রাত পোহালেই ১০৭ উপজেলায় নির্বাচন

    বিএম ডেস্ক : পাঁচ ধাপে নির্বাচন সম্পন্ন করতে তফসিল ঘোষিত চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের ভোট কাল রোববার। এর আগে প্রথম ধাপে গত ১০ মার্চ, দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ এবং তৃতীয় ধাপের ভোট সম্পন্ন হয় গত ২৪ মার্চ। পঞ্চম ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে আসন্ন ইদুল ফিতরের পর। এ ধাপে (চতুর্থ) রাত পোহালেই ভোট। এর সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

    এ হিসেবে বলা যায়, উপজেলা নির্বাচনের নির্বাচনী উৎসব আপাতত ৩১ মার্চ সম্পন্ন হচ্ছে। নির্বাচনে নানা সহিংসতা, পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ, স্থানীয় সাংসদদের আচরণবিধি ভেঙে নির্বাচনে মাঠে থাকা নিয়ে নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে কমিশনকে। নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া ধাপগুলোর মতো এ ধাপেও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে। খুলনা-৬ আসনের এমপি আকতারুজ্জামান বাবুকে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে এলাকা ছাড়া করতে হয়েছে ইসিকে। এভাবেই প্রতিটি ধাপে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে কঠিন বেগ পেতে হয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাকে। এ ধাপের ভোট শেষ হলে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে ইসিতে; নির্বাচনের নানা অভিযোগ নিয়ে তাদের ব্যস্ত থাকতে হবে না।

    ইসির জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, চতুর্থ ধাপে ১২২ উপজেলায় ভোটগ্রহণের তফসিল দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এগুলোর মধ্যে খুলনার ডুমুরিয়া, ফেনীর ছাগলনাইয়া, ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও কুমিল্লার বড়ুরার নির্বাচন আদালতের আদেশে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া এই ধাপে যুক্ত হয়েছে তৃতীয় ধাপের পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও নোয়াখালীর কবিরহাটের নির্বাচন। এছাড়া ১৫ উপজেলার সকল পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই চতুর্থ ধাপে ভোটগ্রহণ হচ্ছে ১০৭টি উপজেলায়।

    ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী। ফলে পুলিশ প্রশাসন অনেকটা বিপাকে পড়ে যায়, সব সরকারদলীয় প্রার্থী হওয়ার কারণে তারা কার পক্ষে কাজ করবে। তবে, নানাভাবে কিছু প্রার্থীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় পুলিশ, বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণে কয়েকজন পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা ও ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আবার নগ্নভাবে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরার অভিযোগে কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শফিকুল ইসলাম এবং কটিয়াদী থানার ওসি মোহাম্মদ শামসুদ্দিনকে বরখাস্ত করেছে ইসি। এ ছাড়া ওই উপজেলার ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।

    এদিকে, এই ধাপের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে কঠোর অবস্থানে ইসি। নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এ ক্ষেত্রে ইসির সিদ্ধান্ত জিরো টলারেন্স। এরই মধ্যে ইসি তাদের কথামতো অ্যাকশন নিতে শুরু করেছে।

    এগুলোর মধ্যে পিরোজপুরের এসপি সালাম কবির, মঠবাড়িয়ার ওসি এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম ও বরগুনার আমতলীর ওসি আলাউদ্দিন মিলন এবং অব্যাহতি দেওয়া ওসির মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়ার মো. শাহজাহান কবির ও ভোলার তজুমদ্দিনের ফারুখ আহমদ।

    এদিকে, গতকাল শুক্রবার সকালে প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচারণা শেষ হয়েছে। মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনস্তরের নিরাপত্তায় পুলিশ-আনসার সদস্যদের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি ও গ্রাম পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি দিতে মাঠে রয়েছে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হবে। তৃতীয় ধাপের পর এ ধাপেও সদর কয়েকটি উপজেলায় ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে; যার প্রশিক্ষণসহ কারিগরি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এ ছাড়া আজ শনিবার সন্ধ্যার আগে স্ব-স্ব রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা পুলিশ পাহারায় নির্বাচনের সামগ্রী নিজ নিজ কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। সেই অর্থে বলা যায়, ইসির এ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।

    নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। ভোটের সব প্রস্তুতি শেষ। নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার কিংবা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মধ্যে কারো বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ নির্বাচনে তাদের অনিয়মের দায় আমরা নিতে রাজি নই।

    ইসি কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষিত ৪৫৯ উপজেলায় ৫৮২০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রথম ধাপে ৮৬ উপজেলায় ১০৮৮ জন প্রার্থী হন; যার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৮৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৪৮৭ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৩১৫ জন। দ্বিতীয় ধাপে ১২৪ উপজেলায় প্রার্থী হন ১৬২৬ জন, যার মধ্যে তিন পদে যথাক্রমে ৪৮৩ জন, ৬৭৬ জন ও ৪৬৭ জন। তৃতীয় ধাপের ১২৭ উপজেলায় তিনটি পদে ১৬৬৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪৭৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৬ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৬১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

    এর আগে ২০০৯ সালে ২২ জানুয়ারি এক দিনেই দেশের সব উপজেলায় ভোট হয়। তাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ১২ জন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে পাঁচ ধাপে ভোট হয়। এর মধ্যে দুই ধাপে আওয়ামী লীগ-বিএনপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়; শেষে ব্যবধান বাড়িয়ে বেশির ভাগ উপজেলায় জয় পায় আওয়ামী লীগ। এবার দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে উপজেলায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলা বিএনপি উপজেলার ভোটে অংশ নিচ্ছে না।

    বিএম/রনী/রাজীব