প্রতারণা : বিদেশী উন্নতমানের জিনিস, কিনে নেন পানির ধরে

    সনজয় সেন.পটিয়া প্রতিনিধি : ভারতের উন্নতমানের ডাব সাবান, ডাব শেম্পু, দুধ পাউডার, বাংলাদেশের নামিদামি কোম্পানীর পণ্য ফেরি করে বিক্রি করছে মিয়ানমারের বাসিন্দা বর্তমান রোহিঙ্গা শরণার্থী কুলসুমা বেগম (২৮)।

    পটিয়ার মুন্সেফবাজার এলাকায় ফুটপাতে বসে হাক মারছেন-‘ বিদেশী উন্নতমানের জিনিস, কিনে নেন পানির ধরে।’ আর পথচারিরা হুমড়ি খেয়ে অল্প টাকায় কিনে নিচ্ছেন পণ্যগুলো। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে ব্যবহার করতে বুঝতে পারছেন এসব পণ্য নকল। অনেকেই ব্যবহার করে বিভিন্ন অজানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে।

    অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজারে মিয়ানমার শরণার্থীদের জন্য আনা পণ্য সামগ্রী দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, বোয়ালখালী ও আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে। একটি মধ্য স্বার্থভোগী চক্র শরণার্থীদের কাছ থেকে ত্রাণের পণ্যগুলো কিনে নিয়ে ওই পণ্যগুলোর সাথে দেশীয় ও বিদেশী নামিদামি কোম্পানীর নামে নকল পণ্য মিশিয়ে বিক্রি করছে। এতে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের কারণে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে সীমান্ত উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফে। এই দুই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১২টির বেশি অস্থায়ী শরণার্থী শিবির গড়ে তুলে রোহিঙ্গারা। এসব ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আশ্রিত এসব রোহিঙ্গাদের দেয়া হচ্ছে চাল, ডাল, সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বেশি ত্রাণ পাওয়ায় তারা তা বিক্রি করে দিচ্ছে। আর এ সুযোগটি কাজে লাগায় স্থানীয় কতিপয় অসাধু ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট। খোলা বাজারে ত্রাণ বিক্রি হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনও উদ্যোগ।

    পটিয়া কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র মো: দিদার বলেন গত সপ্তাহে আমাদের কলেজের দক্ষিণ পাশের এক ব্যবসায়ী রোহিঙ্গাদের ত্রানের পণ্য বিক্রী করতে দেখে আমি একটি ইউনিলিভার কোম্পানির সানসিল্ক শাম্পু ক্রয় করি পরে তা ব্যবহার করতে গেলে দেখা যায় অনেক গুলো শ্যাম্পু মাথায় দেওয়ার পরও কোনরকম ফেনা তৈরী হচ্ছে না। পরে এর দুই দিন পর ঐ ব্যবসায়ীর কাছে বলতে গেলে তিনি বলেন তিনি এগুলো পাইকারী ধরে অন্য এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিছু মুনাফায় কিনে আনে এখানে বিক্রী করছেন।

    প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মুন্নি আখতার অভিযোগ করে বলেন আমি গত পনের দিন আগে আমাদের বাসার সামনে থেকে ভ্যান গাড়ী থেকে বিক্রী করতে আসা রোহিঙ্গা শরানার্থীদের পণ্য ভেবে একটি স্কয়ার কোম্পানির মেরিল সাবান কিনি। পরে এই সাবানটি পরের দিন ব্যবহার করতে গেলে দেখা যায় অনেকক্ষন গায়ে ঘষতে লাগলে মাটির মত হয়ে যাচ্ছে। কোন রকম সাবানের সুগন্ধি নেই।

    কথা হয় একজন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির পটিয়া মার্কেটিং ম্যানেজার টিুট দাশের সাথে তিনি বলেন আমি এক সপ্তাহ পূর্বে এই রোহিঙ্গা শরানার্থী ত্রানের পণ্য থেকে একটি ডাব শ্যাম্পু ২৮০ টাকা মুল্য লেখা পরে দর করে এই শ্যাম্পুটি ১৬০ টাকা দামে ক্রয় করি যা উৎপাদন তারিখ এবং মেয়াদ উর্ত্তীণ তারিখ দেখে ক্রয় করি পরে বাসায় গিয়ে ঐ শ্যাম্পু স্বাভাবিক সময়ে ব্যবহার করা শ্যাম্পুর মত নয় এর এক সপ্তাহ পরে আমার মাথা থেকে চুল পড়া শুরু হয়। পরে তিনি একজন চর্ম রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করে চুল পড়া বন্ধ করেন এবং চিকিৎসক বলেন ঐ শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে হঠাৎ তার মাথা থেকে চুল পড়তে ছিল।

    পটিয়া সবুর রোডের ব্যবসায়ী প্রসাধনীর মালিক মো: আলি বলেন চট্টগ্রাম শহরে কিছু সংঘবদ্ধ চক্র অলি গলিতে নামি দামী কোম্পানির পণ্য নকল তৈরী করে মানুষকে ঠকাতে রোহিঙ্গা শরানার্থী পণ্যার সাথে মিশিয়ে ক্রেতাদের ঠকিয়ে তা পটিয়ার পৌরসদর সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রী করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারন ভুক্তভোগী জনসাধারণ। এখন প্রসাশনকে নকল পণ্য আবিস্কারক সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী।

    পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: ওয়াহিদ হাসান বলেন এই নকল পণ্য ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে কক্ট্রাক ডারমাটাইটিস,এনজিওইডিমা,আর্টিকেরিয়া,মাথা থেকে চুল পড়া, স্ক্রীন পুড়ে যাওয়া, মুখে কালো দাগ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশান সহ বিভিন্ন চর্ম রোগের পাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। তাই এইসব নকল পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন তিনি।

    বিএম/এস এস/ রাজীব…