জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

    ????????????????????????????????????

    চট্টগ্রাম মেইল :

    চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে শতকোটি টাকা খরচ করা হবে। কিন্তু যদি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাহলে এর আশানুরূপ সুফল পাবে না নগরবাসী। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজন ৫০ থেকে ১০০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। অন্যথায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে, কিন্তু এর সুফল জনগণ পাবে না। একই সঙ্গে জরুরি হলো সব সেবা সংস্থার কার্যকর সমন্বয়।’ তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, বন্দর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকর সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই।

     

    শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা : আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন।

     

    বাপা চট্টগ্রামের সভাপতি প্রফেসর মু. সিকান্দার খানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এবিএম আবু নোমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আলী আশরাফ। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম, চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ্, সিডিএ’র প্রধান পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান, প্রকৌশলী দেলওয়ার হোসেন, স্থপতি জেরিনা ইসলাম, নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া, পরিবেশবিদ প্রফেসর ইদ্রিস আলী, সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসেন, জাবেদ নজরুল ইসলাম, এস এম জাফর।

    বাপা চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রফেসর মু. সিকান্দার খান

    মূল প্রবন্ধে মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান মেগা প্রকল্পের অধীনে নগরের ৫৭টি খালের পূর্ববর্তী অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছি। পর্যবেক্ষণের সময় আমরা ১৫টি খাল থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করি। তাছাড়া পর্যবেক্ষণে দেখা যায় নদীর হেলথ বলতে যা বুঝায় অনেক ক্ষেত্রে তা নেই। নগরের আজব পাহাড় নামের খালে আবর্জনার কারণে নামার কোনো সুযোগই পায়নি। ফলে এ খাল থেকে পানির কোনো নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। অভিন্ন অবস্থা নগরের হিজরা খাল, বির্জা খাল ও মির্জা খালের। পক্ষান্তরে নগরের চাক্তাই খাল, রাজা খাল, নোয়া খাল, ডোম খাল ও খন্দখিয়া খালের পানি অধিক পরিমাণে দুষিত।

     

    তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিক, চউক, ওয়াসা, বন্দর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকর সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই। ওয়াসার যেমন পয়বর্জ্য নিস্কাশন ব্যবস্থাপনা নেই, তেমনি সিটি কর্পোরেশনের পর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে এখনো পর্যন্ত ৩০ শতাংশ বর্জ্য নালা ও ড্রেনে ফেলা হয়। একই সঙ্গে জরুরি হলো নগরে ভূমি ব্যবহারের নীতিমালা থাকা। কারণ পরিকল্পিত নগরায়নে কোথায় সড়ক হবে, কোথায় ভবন হবে, কোথায় ড্রেন-নালা হবে- এসব নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি।

     

    সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর মু. সিকান্দার খান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। কেবল প্রকল্প গ্রহণ করলে হবে না, সেগুলোর সফল বাস্তবায়নও করতে হবে।

     

    পরিকল্পনাবিদ আলী আশরাফ বলেন, ‘১৯৯৫ সালে প্রণীত মহাপরিকল্পনায় নগরের খালের সংখ্যা ছিল ৫৭টি। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে নগরে খাল আছে ৩৬টি। বাকি খালগুলো কোথায় গেল? তাছাড়া চাক্তাই রাজাখালী এলাকায়ও অনেক খাল হাওয়া হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে ১৯৯৫ সালে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় হতো ৮৮ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমান সময় হিসাবে কত টাকা ব্যয় হবে তা সবাই বুঝছেন। প্রশ্ন উঠে তখন কেন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হয়নি।’

     

    তিনি বলেন, ‘সিডিএ বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গত এক বছর আগে তারা কাজ শুরু করেছে। কিন্তু এই এক বছরে কাজের অগ্রগতি কতটুকু তার কোনো হালনাগাদ তথ্য আমাদের জানা নেই। আমরা বলব, তারা যেন হালনাগাদ তথ্যটুকু জনসম্মুখে প্রকাশ করুক।’

     

    প্রকৌশলী দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘১৮৯৬ সালেও এই নগরে জলাবদ্ধতা ছিল। হয়তো তখন এর মাত্রা কম ছিল। কিন্তু গত ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে এটির মাত্রা অনেক বেড়েছে। সন্দেহ নেই ক্রমশ: অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে জলাবদ্ধতা বেড়েছে। অথচ এই নগরের অন্যান্য সব সমস্যা থেকে জলাবদ্ধতা ইস্যু নিয়েই বেশি আলোচনা-সমালোচনা ও ভাবনা হয়েছে। কিন্তু এর থেকে যে ফলাফল আসার কথা তা আসেনি।’

     

    চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘কর্ণফুলী বাঁচলে বন্দর বাঁচবে, বন্দর বাঁচলে দেশ বাঁচবে। সুতারাং এই চট্টগ্রাম বাঁচলেই দেশ বাঁচবে। তাই দেশ বাঁচাতে হলে চট্টগ্রাম বাঁচাতে হবে। কিন্তু চট্টগ্রামকে বাঁচাতে সব সময়ই এখান থেকে প্রতিনিয়ত আওয়াজ তুলতে হবে। বলতে বলতে একদিন তা বাস্তবায়ন হবে। সুতারাং হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

     

    বাপার সাধারণ সম্পাদক এবিএম আবু নোমান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নগরের অন্যতম প্রধান নাগরিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি নিরসনে প্রধান্য দিতে হবে। না হয় আমাদের এই বাণিজ্যিক নগরে বিদেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা আসতে উৎসাহী হবেন না।’

     

    মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক প্রফেসর চৌধুরী মনজুরুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল সরওয়ার, সুজন চট্টগ্রামের পরিচালক সৈয়দ সেলিম, সংগঠক সিদ্দিকুল ইসলাম, বাপা চট্টগ্রামের যুগ্ম সম্পাদক মো. বখতেয়ার প্রমুখ।

     

    বিএম/রাজীব সেন…