাষ হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, আখ, সরিষা, চীনাবাদাম, মসুর, মাসকলাই, ফেলন, অড়হর, পেয়াঁজ, রসুন, ধনিয়া, মরিচ, তরমুজ, খিরা, বাঙ্গী, মুলা, লাল শাক, পালং শাক, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সীম, লাউ, বরবটি, ঢ়েড়স, গাজর, মিস্টিকুমড়া, করলা, ফ্রন্সবিন, বাটিশাকসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফসল।

    বীজের পর্যাপ্ত সরবরাহ, সারের বাজার উন্মুক্ত তথা সহজপ্রাপ্তির কারনে এবার শীতকালিন ফসলের ফলন বাম্পার হয়েছে বলে জানান সদরের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হোসেন। বাজারে বীজ প্রাপ্তি সহজ, উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে চাষিদের নানা বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের কারনে গত বছরের চেয়ে এ বছর উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি কৃষি কর্মকর্তাদের।

    ঝিলংজা চান্দের পাড়ার ফুলকপি চাষি আবদুল হক জানান, গত বছর ১ একর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছিলাম খুব ভাল ফলন হওয়ায় লক্ষাধিক টাকা বাঁচিয়েছিলাম এ বছর আরো দাম থাকায় মার্চের শেষ হতে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তার মত প্রায় উক্ত গ্রামে ১০/১২ জন ফুল ও বাধাকপি চাষ করেছেন বলে জানান।

    উল্লেখ্য শীতকালিন ৩৪ প্রকার ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাভজনক হয়েছে মুলা, বেগুন, টমেটো, বাধাঁকপি, ফুলকপি, ঢ়েড়স, মিস্টিকুমড়া, আলু, তরমুজ, মরিচ চাষ করে। মার্চের শেষ নাগাদ ২শ কোটি টাকার মত সবজি উৎপাদন হবে বলে মনে করেন জেলা কৃষি অফিস।

    বিএম/ইসলাম/রাজীব…