বরাদ্দের এক চতুর্থাংশও রোহিঙ্গাদের পেছনে খরচ করা হয় না : মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী

    বিএম ডেস্ক : অনেক এনজিও রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করছে। কিন্তু দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত এনজিওগুলো দেড়শ কোটি টাকার হোটেল ভাড়া দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ১৩ মার্চ বুধবার দুপুরে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

    রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করা বিদেশি সংস্থাগুলো বিগত ছয় মাসে হোটেল বিল দিয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। তবে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দের ২৫ শতাংশের বেশি ব্যয় করেনি এই সংস্থাগুলো।

    বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অনেক এনজিও রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করছে। কিন্তু দেখা গেছে যে, এখন পর্যন্ত এনজিওগুলো দেড়শ কোটি টাকার হোটেল ভাড়া দিয়েছে। আসলে তারা বিদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য টাকা এনে কাজ করে। কিন্তু দেখা যায় তাদের (রোহিঙ্গা) জন্য এর ২৫ শতাংশও খরচ হয় না। ৭৫ শতাংশ-ই খরচ হয়ে যায় যারা এগুলো তদারকি করে তাদের পেছনে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। এ বিষয়ে মন্ত্রিসভা কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’

    বৈঠকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর (বেসরকারি সংস্থা) কার্যক্রম কঠোর পর্যবেক্ষণ ও নজরদারির মধ্যে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, অনেক এনজিও ইল-মোটিভ (খারাপ উদ্দেশ্য) নিয়ে কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়িটি খতিয়ে দেখতে কঠোর নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

    মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা যেন মিয়ানমার থেকে আর না আসতে পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। ভাসানচর এলাকাটি বসবাসের উপযুক্ত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কোথায় রাখা হবে, সেটা বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের বিষয়। বিদেশিরা তাদের মানবিক দিকগুলো দেখবে। আমাদের বিষয়ে নাক গলানোর তাদের দরকার নেই।’

    তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাষাণচরে স্থানান্তরের জন্য সব প্রক্রিয়া এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যে কোনো সময় তাদের সেখানে স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু হতে পারে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, তাদের (রোহিঙ্গা) কোথায় রাখা হবে সেটা বাংলাদেশের ব্যাপার, বিদেশের কোনো বিষয় নয়।

    মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো।’

    তিনি বলেন, বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছে। এটা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য কাজ করা হবে। আর সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের উপর কঠোরভাবে দৃষ্টি রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনী কড়া নজরদারি রাখবেন।

    মন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে কাজ করেছে এবং নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে সহায়তা করেছে সে বিষয়ে আমরা তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছি। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে একটি দিক থেকে আমরা খুবই সফল হয়েছি। সেটা হলো বাইরে থেকে মাদক আনা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফলতার সঙ্গে আটক করতে পারছে।

    তিনি বলেন, আমরা এবার গুরুত্ব দিচ্ছি দুটি বিষয়ে। একটি হলো- যারা মাদক ব্যবহারকারী তাদেরকে আরও বেশি আইডেন্টিফাই করে গ্রেফতার করা। আরেকটি হলো- মাদক নিরাময় কেন্দ্র আমাদের দেশে খুবই অপ্রতুল। এসব নিরাময় কেন্দ্র সরকারি ও বেসরকারিভাবে কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।

    যারা মাদকে আসক্ত ছিল তাদের নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে কীভাবে ভালো করা যায় সে বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি, বলেন তিনি।

    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন গঠিত সরকারের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠক হলো। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনসহ কমিটির সদস্যরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

    বিএম/রনী/রাজীব