আনন্দ ভ্রমনের আড়ালে পাচার হয় ইয়াবা! ১২ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার, আটক ৬

    চট্টগ্রাম মেইল : যশোরের পীরগাছা থেকে নিউ ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাসে করে ৪০ যাত্রী পিকনিক করতে আসেন টেকনাফ। আনন্দ ভ্রমনের মূল আয়োজক ছিলেন বাসটির স্বর্ত্তাধীকারি আতিয়ার রহমান। জনপ্রতি মাত্র দেড় হাজার টাকায় গত মঙ্গলবার থেকে তিনদিন কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন ভ্রমনের সুযোগ করে দেন তিনি।

    অপারে ভ্রমনপিপাসুরা খুশি হলেও কয়েকজনের মধ্যে কৌতুহলও কম ছিল না। তাদের মনে প্রশ্ন ছিলো তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি যে টাকাটা ধরা হয়েছে তা শুধু যাতায়াত খরচেই চলে যাবে। তাহলে তিনদিন ধরে এতো খরচ সে করবে কিভাবে? তার লাভ স্বর্ত্তটাই বা কি?

    যাক এরপরেও খুশি ছিলেন যশোর থেকে টেকনাফ ভ্রমনে আসা সাইদুল নামে এক ভ্রমন পিপাসু। তিনি নাকি পিকনিক আয়োজককে তার মনের কৌতুহল থেকে প্রশ্নও করেছিলেন। কম খরচে ব্যয় বহুল আয়োজন কিভাবে সম্ভব?

    তখন জবাবে ক্লাসিক পরিবহনের বাসটির মালিক আতিয়ার রহমান বলেছিলেন সে নতুন বাস কিনেছে তাই খুশিতে সবাইকে কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন ট্যুরে নিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া ভ্রমনে যাওয়া বাসটির সকল যাত্রীই কম বেশি একে অপরের পরিচিত ও স্বজন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

    মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিনদিনের আনন্দ ভ্রমন শেষে যশোরের উদ্দ্যেশে ফেরার সময় শনিবার সকালে র‌্যাবের একটি টিম ভ্রমন পিপাসুদের মনে জমে থাকা কৌতুহলের জট খুলে দেন। তল্লাশী চালিয়ে বাসটি থেকে উদ্ধার করে প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্যের ২ লক্ষ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা। সন্দেহভাজন ৬ জন ইয়াবা কারবারিকে আটক করা হয় বাসটি থেকে।

    শনিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর ওপর থেকে তাদের আটক করার পর বাসে থাকা অন্যন্য ভ্রমন পিপাসু যাত্রীদের কাছ থেকে উপরোক্ত তথ্যগুলো জানা যায়।

    পরে সকাল ৮টার কিছু পরে ঘটনাস্থলেই সংবাদ সম্মেলন করে সত্যতা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তুলে ধরেন র‌্যাবের সহপরিচালক স্কোয়াডন লিডার শাফায়েত জামিল ফাহিম। তিনি বলেন, আতিয়ার রহমান বাসটির মালিক এবং তার উদ্যোগে আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। মূলত পিকনিকের আড়ালে ইয়াবা কারবারের লক্ষ্যে এ বাসটি ক্রয় এবং স্বল্প খরচে পিকনিকের আয়োজন করে আতিয়ার।

    তার উদ্দ্যেশ্য ছিলো ভ্রমনকারীরা কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে সুবিধাজনক স্পট থেকে ইয়াবার প্যাকেট সংগ্রহ করে যাত্রীদের ব্যাগের সঙ্গে কৌশলে ইয়াবাগুলো সে যশোর নিয়ে যাবে।

    তার লক্ষ্যমতো আতিয়ার তার ক্রয়কৃত বাসে ৪০ যাত্রী নিয়ে গত মঙ্গলবার যশোরের পীরগাছা থেকে টেকনাফ পিকনিকে পাঠায়। আতিয়ার যশোর থেকে বিমানে করে কক্সবাজারে যায় এবং তার বাসে ভ্রমন পিপাসুদের সাথে যুক্ত হয়। বাসের আরোহিরা সেন্টমার্টিন হয়ে কক্সবাজার আসার পথে যাত্রীর কাপড়ের ব্যাগের সঙ্গে কৌশলে ১০ হাজার ইয়াবার ২৪টি প্যাকেট গাড়িতে তুলে নেয়।

    প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হওয়া র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানিয়েছে, তাদের সোর্সের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে শনিবার ভোরে নগরীর কর্ণফুলী থানার শাহ আমানত সেতুর ওপরে চেক পোস্ট ওই বাসটিকে থামানো হয়। এরপর সেখানে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্যমান দুই লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

    এ বিষয়ে বাসে থাকা ৪০ জনের মধ্যে ইয়াবা বহনের বিষয়টি সবাই অবগত নয়। গাড়ির মালিক আতিয়ারসহ ৬ জনকে ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহ হলে তাদেরকে আটক করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

    র‌্যাব ৭ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মিমতানুর রহমান জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে বাসের ভেতরে মালপত্র রাখার জায়গায় কৌশলে ইয়াবাগুলো রেখে চট্টগ্রাম-ঢাকা হয়ে যশোরে পাচার করার জন্য রাখা ছিলো। গোপন তথ্যের খবরে চট্টগ্রামেই সেগুলো ধরা পড়ে যায়।

    তিনি বলেন এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৬ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন পরিবহনটির মালিক ও ভ্রমনের মূল আয়োজক মো. আতিয়ার রহমান (৫৫), বাসটির চালক মো. জুয়েল (৩৯), চালকের সহকারি মো. আমিনুর রহমান সুমন (২৩), বাস মালিক আতিয়ারের সহযোগী বন্ধু মো. মাসুদ রানা (৩১), মো. ইকবাল হোসেন ৩৭) ও মো. বাবলু (৪৭)।

    তারা সকলে যশোর, রাজশাহী ও সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা জানিয়ে মিডিয়া অফিসার এএসপি মো. মাশকুর রহমান জানান, ২০১৯ সালে আটক ও উদ্ধার ইয়াবার মধ্যে এটিই ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালান। তিনি বলেন, অভিনব পন্থায় ইয়াবা পাচারের এ ঘটনায় আটককৃত ৬ জনের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেছে র‌্যাব।

    বিএম/ রাজীব সেন প্রিন্স