ভুমিদস্যুদের হুমকিতে প্রাণভয়ে এখনো বাড়ি ছাড়া নিরঞ্জন পরিবার : মন্দিরে জ্বলছেনা প্রদীপ

    ভূমিদস্যুদের অত্যাচারে বাড়ি ছাড়লেন নিরঞ্জন

    চট্টগ্রাম মেইল : ভুমিদস্যুদের অব্যাহত হুমকিতে প্রাণের ভয়ে নিজ বসত ভিটেতে ফিরতে পারছেনা শতবর্ষী বৃদ্ধ শিক্ষক নিরঞ্জন চক্রবর্তীর পরিবার। অনেকদিন ধরে প্রদীপ জ্বলছে না ৪৩ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে। বন্ধ রয়েছে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরের সকল প্রকার পূজা অর্চনা।

    নিজ বসত ভিটে থাকতে যাযাবরের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হচ্ছে পুরো পরিবারকে। অনাহারে-অর্ধাহারে মৃত্যুশয্যায় থাকা বাবার চোখের দুকোণে অশ্রু ঝড়িয়ে নিঃশ্বাস ফেলে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা রয়েছে বহাল তবিয়তে।

    কান্নাজড়িত কন্ঠে ঠিক এভাবেই মনের কষ্টের কথাগুলো সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রকাশ করলেন আনোয়ারার সেই শতবর্ষী বৃদ্ধ শিক্ষক নিরঞ্জন চক্রবত্তীর ছেলে শিক্ষক প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তী।

    বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় মো. ফারুক নামের এক ব্যক্তিকে আমমোক্তারনামা মুলে গত ২০১৬ সালে ভিটে বাড়ি থেকে দুরের একটি পুকুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়।

    তার মৃত্যুর পর ফারুকের ওয়ারিশগন রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব নিতে চাইলে আমাদের পরিবার তা বাতিলের জন্য আনোয়ারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আবেদন করে। কিছুদিন পর গত ১০ এপ্রিল ভূমিদস্যুরা বাড়ি ভিটে ছেড়ে দিতে বাড়ির উঠোনে এসে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়।

    এমনকি বৃদ্ধ শতবর্ষী পিতার টিপ সই এবং মিথ্যা সাক্ষী সৃষ্টি করে জোর পুর্বক আমার স্বাক্ষর নেন। তাছাড়া বোনকেও শ্লীলতা হানি করে অভিযোগ করেন আনোয়ারার জয়কালী হাট সরস্বতী মন্দির সড়ক সংলগ্ন পণ্ডিত বাড়ির বাসিন্দা শিক্ষক প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তী।

    সংবাদ সম্মলনে তিনি বলেন, কামরুল ইসলাম হেলাল প্রকাশ মধু হেলাল, আনোয়ার হোসেন, মো. মানিক, আবদুর রহিম, মো. আলী প্রকাশ মহিদুল্লাহ, মধু হেলালের ছেলে মো. আনোয়ারুল ইসলামসহ সংঘবদ্ধ ভুমিদস্যু চক্রটি তাদের ৪৩ বছরের পুরনো কালি মন্দিরে তালা লাগিয়ে দেন।

    তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শত বছরের বৃদ্ধ পণ্ডিত নিরঞ্জন চক্রবর্তী শেষ জীবন এসে সন্ত্রাসীদের হাতে অপমানিত হয়ে ছাড়তে হয় নিজ বসতভিটাও।

    পরে তার ছাত্র ছাত্রীরা এবং এলাকাবাসীরা বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পরামর্শে ১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) আনোয়ারা থানায় উপরোক্ত সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়।

    মামলার পর থেকে তারা আরো বেপোরোয়া হয়ে পড়লে পরিবারের সকল সদস্যই নিজ বসত ভিটে ত্যাগ করে যাযাবরের মত রাস্তায় রাস্তায় অবস্থান নিয়েছি।

    এদিকে অর্থ ও প্রভাবশালীদের দাপটে মামলার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও বহাল তবিয়তেই সন্ত্রাসীরা এলাকায় অবস্থান নিয়ে নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন শিক্ষক প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তী।

    তিনি বলেন, ভুমিমন্ত্রীর আদেশের পরও এখন পর্যন্ত কোন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ, তাদের খুটির জোড় কোথায় তা শুধু ভগবানই জানেন।

    প্রণব রঞ্জন বলেন, ‘মৃত্যু পথযাত্রী শিক্ষকের সাড়ে ৮ গন্ডা বাড়ি-ভিটে দুর্বৃত্তদের কবল থেকে উদ্ধার করতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে ধন্যবাদ জানান।

    এদিকে শিক্ষকের পরিবারকে ভিটে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এখনো কেউ গ্রেফতার করা না হলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বললেন আনোয়ারা থানার ওসি দুলাল মাহমুদ

    সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রণব রঞ্জন চক্রবর্তীর বোন রত্না চক্রবর্তী, কন্যা কান্তা চক্রবর্তী ও পাপিয়া চক্রবর্তী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ-চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, ঐক্য পরিষদ মহানগর এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিতাই প্রসাদ ঘোষসহ আরো অনেকে।

    বিএম /রাজীব সেন প্রিন্স

    আরো খবর : ভূমিদস্যুর অত্যাচারে ভিটে ছাড়লেন শতবর্ষী নিরঞ্জন পন্ডিত